ইন্দোনেশিয়ায় আরও উদ্ধার ২০০ জন

ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে দুটি নৌকা থেকে ৭৪৭ জন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানকে উদ্ধারের পর এই উপকূলে আরেকটি নৌকা থেকে ২০০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তা ছাড়া থাইল্যান্ডের এক দ্বীপে সন্ধান পাওয়া গেছে আরও শতাধিক অভিবাসনপ্রত্যাশীর।
এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া উপকূল থেকে অন্তত ৩০০০ অভিবাসন প্রত্যাশী উদ্ধার হলেন। এই অঞ্চলের আন্দামান সাগরে ক্ষুধা-তৃষ্ণা ও অসুস্থতায় মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে এখনো ভেসে বেড়াচ্ছেন সাত-আট হাজার বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা।
এদিকে আন্তর্জাতিক আহ্বান উপেক্ষা করে গতকাল অভিবাসন প্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে তা সাগরে ঠেলে পাঠিয়েছে থাই নৌবাহিনী। খবর বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও গার্ডিয়ানের।
গত শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের লাগসা এলাকা থেকে নৌবাহিনীর সহযোগিতায় ৭৪৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জেলেরা উদ্ধার করার পর এদিনই প্রদেশটির উপকূল থেকে আরও ২০০ আশ্রয়প্রার্থীকে উদ্ধার করে নৌবাহিনী। মেজর জেনারেল ফুয়াদ বাসায়া এবিসিকে বলেন, শুক্রবার সকালে জেলেরা ওই অভিবাসন প্রত্যাশীদের উপকূলে দেখতে পান। পরে নৌবাহিনীর জাহাজ পাঠিয়ে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
এদিকে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলীয় ফাং এনগা প্রদেশের গভর্নর প্রায়ুন রাত্তানাসিন জানান, শুক্রবার এ প্রদেশের উপকূলীয় একটি দ্বীপে ১০৬ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাঁরা কীভাবে এখানে এলেন, তা পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, এই ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তাঁরা পাচারের শিকার কি না, তা যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে।
এ ছাড়া গতকাল অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী একটি নৌকা উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে তা সাগরে ঠেলে পাঠিয়েছে থাই নৌবাহিনী। নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ভিরাপং নাকপ্রাসিত জানান, শুক্রবার প্রথমে ইন্দোনেশিয়া ও পরে মালয়েশিয়া অভিমুখে যাওয়ার পর একটি নৌকা থাই উপকূলে এলে সেটিকে ফেরত পাঠানো হয়।
গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শুক্রবার মালাক্কা প্রণালির থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সীমানা পেরিয়ে দুটি নৌকা ইন্দোনেশিয়া উপকূলে ভিড়লে দেশটির কর্তৃপক্ষ সেগুলো ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। এদিন থাইল্যান্ডও একটি নৌকা ফিরিয়ে দেয়।
থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়া দাবি করছে, এই নৌকাগুলোর গন্তব্য মালয়েশিয়া, তাদের ভূখণ্ড নয়। তাই খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় রসদ দিয়ে সেগুলো ফেরত পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থাসহ (আইওএম) নানা মহল এমন আচরণের নিন্দা জানিয়ে কয়েক মাস ধরে সাগরে ভাসতে থাকা এসব অসহায় অভিবাসনপ্রত্যাশীকে আশ্রয়ের জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আইওএম বলছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো এই লোকদের জীবন নিয়ে খেলা করছে।
মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান: অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমারের প্রতি গতকাল অনুরোধ জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। সাগরে ভাসমান অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে যে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে দেশটির সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি।
নাজিব রাজাকের উদ্ধৃতি দিয়ে মালয়েশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামা বলেছে, ‘মিয়ানমার সরকারের সাড়া পেতে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছি। আমাদের আশা, এ অভ্যন্তরীণ সমস্যায় তারা ইতিবাচক সাড়া দেবে। আমরা এ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারি না। কিন্তু সমস্যা আরও জটিল হওয়ার আগে আমরা কিছু করতে চাই।’
আলোচনায় অনীহা মিয়ানমারের: ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর এখনই অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যার সম্মুখীন দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলো। আর এর সমাধানে মিয়ানমারের সহযোগিতাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এ সংকট সমাধানে আলোচনা করতে মিয়ানমার ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছে থাইল্যান্ড। ২৯ মে ব্যাংককে এ বিষয়ে ১৫ দেশের এক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে মিয়ানমার বলেছে, তারা এমন কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। আর রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিষয়ে কোনো আলোচনায় তাদের আগ্রহ নেই।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের কার্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘থাইল্যান্ডের কাছ থেকে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আমরা পাইনি। আরেকটা বিষয় হলো, তারা যদি রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করে, তবে আমরা আলোচনায় যাব না। আমরা রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিই না।’
চাপ বাড়াল যুক্তরাষ্ট্র: আন্দামান সাগরে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিতে বন্দর খুলে দেওয়ার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর প্রতি চাপ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর অংশ হিসেবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি শুক্রবার রাতে থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। এ ফোনালাপের ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেফ রাথকে গতকাল বলেন, ‘নতুন কোনো অভিবাসনপ্রত্যাশী নৌকা সাগরে ঠেলে না পাঠাতে আমরা এই অঞ্চলের সরকারগুলোর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’
মুখপাত্র বলেন, ‘সর্বাগ্রে অভিবাসীদের জীবন রক্ষায় দেশগুলোকে দ্রুত একত্রে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি আমরা।’ এ বক্তব্যের আগেও যুক্তরাষ্ট্র সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপ নিতে দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল।
ওদিকে শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এই অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গভীর উদ্বেগের কথা জানানো হয়। চলমান সংকট নিরসনে আলোচনায় মিয়ানমারের যোগ না দেওয়ার ঘোষণায় হতাশ কি না, ব্রিফিংয়ে এমন প্রশ্নের জবাবে রাথকে বলেন, ‘এ ঘোষণার বিষয়ে আমি অবগত নই।’ তবে ২৯ মের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র একজন শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধি পাঠাবে বলে জানান তিনি।