নয়ীম গহর আর নেই

মহান মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রেরণা দেওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ এবং ‘নোঙর তোলো তোলো সময় যে হলো হলো’ কালজয়ী এ দুটি গানের গীতিকবি নয়ীম গহর আর নেই। মঙ্গলবার রাত সোয়া তিনটায় তিনি রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯৩৭ সালের ১৫ আগস্ট জন্ম নেওয়া এই গুণী ব্যক্তিত্বের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কিছুদিন আগে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর স্মৃতিশক্তি লোপ পায়। নয়ীম গহরকে ২০১২ সালে দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘স্বাধীনতা পদক’ দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুর পর মেয়ে অভিনেত্রী ইলোরা গহরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করার অনুমতি মেলে। সেখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
নয়ীম গহরের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর লেখা দেশাত্মবোধক গান স্বাধীনতাপ্রেমী জনগণকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
প্রসঙ্গত, সমবেত কণ্ঠে গাওয়া তাঁর লেখা কালজয়ী গান ‘নোঙর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো’ গানটির সুরকার ছিলেন সমর দাস। আর সাবিনা ইয়াসমীনের গাওয়া তাঁর লেখা ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটির সুরকার আজাদ রহমান।
টেলিফোনে নয়ীম গহরের মৃত্যুসংবাদ শুনে বিমর্ষ হয়ে পড়েন শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। তিনি বলেন, ‘খবরটা শুনে খুব খারাপ লাগছে। কারণ, মাঝে মাঝে তাঁর সাথে টেলিফোনে কথা হতো। আমাকে বলেছিলেন, তিনি খুব অসুস্থ। বাসায় যেতেও বলেছিলেন। আমিও বলেছিলাম, একদিন যাব। কিন্তু আর সময় করে উঠতে পারিনি। এখন আফসোস হচ্ছে। তাঁর সাথে আর দেখা হলো না।’
‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ গানটি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই গানটি গাইতে গিয়েই তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। ১৯৭০ সালে এই গানটি রেকর্ড করতে আমরা করাচি যাই। এ গানের সুরকার আজাদ রহমান তাঁর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। করাচিতে গানটিতে প্রথম ফিরোজা বেগম, আমি এবং কয়েকজন কোরাস শিল্পী কণ্ঠ দিই। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আমি আমার বেশ কিছু দেশাত্মবোধক গান রিমেক করি। তখন এই গানটিতে আমি এককভাবে কণ্ঠ দিই। তখন থেকেই আমার গান হিসেবেই সেটি প্রচার পায়। আমি বলব, আমার জীবনের এটি একটি শ্রেষ্ঠ গান। এই গানটি ছাড়াও বেতারে তাঁর লেখা অনেক গানই আমি গেয়েছি।’