খুদে বিজ্ঞানীর খোঁজে...

বিসিএসআইআর গবেষণাগার আয়োজিত বিজ্ঞানমেলায় জলবিদ্যুৎ​ প্রকল্প প্রদর্শন করে চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা l প্রথম আলো
বিসিএসআইআর গবেষণাগার আয়োজিত বিজ্ঞানমেলায় জলবিদ্যুৎ​ প্রকল্প প্রদর্শন করে চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা l প্রথম আলো

রাতে দরজা-জানালা বন্ধ করে গেলেন ঘুমাতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ ছানাবড়া, জানালা কাটা। রাতের কোনো একসময় চোর ঢুকেছে। নিয়ে গেছে দামি জিনিসপত্র। বিষয়টা কারও কাছেই সুখকর হবে না। এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় বলে দিচ্ছে নগরের সেন্ট প্লাসিড্স উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইখতিখারুল হক চৌধুরী ও মো. রায়হান চৌধুরী।
কিন্তু কীভাবে? প্রযুক্তির সহায়তায় তাঁরা তৈরি করেছেন এমন একটি যন্ত্র, যেটি চোর এলেই গৃহকর্তাকে সতর্ক করবে অ্যালার্ম বাজিয়ে। এ পদ্ধতিতে ঘরের দরজা ও জানালায় লাগানো থাকবে সেন্সর। সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে একটি অ্যালার্ম। রাতে কেউ দরজা-জানালা কাটার চেষ্টা করলে সেন্সরে চাপ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেজে উঠবে অ্যালার্ম। রক্ষা পাওয়া যাবে চুরি থেকেও।
‘অ্যামেজিং সায়েন্স’ শিরোনামে ইখতিখারুল ও রায়হানের উপস্থাপন করা বিজ্ঞান প্রকল্পে চোর ধরার যন্ত্র ছাড়াও স্থান পেয়েছিল ‘ভূমিকম্প আসার আগেই সতর্কীকরণ বার্তা’ও ‘ড্রাই সেল ব্যাটারি চার্জার যন্ত্র’।
২২ থেকে ২৪ জানুয়ারি নগরের বালুচরার বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) গবেষণাগার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বিজ্ঞান, শিল্প ও প্রযুক্তি মেলায় এই প্রকল্প উপস্থাপন করা হয়। এ মেলায় শুধু ‘অ্যামেজিং সায়েন্স’ প্রকল্প নয়, নিজেদের তৈরি আরও অনেক প্রকল্প নিয়ে হাজির হন বিভিন্ন বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। তরুণদের বিজ্ঞানমনস্ক করার লক্ষ্যে অষ্টমবারের মতো এ মেলার আয়োজন করে বিসিএসআইআর গবেষণাগার, চট্টগ্রাম। তিন দিনব্যাপী এ মেলায় ১৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০৮টি প্রকল্প প্রদর্শন করা হয়।
মেলায় প্রদর্শিত ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবরার ফায়াদ ও অমিত দত্তের ‘সেভ দ্য এনভারয়নমেন্ট’ প্রকল্পটিও সবার দৃষ্টি কাড়ে। এতে সাগরের পানি থেকে কার্বন শোষণের প্রক্রিয়া উপস্থাপন করা হয়। মেলার বিভিন্ন স্টলে উঠে আসে দেশের সমসাময়িক কিছু সমস্যার সমাধানের উপায়। বাজারের বিষাক্ত ফরমালিন প্রতিরোধে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে পেঁপের বীজ ও খোসা, ইথানল, রসুনের খোসা, ভিনেগার, গোলমরিচ ও ফুড গ্রেড প্রিজারভেটিভ দিয়ে তৈরি খাদ্য সংরক্ষণের জন্য প্রিজারভেটিভ প্রকল্প উপস্থাপন করা হয় মেলায়। এ ছাড়া পাইপ থেকে মানুষ উদ্ধার, নদী থেকে তেল সংগ্রহ, মোবাইল সিকিউরিটি রোবট, সাগরে ভাসমান নগর, উন্নত ও নিরাপদ শহর, উড়ন্ত বাড়ি, পলি হাউজ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সৌর গাড়ি, লেবু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি প্রকল্পও দর্শনার্থীদের মধ্যে সাড়া জাগায়। মেলায় অংশ নেওয়া কাজেম আলী বিদ্যালয় ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বীর সঙ্গে কথা হয় মেলার দ্বিতীয় দিনে। ‘ভবিষ্যতে বিজ্ঞানী হওয়ার ইচ্ছে আছে কি না?’এমন প্রশ্ন করতেই রাব্বীর উত্তর, ‘বিজ্ঞানী হতে পারব কি না সেটা জানি না। তবে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।’ মেলার সমাপনী দিনে ছিল পুরস্কার বিতরণীর আয়োজন। প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন বিসিএসআইআর গবেষণাগার চট্টগ্রামের পরিচালক খন্দকার নেছার আহমেদ। বিচারকদের মূল্যায়নে ‘ক’ গ্রুপে ‘পানির অপচয় রোধের সহজ উপায়’ প্রকল্পের জন্য ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিথিলা মজুমদার ও অন্তিকা চক্রবর্তী প্রথম হয়। দ্বিতীয় হয় রেডিয়েন্ট স্কুল ও কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনীম তাবাসসুম ও তাসবিহর ‘ডিকম্পোজিং প্লাস্টিক ইন সয়েল ইন অনলি থ্রি মান্থ’ প্রকল্পটি। সেন্ট প্লাসিডস উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির তারিক আমীন ও সালাউদ্দিন সাকিবের ‘প্রথম শ্রেণির বহুমুখী বৈদ্যুতিক যন্ত্র’ প্রকল্পটি তৃতীয় স্থান লাভ করে। ‘খ’ গ্রুপে সেন্ট প্লাসিড্স উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘অ্যামেজিং সায়েন্স’ প্রথম, বিসিএসআইআর ল্যাবরেটরি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘হাইব্রিড স্টোভ’ দ্বিতীয় এবং ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘মোবাইল ফোনে বৈদ্যুতিক যন্ত্র বন্ধ ও খোলা’ প্রকল্পটি তৃতীয় হয়। ‘গ’ গ্রুপে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘সেভ দ্য এনভারয়নমেন্ট’ প্রথম, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘কার্বনেশন মেথড’ দ্বিতীয় এবং সাউথ এশিয়ান কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ‘প্রিজারভেটিভ ককটাইল’ প্রকল্পটি তৃতীয় হয়। বিজ্ঞান প্রকল্পে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল ও কলেজ প্রথম, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ দ্বিতীয় এবং রেডিয়েন্ট স্কুল ও কলেজ জিতে নেয় তৃতীয় পুরস্কার।