চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা কমছে

কনটেইনার জট বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সৌরভ দাশ
কনটেইনার জট বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ও বহির্নোঙরে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় ধরে কনটেইনারবাহী জাহাজ আটকে থাকছে। গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে সমস্যাটি এখন প্রকট। এ ছাড়া বন্দর চত্বরেও কনটেইনারের জট বেড়েছে। শুধু তা-ই নয়, সক্ষমতা পরিমাপের বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম বন্দর।
গতকাল শুক্রবার বন্দরের ধারণক্ষমতার ৯৪ শতাংশ জায়গাজুড়ে কনটেইনারের স্তূপ ছিল। চট্টগ্রাম বন্দর পর্ষদের সাবেক সদস্য হাদী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত ধারণক্ষমতার ৭০ শতাংশের বেশি কনটেইনার পড়ে থাকলে বন্দরের পরিচালন কাজে ব্যাঘাত ঘটে। কিন্তু কনটেইনার যে হারে বেড়েছে, সে অনুযায়ী অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বাড়েনি। যন্ত্রপাতিরও সংকট রয়েছে। তিনি বলেন, নিউমুরিং টার্মিনালের (এনসিটি) নতুন জেটিও বন্দরের পরিচালন কার্যক্রমে যুক্ত হয়নি। চট্টগ্রাম-পানগাঁও নৌপথে পণ্য পরিবহন এখনো পরিপূর্ণভাবে শুরু হয়নি। এর ফলে সক্ষমতার দিক থেকে বন্দর পিছিয়ে পড়ছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে চার বছরের মধ্যে এ বছরের জুলাই মাসে প্রতিটি জাহাজের বন্দরে অবস্থান করার গড় সময় (বন্দর জলসীমায় আসার পর থেকে বন্দর ত্যাগ করা পর্যন্ত) ছিল সবচেয়ে বেশি। জুলাই মাসে প্রতিটি জাহাজ গড়ে সাড়ে পাঁচ দিন বন্দরে অবস্থান করে। এর আগে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে প্রতিটি জাহাজ গড়ে সাত দিনের বেশি বন্দরে অবস্থান করে। স্বাভাবিক সময়ে বন্দরে একটি জাহাজের গড় অবস্থান সময় তিন দিন।
বন্দর সূত্র জানায়, এ বছরের শুরু থেকে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় বাড়তে থাকে। জানুয়ারি মাসে প্রতিটি জাহাজের গড় অবস্থান সময় ছিল তিন দিন তিন ঘণ্টা। এরপর ধারাবাহিকভাবে তা বেড়ে গত জুন মাসে দাঁড়ায় চার দিন পাঁচ ঘণ্টা। জুলাই মাসে তা বেড়ে হয় সাড়ে পাঁচ দিন।
প্রতি ঘণ্টায় জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা বা উৎপাদনশীলতা, জাহাজ থেকে কনটেইনার বন্দরে নামানোর পর থেকে পণ্য খালাস হওয়া পর্যন্ত সময় বা ‘ডুয়েল টাইম’, যন্ত্রপাতির প্রাপ্যতা, জাহাজের গড় অবস্থান সময় ইত্যাদি সূচকের মাধ্যমে বন্দরের সক্ষমতা পরিমাপ করা হয়।

এ বিষয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর বন্দর ও জাহাজীকরণ-বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, কয়েক মাস ধরে বন্দরের বেশ কিছু কার্যক্রমে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। এটি রপ্তানিমুখী পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করেন তিনি।
তবে বন্দরের বর্তমান পর্ষদের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরের সক্ষমতা সে অর্থে কমেনি; বরং ১৫ শতাংশ হারে কনটেইনার পরিবহন বেড়েছে। কনটেইনার পরিবহনের এই বৃদ্ধি ধরে রাখা চ্যালেঞ্জ হতে পারে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যন্ত্রপাতি কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এনসিটির আরও দুটি জেটি চালু হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে। এ জন্য জেটি পরিচালনাকারী বেসরকারি সংস্থা, শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি মাসে কনটেইনার পরিবহনে রেকর্ড হচ্ছে। এখন সাময়িক ভারসাম্যহীনতা তৈরি হলেও সার্বক্ষণিক তদারকি হচ্ছে। পরিস্থিতিরও উন্নতি হচ্ছে।
বন্দর সূত্র জানায়, জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রেও এখন সময় বেশি লাগছে। গত জুন মাসে প্রতি ঘণ্টায় ১৩টি কনটেইনার ওঠানো-নামানো হয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫ থেকে ১৬টি। প্রতি ঘণ্টায় কনটেইনার ওঠানো-নামানোর সংখ্যা কমে যাওয়ায় জাহাজ আগের চেয়ে বেশি সময় জেটিতে অবস্থান করছে। ফলে জাহাজ কোম্পানিগুলোকে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বন্দর চত্বরে কনটেইনার অবস্থানের (ডুয়েল টাইম) সময়ও বেড়েছে। গড়ে প্রতিটি পণ্যভর্তি কনটেইনারের বন্দরে অবস্থান সময় গত জুন মাসে ছিল ১৯ দিনেরও বেশি। আর গত বছর তা ছিল গড়ে ১৫-১৬ দিন।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় বাড়লে জাহাজ পরিচালন ব্যয়ও বাড়ে। প্রতিদিন একটি জাহাজের পরিচালন ব্যয়সহ অন্যান্য খরচ গড়ে ১০ হাজার মার্কিন ডলার। ধাপে ধাপে এই বাড়তি খরচ এসে পড়ে ভোক্তার ওপর।
জাহাজ অবস্থানের সর্বোচ্চ গড় সময়

   
২০১১জানুয়ারি৩ দিন ১৫ ঘণ্টা
২০১২আগস্ট৩ দিন ১৭ ঘণ্টা
২০১৩জুন৪ দিন
২০১৪আগস্ট৪ দিন
২০১৫জুলাইসাড়ে ৫ দিন


স্বাভাবিক অবস্থায় বন্দরে গড়ে তিন দিন জাহাজ থাকে
সূত্র: চট্টগ্রাম বন্দর