গাছের নাম কামদেব

মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে সম্প্রতি তোলা কামদেব গাছের ছবি। ইনসেটে পাতা l লেখক
মিরপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান থেকে সম্প্রতি তোলা কামদেব গাছের ছবি। ইনসেটে পাতা l লেখক

সম্প্রতি কিছু ছবি তোলার কাজে মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে গিয়েছি একাধিকবার। আমাদের এই উদ্যানটি তুলনামূলকভাবে বৃক্ষবৈচিত্র্যে বেশ সমৃদ্ধ। তবে যথাযথভাবে উপস্থাপনার অভাবে কোথাও নান্দনিকতার কোনো ছাপ নেই। নেই পরিচর্যার কোনো ছোঁয়া। একটি গাছেও নামফলক নেই। আছে অসংখ্য অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের আনাগোনা। যাঁদের অধিকাংশই বৃক্ষ ভালোবাসেন না। এই উদ্যানে প্রতিদিন বেড়াতে আসা মানুষ ঠিক কীভাবে উদ্যানটি ঘুরে দেখবেন, সে রকম কোনো নির্দেশনাও কোথাও নেই। যতবারই সেখানে যাই, ততবারই এসব অসংগতির চিত্র ভেসে ওঠে। উন্নত দেশের বোটানিক্যাল গার্ডেনের সঙ্গে এই উদ্যানকে মেলাবার চেষ্টা করি। বৃথা চেষ্টা। এত উদ্ভিদবৈচিত্র্য থাকার পরও সর্বত্রই হতাশাব্যঞ্জক দারিদ্র্যের ছাপ। এই দৈন্য যতটা না আর্থিক, তার চেয়ে বেশি মানসিক। অথচ এই উদ্যানে এমন কিছু দুর্লভ সংগ্রহ রয়েছে, যা দেখার জন্য আলাদা করে পরিকল্পিতভাবে বেশ কিছু আয়োজন হতে পারে।
উদ্যানের এমন কয়েকটি দুর্লভ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে অন্যতম হলো কামদেব (Calophyllum polyanthum)। স্থানীয় অন্যান্য নাম কিরোলি, ক্যান, চানডুয়া, তৈলো ইত্যাদি। সাকল্যে এখানে তিনটি গাছ আছে বলে জানিয়েছেন উদ্ভিদবিদ শামসুল হক। বিগত কয়েক বছরে এই গাছটির কোনো চারা কলমও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রাকৃতিকভাবেও জন্মায়নি কোনো চারা। অথচ দেশের উদ্ভিদবিষয়ক গ্রন্থগুলোর তথ্যমতে কামদেব সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের স্থানীয় গাছ। সে হিসেবে এখানেও প্রাকৃতিকভাবেই চারা জন্মানোর কথা।
ধারণা করা হচ্ছে, উল্লিখিত স্থানগুলোয় গাছটি থাকলেও বিপন্ন অবস্থায় থাকতে পারে। কারণ, এ বিষয়ে সাম্প্রতিক কোনো রেকর্ড খোদ বন গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামাল হোসাইন জানিয়েছেন, গাছটি আমাদের পাহাড়ি বনগুলোয় অল্প কিছু থাকতে পারে। তবে সাম্প্রতিক কোনো সরেজমিন অনুসন্ধানের তথ্য নেই।
কামদেব মাঝারি আকারের শাখা-প্রশাখাযুক্ত চিরসবুজ গাছ। ৪৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। বাকল লম্বালম্বি খাঁজযুক্ত, হলুদ, ধূসর, বাদামি বা কালো রঙের হতে পারে। পাতা সরল, সাড়ে ৬ থেকে সাড়ে ১২ সেন্টিমিটার লম্বা, পুরু ও আগা চোখা। মঞ্জরিতে অনেক সুগন্ধি ফুল থাকে, পুষ্পবৃন্ত সরু, ৪ থেকে ১০ মিলিমিটার লম্বা। বৃত্যংশ চারটি; অসম, ডিম্বাকার থেকে অর্ধ গোলাকার। পুংকেশর অসংখ্য। ফল ঝুলন্ত ও রসাল; খাওয়া যায়। বীজ ডিম্বাকৃতি, বাদামি রঙের। কাঠের রং লালচে বাদামি। নৌকা ও জাহাজের মাস্তুলসহ ঘরের বিভিন্ন ব্যবহারিক জিনিসপত্র তৈরিতে কাজে লাগে। সমুদ্র উপকূলে নির্মিত ঘাটের রাস্তা তৈরিতেও এই কাঠ ব্যবহার করা হয়। বীজ এবং কাটিং থেকে চারা। ফুল ও ফল জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত। জন্মস্থান ভারত, থাইল্যান্ড ও দক্ষিণ-পশ্চিম চীন। কামদেবের ঘনিষ্ঠ প্রজাতিটির নাম সুলতানচাঁপা। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে অনেকটাই সহজলভ্য।