ভূমিসেবা পেতে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন

গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান

ভূমিসংক্রান্ত যেকোনো সেবা পেতে মানুষকে ১০০ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। সবচেয়ে বেশি ঘুষের লেনদেন হয় জমি নিবন্ধন ও নামজারিতে। আর সেবা পেতে পুরুষের তুলনায় নারীরা বেশি ঘুষ দিতে বাধ্য হন।
‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রম: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শিরোনামে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির নিজস্ব কার্যালয়ে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন সংস্থার সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার ওয়াহিদুল আলম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায় ও সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমিবিষয়ক কাজে মানুষের ভোগান্তির মূল কারণ দীর্ঘসূত্রতা। মূল দলিল তৈরি করতে ইচ্ছাকৃতভাবে এক-দেড় বছর দেরি করা হয়। নিবন্ধন ও নামজারিতে ছয়টি করে ধাপে ঘুষ দিতে হয়। এর পেছনে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় একটি চক্র কাজ করছে। এ পেশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমি উন্নয়ন কর জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেন হয়। নামজারির ক্ষেত্রে ৩ হাজার থেকে ২ লাখ, নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৫০ হাজার, খতিয়ান ও নকশার নকল তোলার ক্ষেত্রে ২০০ থেকে ১ হাজার, দলিলের নকল তোলার ক্ষেত্রে ৮০০ থেকে ২ হাজার, ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে ৫০০ থেকে ৫ হাজার, ভূমি রেকর্ড সংশোধনের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ হাজার, হাটবাজার ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ২০ লাখ এবং ভূমিসংক্রান্ত মামলা পরিচালনার বিভিন্ন ধাপে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষের লেনদেন হয়।
টিআইবি আরও বলেছে, ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মীরা জমি কম দেখানোর ভয় দেখিয়ে মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করেন। জরিপের সময় ভূমি মালিকের অনুপস্থিতিতে তাঁদের সম্পত্তি রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারি খাসজমি, অর্পিত সম্পত্তি প্রভাবশালীদের পক্ষে রেকর্ড ও নামজারি করা হয়। দলিল লেখকেরা সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে অনেক বেশি হারে ফি গ্রহণ করেন। খাসজমি বরাদ্দের সময় উপজেলা থেকে কোনো ধরনের প্রচারণা চালানো হয় না। রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালীদের পরামর্শে এসব জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
টিআইবির সুপারিশে বলা হয়েছে, ভূমি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য একক অধিদপ্তর গঠন করতে হবে। এ ছাড়া ভূমি ব্যবস্থাপনা, নিবন্ধন ও জরিপের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু, জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য দেওয়ানি আদালতে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি আইনের বিধি প্রণয়ন, মানুষকে সচেতন করার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মেলার আয়োজন করা, ভূমিহীন বিধবা ও তালাক পাওয়া নারীদের খাসজমি পাওয়ার শর্ত হিসেবে ছেলে সন্তান থাকার বাধ্যবাধকতা বাতিল করার সুপারিশ করা হয়।