আটক ১৩৪২ বাংলাদেশি

মানব পাচারের শিকার হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে গত ১১ দিনে ১ হাজার ৩৪২ জন বাংলাদেশি আটক হয়েছেন। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় ৬৮৬ জন, ইন্দোনেশিয়ায় ৫১৮ জন ও থাইল্যান্ডে ১৩৮ জন বাংলাদেশি রয়েছেন বলে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বাইরে সাগরে ভাসছেন আরও প্রায় চার হাজার মানুষ। তবে তাঁদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি আছেন, সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর), আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এই তিন সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮ থেকে ১৯ মে পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে মোট ২ হাজার ৭৩০ জনকে উদ্ধার করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১ হাজার ৩৮৮ জন রোহিঙ্গা এবং ১ হাজার ৩৪২ জন বাংলাদেশি বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সে বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে জানান, তাঁদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে ১৯ মে পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় ৬০৩ জন বাংলাদেশি উদ্ধারের কথা জানা গেছে। মালয়েশিয়া হাইকমিশন এঁদের মধ্যে ২২ জনের সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছে। বাকিদের নাম-পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ায় ২৩৭ জন এবং থাইল্যান্ডে ১৩৮ জন বাংলাদেশি উদ্ধারের খবর রয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। তবে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমুদ্রপথে পাচারের শিকার যাদের উদ্ধার করা হচ্ছে, তাদের বেশির ভাগই রোহিঙ্গা বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সেই বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে বাংলাদেশি থাকলে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে নাম-ঠিকানা পাঠিয়ে পরিচয় নিশ্চিত করতে বলবে। যাচাই করার পর আমরা তখন বলতে পারব, কতজন বাংলাদেশি আছেন।’
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড—এই তিন দেশেই পাচারের শিকার লোকজনকে উদ্ধার এবং নানা ধরনের সহায়তা দিচ্ছে ইউএনএইচসিআর। সেই তথ্য ঢাকায়ও পাঠানো হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে ইউএনএইচসিআরের ঢাকার একজন মুখপাত্র গতকাল প্রথম আলোকে জানান, ১৯ মের তথ্য অনুযায়ী ইন্দোনেশিয়ায় ১ হাজার ৩৭৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৮৬১ জন রোহিঙ্গা ও ৫১৮ জন বাংলাদেশি। মালয়েশিয়ায় ১ হাজার ১০৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪২১ জন রোহিঙ্গা ও ৬৮৬ জন বাংলাদেশি। আর থাইল্যান্ডে উদ্ধার ব্যক্তিদের মধ্যে ১০৬ জন রোহিঙ্গা রয়েছে।
আইওএমের একজন মুখপাত্র জানান, ইউএনএইচসিআর এবং আইওএম একই সঙ্গে কাজ করছে। আইওএমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, থাইল্যান্ডের সংখলায় ২৬৩ জন এবং পাংনায় ১০৬ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। মালয়েশিয়ার লংকাবিতে উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ১০৭ জনকে। আর ইন্দোনেশিয়ার আচেহ উপকূলে উদ্ধার করা হয়েছে ১ হাজার ৩৯৬ জনকে। এদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি, সেই তথ্য জানাতে পারেননি আইওএমের মুখপাত্র। তিনি জানান, বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা উভয় দেশের নাগরিকই রয়েছে সেখানে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। এরপরেই নিশ্চিত করা যাবে।
আইওএম এবং ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সাগরে ভাসছেন ৩ হাজার ৮৫০ জন বাংলাদেশি। এঁদের মধ্যে মালয়েশিয়া উপকূলের কাছে ১ হাজার ১০০ জন, ইন্দোনেশিয়ার উপকূলের কাছাকাছি ৪০০ জন, থাইল্যান্ডের উপকূলের কাছে ৩৫০ জন এবং মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলের কাছে রয়েছেন অন্তত ২ হাজার। এ ছাড়া গত এক সপ্তায় বঙ্গোপসাগর থেকে ১৮৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি টিপু সুলতান এখন থাইল্যান্ডে। সেখানে কতজন বাংলাদেশি সম্প্রতি আটক হয়েছেন, জানতে চাইলে আইওএমের ব্যাংকক কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা তাঁকে জানান, সাম্প্রতিক কালে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের প্রথম যাচাই-বাছাইয়ের কাজ করছে থাই কর্তৃপক্ষ। এরপর দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তারা আইওএম এবং ইউএনএইচসিআরকে ডাকবে। এ কারণে এখনো তারা বাংলাদেশিদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।
তবে টিপু সুলতান জানিয়েছেন, সংখলা প্রদেশের রাত্তাফোমে এ মাসের প্রথম সপ্তাহে তিন দফায় যে ২২০ জনকে আটক করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৮০ জনই বাংলাদেশের বলে জানিয়েছেন সেখানকার ডিটেনশন ক্যাম্পের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া সর্বশেষ গত শুক্রবার পুকেটের পাংনা দ্বীপে আরও ১০৬ জনকে আটক করা হয়। তবে এঁদের কতজন বাংলাদেশি, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
থাইল্যান্ডে উদ্ধার হওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে জানতে চাইলে দেশটির বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনীম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে থাই কর্তৃপক্ষ, আইওএম কিংবা ইউএনএইচসিআর এখনো আমাদের কোনো বাংলাদেশি আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি। তবে এখানে হাজার হাজার বাংলাদেশি আছেন বলে যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সেটি ঠিক নয়। মানব পাচারের শিকার প্রমাণিত হয়েছেন এমন ৮২ জন এবং বিভিন্ন বন্দিশালায় আছেন এমন ৪১৭ জনের বিষয়ে তাদের কাছে তথ্য আছে। তবে এঁরা সবাই আগেই এসেছেন।’