চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন ইমারত

বকশিরহাটে অবস্থিত সুলতানি আমলের বদর আউলিয়ার মাজার। মাজারের পেছনের প্রবেশপথের ধ্বংসাবশেষ (ডানে ওপরে), ইবাদতখানা (নিচে)  সৌরভ দাশ
বকশিরহাটে অবস্থিত সুলতানি আমলের বদর আউলিয়ার মাজার। মাজারের পেছনের প্রবেশপথের ধ্বংসাবশেষ (ডানে ওপরে), ইবাদতখানা (নিচে) সৌরভ দাশ

সিমেন্টে বাঁধানো প্রশস্ত আঙিনা পার হলে বর্গাকৃতি দালান। ওপরে সবুজ রং করা বড় গম্বুজ ও মিনার। অনুপম স্থাপত্যে গড়া বদর আউলিয়ার মাজার চট্টগ্রামের সবচেয়ে প্রাচীন ইমারত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে ঐতিহাসিকদের কাছে। চট্টগ্রামের পুরাকীর্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন ইটারনাল চিটাগাং বইয়ের লেখক শামসুল হোসেন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এটি যে সবচেয়ে পুরোনো ভবন তাতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। মাজারটি অন্তত ৭০০ বছরের পুরোনো। মাজারের স্থাপত্যশৈলী দেখে বোঝা যায় এটি পুরোপুরি সুলতানি আমলের। ১৩৩৮ সালে সুলতান ফখরুদ্দীন মোবারক শাহের বাংলা বিজয়ের পর অনেক সুফি সাধক এখানে এসেছিলেন। বদর আউলিয়ার আগমনও এ সময়ে ঘটেছে।’
মাজারে ঢুকতেই ইবাদতখানা। তার মাঝামাঝি আরও একটি চতুষ্কোণ কক্ষে বদর আউলিয়ার রওজা (কবর) শরিফ। মাজারের খাদেম শফিকুল ইসলাম কাচের শোকেসে ঢাকা পাথরের খণ্ড দেখিয়ে বলেন, বদর আউলিয়া এই পাথরের কিস্তি চড়ে (নৌকা) চট্টগ্রাম এসেছিলেন। মূল রওজা ঘরটি বদর আউলিয়ার সময়কালে নির্মিত হয়েছে। রওজা কক্ষে সুদৃশ্য গিলাফে ঢাকা বদর আউলিয়ার সমাধি। এই কক্ষের ওপরেই আছে গম্বুজ। কক্ষের চার কোণে যুক্ত করা হয়েছে খিলান। প্রত্যেক খিলানের তলায় আড়াআড়ি আছে দুটি করে কুলুঙ্গি। খিলান চারটির মাথা পরস্পর যুক্ত হয়ে অষ্টভুজ আকার ধারণ করে গড়ে তুলেছে গোলাকার গম্বুজ।
৬০০ থেকে ৭০০ বছর আগে মাজারটি ছিল কর্ণফুলী নদীর একেবারে তীর ঘেঁষে। নদীর মুখোমুখি ও তার বিপরীত দিকে দুটো গেট ছিল একসময়। রাস্তার মুখোমুখি গেটটি না থাকলেও পেছনেরটির ধ্বংসাবশেষ এখনো রয়ে গেছে। মাজারের মোতোয়ালি সৈয়দ আবুল হাশেমের কাছ থেকে জানা গেল, প্রাচীন সমাধি সৌধটি ছিল একটিমাত্র কক্ষ নিয়ে। এখন তার চারপাশ ঘিরে প্রশস্ত ইবাদতখানা তৈরি হয়েছে। বদর আউলিয়ার রীতি মেনে এখনো এখানে প্রতিরাতে ১২টি চেরাগ জ্বালানো হয়।
ইতিহাস ঘেটে দেখা গেছে, মোগল ঐতিহাসিক শিহাব-উদ-দিন তালিশের (আনুমানিক ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দ) বিবরণে বদর আউলিয়ার মাজারের উল্লেখ আছে। পারস্যের প্রাক-মুসলিম সভ্যতার স্থাপত্যরীতি অনুসরণে নির্মিত এই মাজারের ভেতরে পাওয়া গেছে নসক শৈলীতে লেখা প্রাচীন আরবি শিলালিপি। দুষ্পাঠ্য এই শিলালিপি বদর পীরের সমাধিফলক বলে মনে করেন ইতিহাসবিদেরা।
মোতোয়ালি সৈয়দ আবুল হাশেম জানালেন, এই মাজার নিয়ে গবেষণা করতে বিভিন্ন দেশের ইতিহাসবিদেরা আসেন। আসেন সুফি সাধক, হিন্দু-মুসিলমসহ সব ধর্মের নারী-পুরুষ। তিনি জানান, একসময় বাণিজ্য করতে সমুদ্রযাত্রায় বের হওয়ার আগে সওদাগরেরা এসে দোয়া নিতেন। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার প্রচুর ভক্তকুলের আগমন ঘটে মাজারে।
নগরের মিয়াখান নগরের স্বপ্না বিশ্বাস মা সন্ধ্যা বিশ্বাসকে নিয়ে এসেছিলেন মাজারে। কেন এসেছেন জানতে চাইলে স্বপ্না বিশ্বাস বলেন, ‘মায়ের অনেক অসুখ। বাবাজির কাছে এসেছি দোয়া চাইতে। বাবাজি কাউকে তো খালি হাতে ফেরান না।’