এক কলেজের দুই অধ্যক্ষ!

কলেজে অধ্যক্ষের চেয়ার একটি। কিন্তু সেখানে বসতে চান দুজন। একজন উপাধ্যক্ষ আর অন্যজন বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ, যিনি উচ্চ আদালত থেকে স্বপদে পুনর্বহাল হওয়ার রায় পেয়েছেন। দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসা নিয়ে টানাহেঁচড়া চলে।
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ উদ্দিন অধ্যক্ষের চেয়ারে বসছেন। আর পুনর্বহাল হওয়া অধ্যক্ষ মোফাজ্জল পাশের একটি কক্ষে বসছেন। এ অবস্থা জামালপুরের ঝাওলা গোপালপুর ডিগ্রি কলেজের।
কলেজ সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালের ২৬ জুলাই মোফাজ্জল হোসেন ঝাওলা গোপালপুর কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। ২০০৭ সালে কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমানের সঙ্গে মোফাজ্জলের কলেজের হিসাবসংক্রান্ত বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। পরে অনিয়মের অভিযোগে প্রথমে মোফাজ্জলকে পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ২০০৭ সালের নভেম্বরে কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক তোফাজ্জল হোসাইনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে জামালপুর-৫ আসনের সাংসদ সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হন। এরপর রেজাউলের আস্থাভাজন কলেজের উপাধ্যক্ষ এ বি এম ফরহাদ উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই বছরই ফরহাদ উদ্দিন বাদী হয়ে মোফাজ্জল হোসেনের নামে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে মোফাজ্জলকে বরখাস্ত করে।
ওই বরখাস্ত আদেশ চ্যালেঞ্জ করে ২০১৩ সালে মোফাজ্জল হোসেন হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। ২০১৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ মোফাজ্জলকে পুনরায় কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করার নির্দেশ দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রেজাউল করিম এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল অনুমতির আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন। গত ৬ জুলাই আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চে শুনানি শেষে ওই লিভ টু আপিল খারিজ হয়ে যায়। ১৩ জুলাই মোফাজ্জল হোসেন পুনর্বহালের রায়সহ শতাধিক লোকজন নিয়ে কলেজে যোগদান করতে যান। এ সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ উদ্দিন ও তাঁর লোকজন অধ্যক্ষের চেয়ারে বসতে তাঁকে বাধা দেন। এ নিয়ে ওই দিন কলেজে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর থেকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কলেজে ক্লাস ও দাপ্তরিক কার্যক্রম চলাকালে পুলিশ মোতায়েন থাকে।
কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, অধ্যক্ষের চেয়ার নিয়ে টানাহেঁচড়ার কারণে শিক্ষক-কর্মচারীরা গত জুলাই মাসের বেতন-ভাতা পাননি।
মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করীমের আস্থাভাজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফারহাদ উদ্দিন। সুপ্রিম কোর্টের রায় না মেনে ফরহাদ উদ্দিনকে ওই পদে বহাল রাখা হচ্ছে। তবে কলেজের বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আমার পক্ষে থাকায় আমি অধ্যক্ষের কার্যক্রম চালাচ্ছি।’
সাংসদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মোফাজ্জল আদালত থেকে পুনর্বহালের রায় পেয়েছেন বলে শুনেছি। আমি আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদুপরি কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ডেকে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।’
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফরহাদ উদ্দিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।