ভুবনমোহন পার্কের সংস্কার শেষ হয়নি তিন বছরেও

সংস্কারের নামে রাজশাহীর সব আন্দোলন-সংগ্রামের সূতিকাগার ভুবনমোহন পার্ককে অচল করে রাখা হয়েছে। তিন বছর ধরে চললেও এই সংস্কারকাজ আর শেষ হচ্ছে না। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে রয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে জানা গেছে, তিন বছর আগে পার্কটির সংস্কারকাজ শুরু করা হয়। এখনো এর মূল কাজ মেঝে পাকা করার বিষয়টি শুরুই করা হয়নি। তিন বছরে ধীরে ধীরে সংস্কারকাজ করা হলেও তিন মাস ধরে সেই সংস্কারও বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পার্কে গতকাল সোমবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, মাঝখানে কাদাপানি জমে আছে। গোটা পার্কেই শেওলা ধরে গেছে। পার্কের যে নতুন টয়লেট করা হয়েছে, তার শুধু ঘরই করা হয়েছে। ভেতরে প্যান ও অন্য কোনো কিছু লাগানো হয়নি। সিটি করপোরেশন একাংশে সাইকেল গ্যারেজের জন্য ইজারা দিয়েছে।
স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, রাজশাহীতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সব সভা-সমাবেশের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ভুবনমোহন পার্ক। এখানে ভাষাশহীদদের স্মরণে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। সঙ্গেই রয়েছে একটি মঞ্চ।
কবি ও গবেষক তসিকুল ইসলাম রাজা বলেন, উপমহাদেশের বিখ্যাত নেতারা এসেছেন এই পার্কে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাজশাহী কলেজে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণের সিদ্ধান্তও হয় এই পার্কে বসে। এরপর ১৯৫৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এই পার্কে জননেতা এম আতাউর রহমান শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। একাত্তরের ২৫ মার্চের রাতে স্বাধীনতার চেতনায় প্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান। এখানে সকল প্রকার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হবে, বইমেলা হবে, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম হবে। দ্রুত পার্কটির সংস্কারকাজ শেষ করা উচিত।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, পার্কটি সংস্কারের জন্য ৫০ লাখ টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর মধ্যে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। বাথরুম ও শিল্পীদের জন্য ডার্করুম নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দ না থাকার কারণে মূল কাজ মেঝে পাকা করা সম্ভব হচ্ছে না। টাকা পাওয়া যাবে না—এই আশঙ্কায় ঠিকাদারও কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। এ কারণে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।