পাহাড়ে সম্প্রীতি পেতে হলে

অমিত চাকমা
অমিত চাকমা

আমি জন্মেছিলাম পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে সবুজে ঘেরা ছবির মতো সাজানো রাঙামাটি ও কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি উপত্যকায়। আমার জন্মের পরপরই আমাদের পাহাড়ের উঁচু ভূমিতে সরে যেতে হয়েছিল কাপ্তাইয়ের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণের ফলে উপত্যকা প্লাবিত হওয়ায়, যেটা পরে কাপ্তাই হ্রদ হয়ে গেছে। এই বাঁধের কারণে আমার অনেক স্বজন ও গ্রামবাসীকে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল। কেউ কেউ তো ভারতেও চলে গেছে। অবশ্য পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অক্ষুণ্নই থেকেছে। অতুলনীয় সেই আদি-অকৃত্রিম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে বেড়ে ওঠার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। স্বচ্ছ হ্রদের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়তাম সাঁতার কাটতে কিংবা মাছ ধরতে। পাশের বনে-জঙ্গলে চলে যেতাম বুনো ফল আর সবজি তুলে আনতে। এ যেন এক নির্বাণের জীবনযাপন। এভাবে বেড়ে ওঠার কারণে প্রকৃতির প্রতি আমার আজন্ম ভালোবাসা জন্মেছে। আমাদের প্রকৃতি বাঁচানোর ব্যাপারেও আমার মনে জন্ম নিয়েছে দৃঢ়সংকল্প। এ কারণেই তিন বছর আগে যখন রাঙামাটির পাহাড়ে বেড়াতে গেলাম, দূষিত লেক আর বৃক্ষশূন্য ন্যাড়া পাহাড় দেখে আমার মন ব্যথায় ভারাক্রান্ত হয়েছে।
এই গ্রীষ্মে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। পর্যটনশিল্প ব্যবহার করে আর্থিক সুবিধা গ্রহণের মাধ্যমে বালি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐহিত্য কীভাবে সংরক্ষণ করেছে তা দেখে আমি মুগ্ধ। বালিতে থাকার সময় আমার শৈশবের প্রিয় রাঙামাটির কথা বারবার মনে পড়ছিল। রাঙামাটির পাহাড় আর কাপ্তাই হ্রদ বালি থেকে আলাদা। কিন্তু তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অভিন্নভাবেই মুগ্ধকর। একইভাবে বালির মানুষের সাংস্কৃতিক ঐহিত্যের মতোই এখানকার পাহাড়ি মানুষের সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য মুগ্ধকর। এটাও আমি না ভেবে পারিনি, পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পাহাড়িদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে সংস্কারমুক্ত কোনো সরকার যদি প্রগতিশীল নীতিমালা গ্রহণ করত, রাঙামাটির পার্বত্য অঞ্চল না জানি কেমন হতো।
আমার ভাবনা আমাকে মনে করিয়ে দিল সমপ্রতি প্রকাশিত এমআইটির অর্থনীতিবিদ ড্যারন এসমগলু এবং হার্ভার্ড রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ জেমস এ রবিনসনের লেখা দি অরিজিনস অব পাওয়ার, প্রসপারিটি অ্যান্ড পোভার্টি: হোয়াই নেশনস ফেইল বইটির কথা। এই বই সেই প্রশ্নটার উত্তর খুঁজেছে: কেন কিছু দেশ ধনী আর কিছু গরিব, যারা বিভাজিত হয়ে আছে সম্পদ ও দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য ও রোগশোক, খাদ্য ও দুর্ভিক্ষ দ্বারা? লেখকদ্বয় বুঝিয়েছেন, যে জাতি ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা সব নাগরিককে ক্ষমতায়িত করে, তাদের সর্বোচ্চ সম্ভাবনাটুকু উপলব্ধি করতে পারে, তারাই আরও ধনী হয়। আর যেসব জাতি ‘এক্সট্র্যাকটিভ’ রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা চালিত, তারা নাগরিকদের তাদের অর্থনৈতিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে সেটি মুষ্টিমেয়র হাতে সমর্পণ করে। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা গরিব থেকে আরও গরিবে পরিণত হয়। ইনক্লুসিভ জাতি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রই আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে সব নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার সুনিশ্চিত করে। সব নাগরিককে সমান চোখে দেখে। কিন্তু ‘এক্সট্র্যাকটিভ’ জাতি রাষ্ট্রে আইন ও প্রশাসন সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির উপকারে আসে, সবার নয়।

