জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়েছে!

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার আবার বেড়েছে। আগে প্রতিবছরে যে হারে জনসংখ্যা বাড়ত, এখন তার চেয়ে বেশি হারে বাড়ছে। ২০১৩ সালে ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ হারে জনসংখ্যা বেড়েছে। এর আগের বছর এ হার ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে দশমিক ০১ শতাংশীয় মানে (পারসেন্টেজ পয়েন্ট) জনসংখ্যা বেড়েছে। ২০০৯ সালেও এ হার ছিল ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ ২০১৩ সালের মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের ফলাফলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হার বাড়লেও মোট প্রজনন হার কমেছে। বিবিএসের হিসাবে, ২০১৩ সালে প্রজনন হার ২ দশমিক ১১ শতাংশ। এর মানে হলো ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী প্রজননসক্ষম মা সারা জীবনে গড়ে ২ দশমিক ১১ সংখ্যায় বাচ্চা জন্ম দেন। পাঁচ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৯ সালের হিসাবে, প্রতি মা সারা জীবনে গড়ে ২ দশমিক ১৫টি বাচ্চা জন্ম দিতেন। মূলত প্রজননসক্ষম মায়ের সংখ্যা অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন সবচেয়ে বেশি, তাই প্রজনন হার কমলেও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেড়েছে।

বিবিএসের সর্বশেষ হিসাবে দেখা গেছে, বরিশাল বিভাগে মোট প্রজনন হার সবচেয়ে বেশি, গড়ে ২ দশমিক ২৮। আর গড়ে সবচেয়ে কম ১ দশমিক ৮০টি বাচ্চা জন্ম দেন খুলনা বিভাগের মায়েরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও জনসংখ্যাবিদ এ কে এম নুরুন নবী প্রথম আলোকে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বার্ষিক হারের এ বৃদ্ধিকে ‘বৃদ্ধি’ হিসেবে ধরা ঠিক হবে না। এ ধরনের জরিপে কখনো কম হতে পারে, কখনো বেশি হতে পারে। প্রজনন হার সম্পর্কে তিনি বলেন, বিবিএসের এ ধরনের জরিপে ‘ক্রুড রেট’ নেওয়া হয়। এতে বৃদ্ধ, শিশু সব ধরনের মানুষের ওপর জরিপ করা হয়। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের কাছ থেকে তথ্য নিলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে।

বিবিএসের এ জরিপের প্রকল্প পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হক বলেন, মাঠপর্যায় যে থেকে তথ্য-উপাত্ত এসেছে, তা জরিপের ফলে এসেছে। তবে প্রতিবছর শুমারি করে এসব খাতের পরিস্থিতি তুলে আনাও সম্ভব নয়।

প্রতিবছর বিবিএস ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স প্রকাশ করে থাকে। এ পরিসংখ্যানের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবনের জন্ম, মৃত্যু, আয়ুষ্কাল, বিবাহের মতো অবধারিত বিষয়ের চিত্র উঠে আসে।

গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ জরিপের ফলাফল প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা।

 পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি বাঁচেন: বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৭০ বছর ছাড়িয়ে গেছে। এ দেশের মানুষ এখন গড়ে ৭০ দশমিক ৪ বছর বাঁচে। তবে পুরুষের চেয়ে নারীরা গড়ে আড়াই বছর বেশি বাঁচেন। গড়ে নারীরা ৭১ দশমিক ২ বছর ও পুরুষেরা ৬৮ দশমিক ৮ বছর বাঁচেন।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে ৩ দশমিক ২ বছর। ২০০৯ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৭ দশমিক ২ বছর।

 বিয়ের গড় বয়স কমেছে: আগের চেয়ে কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হচ্ছে। ২০১৩ সাল নাগাদ নারীদের বিয়ের গড় বয়স আরও কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৪ বছর। ২০১২ সালে এই গড় বয়স ছিল ১৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মানে হলো, মেয়েদের তুলনামূলক আরও কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

একইভাবে পুরুষদেরও বিয়ের গড় বয়স কমেছে। ২০১৩ সালে এ গড় বয়স দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৩ বছর। এর আগের বছর পুরুষের বিয়ের গড় বয়স ছিল ২৪ দশমিক ৭ বছর। অন্যদিকে ১০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৪ শতাংশই বিবাহিত। আর নারীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই বিবাহিত। এ ছাড়া নারীদের সাড়ে আট শতাংশই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা আলাদা থাকেন।

প্রতিবন্ধীদের মধ্যে শিক্ষিতের হার বেশি: দেশের প্রতি এক হাজার মানুষের মধ্যে নয়জন কোনো না-কোনোভাবে প্রতিবন্ধী। এ প্রবণতা পুরুষের মধ্যে বেশি। প্রতি হাজারে গড়ে ৯ দশমিক ৭ জন প্রতিবন্ধী। আর নারীদের প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ২ জন প্রতিবন্ধী।

সিলেট বিভাগে প্রতিবন্ধীর হার সবচেয়ে বেশি। সিলেটের প্রতি হাজারে গড়ে ১৩ দশমিক ৪৭ জন প্রতিবন্ধী। আর ঢাকা বিভাগে এ হার সবচেয়ে কম, ৬ দশমিক ৭৫ জন। তবে উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষিতদের মধ্য প্রতি হাজারে গড়ে ১৩ দশমিক ৩ জন প্রতিবন্ধী।

 শিক্ষা: সাত বছর ও এর বেশি বয়সের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫৭ শতাংশই শিক্ষিত। তারা স্বাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন। এই বয়সী জনগোষ্ঠীর পুরুষদের মধ্যে ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ ও নারীদের ৫৫ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষিত। শহরে এই হার ৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ, আর গ্রামে ৫৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর ১৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠীর ৬১ শতাংশ শিক্ষিত। শহরে এই হার ৭৪ দশমিক ১ শতাংশ, গ্রামে ৫৭ শতাংশ।

শিশুমৃত্যু: বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার এক বছর বয়সী শিশুর মধ্যে ৩১ জনের মৃত্যু হয়। নানা ধরনের রোগ-বালাইয়ে বেশি মৃত্যু হয়। আর জীবিত জন্ম হয়, কিন্তু এক মাস বয়স হওয়ার আগেই মারা যায় এমন নবজাতকের সংখ্যা প্রতি হাজারে ২১। গ্রামে এ সংখ্যা ২৩, আর শহরে ১৬। আর একইভাবে এক থেকে এগারো মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি হাজারে ১১ জন মারা যায়। আর এক থেকে চার বছর বয়সীদের মধ্যে এই সংখ্যা হাজারে ২ দশমিক ২। পাঁচ বছরের নিচে প্রতি হাজারে ৪১ জন শিশু মারা যায়।