মন্ত্রীর অনুরোধেও উদ্বোধন হয়নি

চট্টগ্রামের যানজটের অন্যতম কারণ কদমতলীর রেলক্রসিং। দুর্ভোগ কমাতে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে উড়ালসড়ক। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার চার মাস পরও এটি উদ্বোধন করা হয়নি। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সৌরভ দাশ
চট্টগ্রামের যানজটের অন্যতম কারণ কদমতলীর রেলক্রসিং। দুর্ভোগ কমাতে সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে উড়ালসড়ক। কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার চার মাস পরও এটি উদ্বোধন করা হয়নি। গতকাল বিকেলে তোলা ছবি l সৌরভ দাশ

চার মাস আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও চট্টগ্রামের কদমতলী উড়ালসড়ক এখনো চালু করা হয়নি। এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) অনুরোধও করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী। তবে সিডিএ উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করতে পারেনি।
চট্টগ্রাম নগরের কদমতলী রেলক্রসিংয়ের কারণে কদমতলী, পাঠানটুলী, স্টেশন রোড, ধনিয়ালা পাড়াসহ আশপাশের এলাকায় দিনের বিভিন্ন সময়ে তীব্র যানজট হয়। এই রেলক্রসিং দিয়ে দিনে ৩১ জোড়া যাত্রীবাহী ট্রেন ও শান্টিং ইঞ্জিন পারাপার হয়। প্রতিটি ট্রেন আসা-যাওয়ার পথে এই ক্রসিংয়ে তিন থেকে পাঁচ মিনিট যান চলাচল বন্ধ রাখা হয় বলে জানান পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
যানজট কমাতেই কদমতলীর রেলক্রসিংয়ের ওপর এক কিলোমিটার দীর্ঘ উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়। গত ৩০ অক্টোবর নগরের মুরাদপুর-লালখান বাজার উড়ালসড়ক পরিদর্শনের সময় কদমতলীর উড়ালসড়কটি যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে সিডিএ চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন।
কবে নাগাদ উড়ালসড়কটি চালু করা হবে তা জানতে চাইলে সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও উড়ালসড়কের প্রকল্প পরিচালক আহমদ মঈনুদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, জুন মাসে নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উড়ালসড়কটি সিডিএকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে উদ্বোধনের বিষয়টি সিডিএ কর্তৃপক্ষ ঠিক করবে।
গতকাল রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, উড়ালসড়কের দুই প্রান্তের প্রবেশমুখে বাঁশ, পাথর ও বালু দিয়ে প্রতিবন্ধকতা দেওয়া হয়েছে। উড়ালসড়কের এক প্রান্ত বটতলী স্টেশন এলাকা। আরেক প্রান্ত ধনিয়ালা পাড়া এলাকায়। উড়ালসড়কের নিচে বটতলী স্টেশন প্রান্তের সড়কের দুই পাশে গাড়ি চলাচল করলেও ধনিয়ালা পাড়ার এক পাশ দিয়ে গাড়ি চলছে। আরেক পাশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে এ এলাকায় যানজট বেড়েছে।
বটতলী স্টেশন প্রান্তে কথা হয় অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ মোরশেদের সঙ্গে। তিনি বলেন, উড়ালসড়কটি চালু থাকলে নিচে গাড়ির চাপ অনেক কমে যেত। তখন অল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো যেত।
ধনিয়ালা পাড়া এলাকার টায়ার ব্যবসায়ী সাদিক হাসান ও রমজান আলী বলেন, প্রায় তিন বছর ধরে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ চলায় তাদের এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। এখন উড়ালসড়ক চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য জমজমাট হবে।
তবে এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই লেইনের এই উড়ালসড়কে ওঠা-নামার (লুপ) বিকল্প পথ না থাকায় এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, যানজট নিরসনে এটি নগরের ট্রাফিক-ব্যবস্থায় কার্যকর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য জাহাঙ্গীর আলম গত শনিবার তাঁর কার্যালয়ে প্রথম আলোকে বলেন, উড়ালসড়কটিতে কোনো লুপ নেই। কদমতলী থেকে টাইগারপাসের দিকে গাড়ি যাওয়ার জন্য যদি একটি লুপ দেওয়া হতো, তাহলে উড়ালসড়কটি যানজট কমাতে অনেক বেশি কার্যকর হতো।
তবে সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, রেলওয়ে লেভেল ক্রসিংয়ের ওপর একটি ওভারপাস করাই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু তা না করে এর দৈর্ঘ্য বাড়ানো হয়েছে—যার প্রয়োজন ছিল না। এই উড়ালসড়ক নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় তেমন প্রভাব ফেলবে না।
সিডিএ সূত্র জানায়, ২০১২ সালের জুলাইয়ে উড়ালসড়কের নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডেভেলপমেন্ট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দুই লেইনের এই উড়ালসড়ক নির্মাণ করতে সময় লেগেছে তিন বছর। ব্যয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
সিডিএর প্রকৌশলীরা জানান, এই উড়ালসড়ক ব্যবহার করে নগরের নিউমার্কেট থেকে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ ও ডিটি রোডে চলাচলকারী গাড়িগুলো অনেক কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের পণ্যবাহী ট্রাকগুলোও এই উড়ালসড়ক ব্যবহার করতে পারবে। কোনো কারণে দেওয়ানহাট সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হলে এই উড়ালসড়ক বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। উড়ালসড়ক চালু হলে ক্রসিং ব্যবহার না করেই গাড়ি কদমতলী থেকে স্টেশন রোড যেতে পারবে। এতে যানজট কমবে।
গাড়ি চলাচলের জন্য উড়ালসড়কে কবে নাগাদ খুলে দেওয়া হবে তা জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রামবাসীর আকাঙ্ক্ষা প্রধানমন্ত্রী এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন করবেন। এই আকাঙ্ক্ষার কথা প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তিনি সদয় সম্মতি দিলে উদ্বোধন করা হবে।’
এ বিষয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘উড়ালসড়কটির কাজ শেষ হয়ে গেছে। এটি যানবাহন চলাচলের জন্য চালু করে দেওয়া উচিত। সিডিএ চেয়ারম্যানকে বিষয়টি আবারও বলব।’