'গুম করে রাজনীতি স্বাধীন দেশে চলে না'

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুম, খুনের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে মানববন্ধন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট l ছবি: প্রথম আলো
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গুম, খুনের প্রতিবাদে গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে মানববন্ধন করে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট l ছবি: প্রথম আলো

‘ছেলেকে যদি না দেন, কোথায় পুঁতে রেখেছেন, চিনিয়ে দেন। তাহলে অন্তত কবর বলে সেখানে জিয়ারত করব।’
ছাত্রদলের নিখোঁজ নেতা নিজামউদ্দিনের (মুন্না) বাবা শামসুদ্দিন ছেলের সন্ধান চেয়ে সরকারের কাছে এই আকুতি জানান।
আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শামসুদ্দিন এ আকুতি জানান। রাজধানীর বিজয়নগর থেকে ফকিরেরপুল সড়কে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এ মানববন্ধন হয়।
শামসুদ্দিন বলেন, ‘২০১৩ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে র্যা ব সদস্যরা একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে মুন্নাকে আমার সামনে থেকে তুলে নেয়। কেন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলা হয়, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, আপনি থানায় আসেন। এরপর আমি র্যা ব, ডিবি অফিস, থানায় গেছি। কিন্তু তাঁরা বলেছেন, কিছুই জানেন না।’
মানববন্ধনে এসেছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস (অর্ণব)। সে বলে, ‘২৮ মাস হলো বাবার কোনো খোঁজ পাইনি। সরকার অনেক সময় দিয়েছিল, সব সময় পার হয়ে গেছে। গুম করে রাজনীতি করা একটি স্বাধীন দেশে চলে না। আমরা বাবাকে ফিরে পেতে চাই।’ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাজধানীর বনানী এলাকা থেকে গুম হন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী।
আপনজন গুম হওয়ার বর্ণনা দেন বিএনপির নেতা সাজেদুল ইসলামের বোন মারুফা ইসলাম, ছাত্রদলের নেতা জহিরুল ইসলামের মা হোসনে আরা বেগম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আদনানের বোন ফারহানা সুলতানা, সোহেলের বাবা শামসুর রহমান, পল্লবীর তারিকুল ইসলামের বাবা নুরুল ইসলাম, বংশালের পারভেজ হোসেনের বাবা সফর উদ্দিনসহ আরও অনেকে। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁরা।
মানববন্ধনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নীরবে গুম-খুন দেখার আর সময় নেই। এই অন্যায়, অত্যাচার, অপহরণ ও গুম-খুনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি অভিযোগ করেন, ঢাকায় বিএনপির ২৪ জন গুম-খুন হয়েছেন। এ ছাড়া জামায়াত-শিবিরসহ অন্যান্য দলের অনেকে গুম হয়েছেন। বিরোধী দল ও মতকে স্তব্ধ করার জন্য সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে দিয়ে অত্যাচার-নিপীড়নের পথ বেছে নিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, আরও নাকি তালিকা হচ্ছে। আরও হত্যা, গুম, খুন হবে।’ এর বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের সাবধানতার পাশাপাশি প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
মানববন্ধনে জোটের নেতাদের মধ্যে আরও অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য তাসনীম আলম, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী, জাতীয় পার্টির (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান প্রমুখ।