প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, কাজ হয়েছে অর্ধেক

নকশার ত্রুটির কারণে ভেঙে ফেলা হয় খুলনার নির্মাণাধীন লিনিয়ার পার্কের শিশুদের ঘূর্ণমান দোলনা l প্রথম আলো
নকশার ত্রুটির কারণে ভেঙে ফেলা হয় খুলনার নির্মাণাধীন লিনিয়ার পার্কের শিশুদের ঘূর্ণমান দোলনা l প্রথম আলো

খুলনার ময়ূর নদের পাড়ে লিনিয়ার পার্কের নির্মাণকাজ প্রায় ছয় বছরে অর্ধেক শেষ হয়েছে। এখনো অধিকাংশ কাজ বাকি। তার পরও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাহী প্রকৌশলী-২ ও প্রকল্প পরিচালক মো. লিয়াকত আলী খান শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে দাবি করে গত ৮ জুলাই মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।
কেসিসি থেকে জানা গেছে, ৮ জুলাই বিদায়ী অর্থবছরের প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কেসিসি। প্রতিবেদনে লিনিয়ার পার্ক অংশে চলতি অর্থবছরের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মো. লিয়াকত আলী খান স্বাক্ষরিত লিনিয়ার পার্কের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রিভার বেড, ক্লিনিং ও ভূমি উন্নয়নকাজ ১৭ হাজার ৭২৩ ঘনমিটারের মধ্যে শতভাগ শেষ হয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণও শেষ হয়েছে। চিলড্রেন জোনের কাজও সম্পন্ন। অন্যান্য প্যাকেজগুলোর কাজও শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
কেসিসি থেকে জানা যায়, ময়ূর নদের তীরে একটি পার্ক নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০০৯ সালে। এর জন্য অধিগ্রহণ করা হয় ১৪ একর জমি। ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের আওতায় মাটি ভরাট, নদীর পাড়ে ও ভেতরে হাঁটার রাস্তা, পাঁচটি দোকানঘর, নদীর তীরে দুটি আরসিসি ঘাট, একটি অবজারভেশন টাওয়ার, ওভার ক্যানেল পাথওয়ে, শিশুদের খেলার জন্য ১৯ ধরনের রাইড এবং মোট ৪৩টি আমব্রেলা শেড, পিকনিক শেড, বেঞ্চ, রেস্তোরাঁ, বাউন্ডারি ও ডেকোরেটিভ ওয়াল নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১২ সালের ৩০ জুন। পরবর্তীকালে দুই দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। শেষবারে বর্ধিত সময় শেষ হয়েছে চলতি বছরের ৩০ জুন।
তবে সোমবার সরেজমিনে পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, ওই প্রতিবেদনে সঙ্গে মিল পাওয়া যায়নি বাস্তব কাজের। অনেক কাজ এখনো শুরুই হয়নি। মাটি ভরাটের কাজ ধীরগতিতে চলছে। নকশার ত্রুটির কারণে ঘূর্ণমান দোলনা বসিয়ে আবার ভেঙে নতুনভাবে করা হচ্ছে। এখনো বসানো হয়নি শিশুদের খেলাধুলার রাইডগুলো। পার্কের ভেতরের ওয়াকওয়ে মাটি ভরাট, অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ এবং চিলড্রেন জোনের কাজ এখনো বাকি। শুরু হয়নি আরসিসি ঘাট, প্লান্টেশন ও বিউটিফিকেশনের কাজ। দুটি পিকনিক কর্নার করা হলেও এখনো তা ব্যবহারের অনুপযোগী।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অভিযোগ, শুরুতেই পার্কের নির্মাণকাজে ধীরগতির অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে মাটি ভরাটের ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল প্রায় এক বছর। সম্প্রতি মাটি ভরাটকাজ আবার শুরু হয়েছে। শেষ হয়েছে বাউন্ডারি ওয়াল, অবজারভেশন টাওয়ার, অফিস, সিকিউরিটি ও সাইকেল শেড, পিকনিক কর্নার নির্মাণকাজ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেসিসির এক প্রকৌশলী বলেন, প্রায় ছয় বছরে কাজ হয়েছে মাত্র অর্ধেক। এভাবে কাজ করা হলে আরও তিন বছর সময় লাগবে।
গল্লামারী এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, ‘পার্কের মধ্যে গেলে মনে হয় এখনো এখানে বসতবাড়ি রয়েছে। পার্কের কাজ চলছে তা মনেই হয় না। এ জীবনে এর কাজ শেষ হবে কি না, জানি না।’
খুলনা নাগরিক ফোরামের চেয়ারপারসন শেখ আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পার্কের কাজ হচ্ছে। এটি শেষ হলে শহরের মানুষ কিছু বিনোদনে সুযোগ পেত। দ্রুত এটির কাজ শেষ করা হোক।’
মো. লিয়াকত আলী খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাজ প্রায় শেষ আর কিছুদিনের মধ্যে এটি ব্যবহারের উপযোগী হয়ে যাবে।’ কাজ শেষ না করে প্রতিবেদন দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘এটি একটা নিয়ম, তা না হলে টাকা ফেরত যেত।’