বালি দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে ছোট প্রদেশ, ১০ লাখের সামান্য বেশি কিছু মানুষের বাস। এখানকার ৮৬ শতাংশই হিন্দু, বাকিরা মূলত মুসলিম। ২৩ কোটি ২০ লাখ জন-অধ্যুষিত ইন্দোনেশিয়া বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম জনবহুল রাষ্ট্র, যার ৮৭ শতাংশই মুসলিম।

বালি ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় পর্যটনকেন্দ্র। এই অঞ্চলে জিডিপিতে ৮০ শতাংশ অবদান রাখে পর্যটনই। সমুদ্রসৈকত ছাড়াও এখানকার পর্যটন আকর্ষণ হলো বালির শিল্প-সংস্কৃতি, যার মধ্যে আছে নাচ, গান, ভাস্কর্য, চামড়া ও কাঠজাত পণ্য।

ভ্রমণ ও পর্যটনের অর্থনৈতিক প্রভাব উল্লেখযোগ্য হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড টুরিজম কাউন্সিল হিসাব করে দেখেছে, ২০১১ সালে ভ্রমণ ও পর্যটন জিডিপির ৯ শতাংশ অবদান রেখেছে, যেটির পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি ডলার! এই শিল্প সাড়ে ২৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করে দিয়েছে। যার অর্থ হলো এটি বিশ্বের ১২টি কর্মক্ষেত্রের একটি। এই খাতের আরেকটি ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য হলো, অন্যান্য খাতের তুলনায় এটি প্রতি এককে বেশি কাজের সুযোগ তৈরি করে বলে এটি অন্যান্য খাতের তুলনায় বেশি শ্রমনিবিড়। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে ভ্রমণ ও পর্যটন খাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮৬ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ২০১১ সালে ইন্দোনেশিয়ার জিডিপিতে এই খাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সাত হাজার ৩০০ কোটি ডলার অবদান রেখেছে। জিডিপিতে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ অবদান রাখা এই খাত ইন্দোনেশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম।

২০১১ সালে বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে ইন্দোনেশিয়া সরাসরি ৮০০ কোটি ডলারেরও বেশি আয় করেছে, এর মধ্যে কেবল বালিতেই খরচ করা হয়েছে ২০০ কোটি ডলারেরও বেশি। যেখানে বাংলাদেশ আয় করেছে ১০ কোটি ডলারের কম। অবশ্য সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার দেশটির পর্যটনশিল্পের আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, যেটা আশাব্যঞ্জক।

তার পরও প্রশ্ন থেকে যায়, বালি আর ইন্দোনেশিয়া কেন অর্থনৈতিকভাবে বেশি সমৃদ্ধ, রাজনৈতিকভাবে সুস্থিতিশীল এবং সারা বিশ্বের পর্যটকদের কেন চুম্বকের মতো টেনে আনতে পারছে; যেখানে রাঙামাটির পাহাড় এর ঠিক উল্টো? এর আশিংক উত্তর পেয়েছি হোয়াই নেশনস ফেইল বইটিতে। তুলনা করলে দেখা যায়, ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতি বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি ইনক্লুসিভ। পার্থক্যটা আরও বেশি সুনির্দিষ্ট হয় রাঙামাটির পার্বত্য অঞ্চলে, যেখানে একের পর এক সরকার পাহাড়ের মানুষের ক্ষতিসাধন করে এমন সব প্রকাশ্য দমননীতি নিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ উভয়ই মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও বাংলাদেশের তুলনায় ইন্দোনেশিয়া তার সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বেশি সহনশীলতা ও সম্মান দেখিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার শাসকেরা হিন্দু সংখ্যালঘু এবং তাদের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে দেশটির সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কাঠামোকে একটি সম্পদ হিসেবে দেখেছে। এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যকে ব্যবহার করে বালির প্রচারণা চালানো হয়েছে দ্বীপটিকে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র করে তুলতে। এতে বালির পাশাপাশি পুরো দেশই উপকৃত হয়েছে উপচে পড়া পর্যটক দিয়ে।

