শরিকদের ভাগ চূড়ান্ত করেনি বিএনপি

পৌরসভা নির্বাচনে ২০-দলীয় জোটের একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে শরিকদের কয়টি পৌরসভায় ছাড় দেবে, তা এখন পর্যন্ত তারা চূড়ান্ত করেনি। জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও কতটা সমন্বয় সম্ভব হবে, তা নিয়েও সংশয় আছে বিএনপিতে।
বিএনপি ও জোটের একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ২০-দলীয় জোটের বৈঠকে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোথাও যাতে জোটের একাধিক প্রার্থী না হয়, সে বিষয়ে জামায়াত সচেষ্ট থাকবে। তবে তারা বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবে, নাকি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে, তা বৈঠকে পরিষ্কার করেনি।
গতকাল শনিবার বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে যাবে, তা বিএনপিকে এখনো নিশ্চিত করে জানায়নি। তাঁর মনে হয়েছে, জামায়াত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাদের ঝোঁক স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার।
জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ২৩৪টি পৌরসভার সবকটিতে দলটি প্রার্থী দেবে না। নির্দিষ্ট কয়েকটি পৌরসভায় প্রার্থী দেবে। যেসব পৌরসভায় নিজেদের প্রার্থী থাকবে না, সেসব জায়গায় তারা ধানের শীষের প্রার্থীকে ভোট দেবে। এখন জামায়াত চেষ্টা করছে তাদের প্রত্যাশিত পৌরসভাগুলোতে বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে একক প্রার্থী দেওয়ার। সমন্বয় হলে তারা স্বতন্ত্রভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে বিগত উপজেলা নির্বাচনে অনেক জায়গায় দেখা গেছে বিএনপি জোটে সমন্বয় হয়নি।
জোটের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতা ও সমন্বয়ের জন্য দুই দলের চারজন নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোনো পক্ষই এ বিষয়ে মুখ খুলছে না। অবশ্য জোটের অন্য শরিকেরা তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা বিএনপিকে দিচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে জোটের বৈঠকে পৌর নির্বাচন নিয়ে শরিক দলের নেতাদের কাছ থেকে তিন ধরনের মত আসে। তা হলো: সবাই যার যার মতো নির্বাচন করা, জোটগতভাবে নির্বাচন করা অথবা কোনো দলীয় প্রতীক না নিয়ে জোটের সমর্থনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা। শেষ পর্যন্ত জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়া এবং সব জায়গায় একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বলে বৈঠক সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান বলেন, সব জায়গায় জোটের একক প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সবখানে জোটের মনোনীত প্রার্থীকে তাঁর দল সমর্থন দেবে।
নির্বাচন সমন্বয়ের সঙ্গে যুক্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় একজন নেতা প্রথম আলোকে জানান, প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য তাঁরা দুটি তালিকা তৈরি করেছেন। দুটি তালিকায় একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এর একটি করা হয়েছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতা এবং দলের সাবেক সাংসদদের মতামতের ভিত্তিতে। অন্যটি ‘গোপনীয়’, দলের দায়িত্বশীল একজন কেন্দ্রীয় নেতা এই তালিকা তৈরি করেছেন।
বিএনপির সূত্র জানায়, খবর পেয়ে কেন্দ্রীয় নেতার তৈরি করা সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা সম্পর্কে জানতে অন্য নেতারা তৎপর হন। তাঁরা তালিকার সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে পারেননি। এ অবস্থায় দুটি তালিকা যাচাই-বাছাই করে নতুন করে তালিকা করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুটি তালিকাই দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক জায়গায় প্রার্থী একরকম চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে কারা কোথায় প্রার্থী দিতে চায়, তা-ও খালেদা জিয়াকে জানানো হবে। তিনি প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
বিএনপির প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের একধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি এখানে সব সময় চলমান থাকে। তবে এবার যেহেতু নতুন ধরনের নির্বাচন, নতুন কিছু বিধিও হয়েছে, তাই এখানে সময় বাড়ানো প্রয়োজন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত দল আছে ১০টি। এর মধ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ৫টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১১টি, বাংলাদেশ ন্যাপ ৬টি পৌরসভায় দলীয় প্রার্থী দেওয়ার আগ্রহের কথা বিএনপিকে জানিয়েছে। এর বাইরে বিজেপি, ইসলামী ঐক্যজোট, মুসলিম লীগসহ (বিএমএল) আরও কয়েকটি দল প্রার্থী দিতে আগ্রহী। তবে দলগুলো বেশি দর-কষাকষিতে যেতে চায় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দলগতভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রাখছেন। জোটের নেতারা নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিএনপির চেয়ারপারসনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যে সিদ্ধান্ত নেবেন, কল্যাণ পার্টি তাকে স্বাগত জানাবে।
আর বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, তাঁরা জোটগতভাবেই নির্বাচনে যাচ্ছেন।
২০ দলের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা মনে করছেন যে জামায়াত বাদে জোটভুক্ত অন্য দলগুলোকে খুব একটা ছাড় দেওয়া হবে না। তবে শরিক দলগুলোর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এলাকায় কোনো প্রার্থীর অবস্থান ভালো হলে ছাড় দেওয়া হতে পারে।