বিয়ের বয়স কমানোর যুক্তি খণ্ডন করল নতুন গবেষণা

বিয়ের বয়স কমানোর একটি যুক্তি হিসেবে সরকার বলছে, কিশোরীদের মধ্যে পালিয়ে বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে। তবে নতুন এক গবেষণা বলছে, অভিভাবকের অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার প্রবণতা বাংলাদেশের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কম।

আজ বুধবার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে উপস্থাপন করা এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ৬৪টি জেলার ওপর জরিপের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার শিক্ষক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ ও ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের শিক্ষক যাকি ওয়াহহায প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। তাঁরা বলেন, সরকার বিয়ের বয়স কমানোর পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে। বলা হচ্ছে, কখনো কখনো গ্রামাঞ্চলের মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার পথে কিংবা শিল্পাঞ্চলে কাজে যাওয়ার পথে যৌন হয়রানির শিকার হয়; অপরিণত বয়সেই যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে অথবা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সরকারের যুক্তি, বিয়ে এই হুমকিগুলো থেকে মেয়েদের সুরক্ষা দিতে পারে। তাই শর্তসাপেক্ষে ১৬ বছরেও মেয়েদের বিয়ে দেওয়া যেতে পারে বলে সরকার চিন্তাভাবনা করছে।
তবে নতুন এই গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৪ জেলায় চালানো জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মাত্র তিন শতাংশ নারী বলেছেন, শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে ৭২ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁদের অভিভাবকেরা মনে করেছেন ‘সুপাত্র’ পাওয়া গেছে। সে কারণে তাঁদের বাল্যবিয়ের শিকার হতে হয়েছে।
গবেষকেরা আশঙ্কা করছেন, প্রস্তাবিত আইনে অভিভাবকদের কর্তৃক আরও বাড়বে। এতে করে বাল্য বিয়ের হারও বাড়বে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ উন্নয়নের সব খাতে।
এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ বলেন, ১৯টি জেলায় তাঁরা কিশোর-কিশোরীদের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ বলেছে, অভিভাবকদের সম্মতি না পেলে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে চায়। অন্যদিকে যারা বাল্যবিয়ে ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে, তারা পরিণত বয়সে বিয়ে করেছে। তাদের শিক্ষার হার বেশি, তারা অল্প বয়সে মা হননি এবং দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে বিরতিও বেশি।
গবেষণায় আরও যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হলো, যে মায়েরা নিজের সিদ্ধান্তে বিয়ে করেননি, তাঁরা মেয়েদের বিয়ের সময় মতামত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না।
গবেষণার ওপর আলোচনায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বিয়ের বয়স কমানোর উদ্যোগ উন্নয়নের ধারাকে ভুল পথে পরিচালিত করবে। তবে, বাল্যবিয়ের পেছনে দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতা অন্যতম কারণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
যেসব এলাকায় বাল্যবিয়ের হার কম, সেখানে কী কারণে এই হার কম তা খুঁজে বের করতে হবে। এর মাধ্যমে বাল্য বিয়ে প্রবণ এলাকার সমস্যার সমাধান করা যায় কি না তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
ব্র্যাকের উপাচার্য সৈয়দ সাদ আন্দালীব, গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের পরিচালক আবদুল বায়েস অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।