জনসংখ্যা নিবন্ধন শুরুই হয়নি

জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর) তৈরির কাজ শুরু করতে পারেনি পরিসংখ্যান ব্যুরো। ২০১১ সালে আদমশুমারি ও গৃহগণনার সময় সমন্বিত পরিচিতিমূলক এই তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ করার কথা ছিল। সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৭ সালের আগে কাজ শুরু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাজটি না হওয়ায় ব্যক্তিকে বিভিন্ন সেবার সঙ্গে যুক্ত করা এবং ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে দেশ পিছিয়ে গেল। অথচ একই সময়ে উদ্যোগ নিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত কাজটি প্রায় শেষ করে ফেলেছে।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর কাগজপত্রে দেখা যায়, জনসংখ্যা নিবন্ধনে প্রতিটি নাগরিকের নাম, বাবা ও মায়ের নাম, স্বামী বা স্ত্রীর নাম, লিঙ্গ, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান, বৈবাহিক অবস্থা, শিক্ষা, জাতীয়তা, পেশা, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা থাকবে। এ ছাড়া ১৫ বছর বয়সী সব নাগরিকের ছবি, ১০ আঙুলের ছাপ রাখা হবে। দীর্ঘস্থায়ী বা জিনগত রোগের তথ্যও এতে থাকার কথা।
জনসংখ্যাবিদ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চীন ও স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে বহু আগে থেকে এ ধরনের নিবন্ধনের ব্যবস্থা আছে। আদমশুমারি ও এনপিআরের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। আদমশুমারিতে ব্যক্তির তথ্য পৃথকভাবে থাকে না, নিবন্ধনে তা পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে বিশিষ্ট জনসংখ্যাবিদ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ কে এম নূর-উন-নবী প্রথম আলোকে বলেন, এনপিআরে জনসংখ্যার সামগ্রিক তথ্য থাকে। এর থেকে জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি বোঝা যায়। তিনি বলেন, এনপিআরে বাড়তি বা কম গণনার কোনো সুযোগ নেই। কারণ প্রতিটি নাগরিকের তথ্য সুনির্দিষ্টভাবে সংগ্রহ করতে হয়।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গবেষক প্রথম আলোকে বলেন, একবার নাম নিবন্ধন হলে তা আর পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। বাল্যবিবাহের ক্ষেত্রে বয়স নিয়ে যে জটিলতা হয়, তা বন্ধ হবে জনসংখ্যা নিবন্ধন হলে। অন্যদিকে অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পুলিশের কাজে আসবে এই এনপিআর।
পরিসংখ্যান ব্যুরোর সূত্র বলছে, নাগরিককে কিছু সরকারি সেবা ও সুবিধা সহজ করতে এনপিআর কাজে আসবে। এর মধ্যে আছে জন্মনিবন্ধন, স্বাস্থ্য, ভোটার পরিচিতিপত্র, লাইসেন্স, সামাজিক নিরাপত্তা (সোশ্যাল সেফটি নেট), ঋণ, কর ও ভ্যাট, আইনি সেবা, ইমিগ্রেশন, শ্রম, পুলিশি সেবা ও শিক্ষা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাগজপত্রে বলা হয়েছিল, আদমশুমারির তথ্য সংগ্রকারীরাই জনসংখ্যা নিবন্ধনের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। এর জন্য ফরমের নমুনাও তৈরি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কাজটি আর করা হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে এটা হয়নি।
এনপিআরের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে সরকার এটিকে আইনের আওতায় এনেছে। পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩-তে বলা হয়েছে, পরিসংখ্যান ব্যুরো এনপিআর প্রণয়ন করবে এবং সময়ে সময়ে হালনাগাদ করবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক আবদুল ওয়াজেদ জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার (ন্যাশনাল হাউসহোল্ড ডেটাবেজ) প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
প্রকল্প পরিচালক এমদাদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এনপিআরের কাজ শুরু হয়নি। তবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগী চিহ্নিত করতে জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার তৈরির কাজ চলছে। এ কাজ শেষ হবে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। এই জাতীয় খানার তথ্যভান্ডার পরবর্তী সময়ে এনপিআর তৈরির ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। তিনি বলেন, তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে, তা এখন বলা সম্ভব নয়।
অধ্যাপক নূর-উন-নবী বলেন, জাতীয় খানা তথ্যভান্ডার ও এনপিআর এক জিনিসি নয়। দুটির উদ্দেশ্যও ভিন্ন। তিনি বলেন, সময় নষ্ট না করে নিবন্ধনের কাজ শুরু করতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে মনে হয়, সরকারের এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তুতি নেই।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস আজ
আজ বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জাতীয়ভাবে দিবসটি পালিত হবে। দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য: ‘নারী ও শিশু সবার আগে, বিপদে-দুর্যোগে প্রাধান্য পাবে’।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দিবসটি পালন উপলক্ষে তারা ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে আছে দেশের সব বিভাগ, জেলা ও উপজেলা সদরে আলোচনা সভা ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।