ইন্দোনেশিয়া বালিকে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রদেশ হিসেবে দেখে। দেশের অন্যান্য অংশ থেকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিমদের তুলে এনে এখানে বসতি গড়ে দিয়ে বালির হিন্দু সংখ্যাগুরুদের সংখ্যালঘু করার কোনো চেষ্টা করে না। অন্য দিকে বাংলাদেশ পার্বত্য অঞ্চলকে আদিবাসী সংখ্যাগুরু থেকে মুসলিম সংখ্যাগুরুতে রূপান্তর করার নীতি নিয়ে উল্টো পথে হেঁটেছে। এটা করার ফলে বাংলাদেশ পাহাড়িদের প্রান্তিক সংখ্যালঘু বানিয়ে এই অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পাহাড়ে সমতলের মানুষ এনে বসানো স্বাভাবিক স্থানান্তর ধারায় হয়নি, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সৃষ্টিও এর উদ্দেশ্য নয়। বরং প্রথমে এটি ছিল অতি বাঙালি জাতীয়তাবাদী ধারায় উদ্বুদ্ধ অসৎ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে। এর পর সেটি হয়েছে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার উদ্দেশ্যে।

অর্থনৈতিক সুযোগ ছাড়াই সমতল ভূমি থেকে গণহারে পাহাড়ে মানুষ নিয়ে আসাটা ছিল একটি ভ্রান্ত ধারণা, যেটি দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে ধ্বংসাত্মক পরিণতি। প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় নতুন বসতি স্থাপনকারীরা জোরপূর্বক আদিবাসীদের ভূমি দখল করে নিচ্ছে। এর ফলে আদিবাসীরা তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে ফেলছে। অনেকেই আছেন এক জীবনে দুইবার নিজেদের ভিটেমাটি হারিয়েছেন, এর আগে কাপ্তাইয়ের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র যাঁদের সবটুকু কেড়ে নিয়েছিল। পাহাড়ে যেহেতু ধান উৎপন্নকারী জমি খুবই সীমিত, এ কারণে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার বসতি স্থাপনকারীরা লভ্য জমিতে জীবিকা নির্বাহ করতে পারেনি। ফলে তারা সবুজে ঘেরা পাহাড়ি বনাঞ্চলের গাছ উজাড় করতে শুরু করে, যার মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন সংরক্ষিত বনাঞ্চলও আছে। এর ফলে এই মহামূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের ধ্বংস সাধিত হয়। বিপর্যস্ত হয় পরিবেশ।

আইনের শাসন, সম্পদের অধিকারের সুরক্ষা, সব নাগরিকের সমান অধিকার ‘ইনক্লুসিভ’ সমাজের অপরিহার্য অংশ। কিন্তু যতটুকুই আইনের শাসন ছিল, সেটিও দরজা দিয়ে ছুড়ে ফেলে সুকৌশলে পাহাড়ি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। এর উজ্জ্বল উদাহরণ হলো, যত হত্যা ও গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে, দায়ীদের একজনকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করানো বা অভিযুক্ত করা হয়নি। এ ব্যাপারে পরিষ্কারভাবেই বাংলাদেশ পাহাড়ি এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। কেউ যদি পাহাড়ি মানুষের দুর্দশার অবস্থা এড়িয়েও যায়, আইনের শাসনের অনুপস্থিতির কারণে দেদারসে উজাড় হয়েছে বনাঞ্চল, পাহাড়কে জঙ্গি সংগঠনগুলো বানিয়েছে প্রশিক্ষণকেন্দ্রের আখড়া।

দশকের পর দশক ধরে চলে আসা বাংলাদেশের ‘এক্সট্র্যাকটিভ’ নীতির কারণে শুধু হাতেগোনা কয়েকজন মানুষ অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সেটলার নীতির মূল কারিগর ছিলেন যে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক, তিনি পরে অনেকগুলো মাছ ধরার ট্রলারের মালিক বনে গেছেন। আদি-অকৃত্রিম সেই লেকের পানি এতটাই দূষিত হয়েছে, আমার সেই সফরে সেই লেকটাকে আমি সাঁতার কাটার উপযুক্ত মনে করিনি। ন্যাড়া করে ফেলা হয়েছে রাঙামাটির সবুজে ঘেরা পাহাড়গুলোকে।

শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই বালিকে অন্যতম প্রধান পর্যটনকেন্দ্র বানায়নি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে বালিবাসী হিন্দুদের সমৃদ্ধ শৈল্পিক ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এটিকে পর্যটনের তীর্থ বানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়া যদি বাংলাদেশের নীতি অনুসরণ করে এখানকার হিন্দু জনগোষ্ঠীকে মুসলিমদের দিয়ে স্থানচ্যুত করত, বালি হারিয়ে ফেলত এর সাংস্কৃতিক চরিত্রটিই। আন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছেও এর আবেদন আর তেমন থাকত না। একইভাবে পাহাড়িদের শিল্প, পোশাক, খাবারসহ সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ছাড়া পাহাড়ও বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে না। যেমন খাবারের কথাই ধরুন। বিরিয়ানির মতো মজাদার এক খাবার, বাঁশের ভেতর যেটা রান্না হয়, রাইস ওয়াইনের সঙ্গে সেই খাবার পাহাড়ি ঢালের মাচাং ঘরে বসে খাওয়ার আকর্ষণ নিশ্চয়ই বিদেশি পর্যটকদের টানবে।

‘এক্সট্র্যাকটিভ’ নীতি যদি চালিয়ে যাওয়া হয়, এটা একসময় পাহাড়ের ইকো টুরিজমের সম্ভাবনাকেই ধ্বংস করে দেবে। এটা হবে সবার উপকারে আসে এমন একটা ইকো টুরিজম শিল্পের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা। ভাবুন তো, পাহাড়ি এলাকার একটি ইকো ট্যুরিজম শিল্প বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকে শত কোটি ডলার আয় করে দিচ্ছে, এটা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লাখের বেশি কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করবে। একইভাবে সংরক্ষণ করবে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও। সমতলের দুস্থ-অশিক্ষিত লোকজনকে পাহাড়ে পাঠিয়ে এখানকার ভূমি গ্রাস করার চেয়ে এটা সমতল ভূমির শিক্ষিত মানুষের সামনে সুযোগ করে দেবে পর্যটন খাতে কাজ করার।

দুটো দৃশ্য ভাবুন তো। প্রথম দৃশ্য: এভাবে সবকিছু চলছে। হ্রদের ধারে গড়ে উঠছে ঝুপড়ি ঘর আর বস্তি। চরমপন্থীদের অর্থায়নে গড়ে উঠছে মাদ্রাসা। পাহাড়ে বিন্দুর মতো ছড়িয়ে আছে সামরিক ক্যাম্প আর আউটপোস্ট। বিদেশিদের পাহাড়ে ঢুকতে লাগছে বিশেষ অনুমতি। অথবা ভাবুন এই দৃশ্য: পাহাড়ি এলাকা উন্নত হয়েছে, হয়ে উঠেছে বিশ্ব মানের ইকো টুরিস্ট কেন্দ্র। ঝুপড়ি বস্তি আর সামরিক চৌকির বদলে পাহাড়ের গ্রামাঞ্চলে বিন্দুর মতো ছড়িয়ে আছে মাচাং ঘর, মেডিটেশন সেন্টার, রেস্তোরাঁ। যেখানে মিলছে পাহাড়ি খাবার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বালিবাসীর নাচের মতো জনপ্রিয় হয়েছে বাঁশ নৃত্য। কাপ্তাই লেক হয়ে উঠেছে বিশ্বমানের ওয়াটার রিসোর্ট, যেখানে ওয়াটার স্কিয়িং, প্যারাসেইলিং সুবিধা থাকছে। থাকছে শৌখিন মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বেকার যুবকেরা এখানে এসে পর্যটনশিল্পে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পরিবেশ সংরক্ষিত থাকছে।

এই দুই দৃশ্যের মধ্যে কোনটি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের জন্য ভালো, সেটি বিবেচনা করার জন্য পাঠক এবং বাংলাদেশের বিজ্ঞজনদের ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

ইংরেজি থেকে অনূদিত

অমিত চাকমা

কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও’র দশম প্রেসিডেন্ট। বাংলাদেশের আদিবাসী চাকমা সম্প্রদায়ে জন্ম। আলজেরিয়া পেট্রোলিয়াম ইউনিস্টিউটে রাসায়নিক প্রকৌশল নিয়ে পড়তে যান। ১৯৭৭ সালে সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে এমএসসি ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারিতে শিক্ষকতা করেন অমিত চাকমা। ১৯৯৬ সালে ্্্ইউনিভার্সিটি অব রেজিনার প্রকৌশল বিভাগের ডীন হিসেবে দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করেন। এসময় কানাডার ৪০ বছরের কম বয়সী শীর্ষ ৪০ জন ব্যক্তিত্বের তালিকায় অমিত চাকমার নাম স্থান পায়। ২০০১ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটার লুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (শিক্ষা) ও প্রভোস্ট হন। অমিত চাকমার গবেষণার ক্ষেত্র প্রাকৃতিক গ্যাস প্রকৌশল ও পেট্রোলিয়াম বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক।