বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করার অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ‘বিকৃত’ করার অভিযোগ উঠেছে দলের সাংসদ এম এ লতিফের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা আওয়ামী লীগেরই নেতা-কর্মী। চট্টগ্রাম শহরের আগ্রাবাদ এলাকায় ও বিমানবন্দর সড়কে টানানো ফেস্টুনে ব্যবহার করা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিয়ে দলে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ফেস্টুনে ব্যবহার করা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির মুখমণ্ডল বঙ্গবন্ধুর হলেও শরীর তাঁর নয়। অন্য কারও শরীরে কম্পিউটার কারসাজির মাধ্যমে মুখমণ্ডল যুক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম-১১ আসনের (বন্দর, হালিশহর ও পতেঙ্গা) সাংসদ এম এ লতিফ গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে ঘিরে এসব ফেস্টুন টানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ফেস্টুনে লাগানো ছবিগুলো দেখেছি। বঙ্গবন্ধুকেও কাছ থেকে দেখেছি। তাতে ফেস্টুনের ওই ছবির মাথার অংশ বঙ্গবন্ধুরই। কিন্তু মাথা থেকে পা পর্যন্ত শারীরিক কাঠামো সাংসদ লতিফের। এ জন্য আমি তাঁর কাছে উকিল নোটিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘জাতির জনকের শারীরিক কাঠামো পরিবর্তন করে তিনি (সাংসদ লতিফ) ফেস্টুন টাঙিয়েছেন। এটি আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। জাতির পিতাকে নিয়ে লতিফ ঠাট্টা-মশকরা করেছেন।’
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু সাধারণত খাটো পাঞ্জাবির সঙ্গে ঢোলা পায়জামা ও স্যান্ডেল পরতেন। কখনো কখনো ওই সময়কার ডিজাইনের জুতাও পরতেন। ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধু যে ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন দেখানো হয়েছে, সেভাবে তিনি দাঁড়াতেন না।
ফেস্টুনে ব্যবহার করা ছবিতে দেখা যায়, লম্বা পাঞ্জাবি, চাপা পায়জামা ও পায়ে হালফ্যাশনের কালো জুতা (স্নিকার) পরে বঙ্গবন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। ছবির নিচে সাংসদ লতিফের নামসহ বিভিন্ন উদ্ধৃতি ব্যবহার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কামাল উদ্দিন আহম্মদ গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেহেতু বঙ্গবন্ধু সংবিধানের একটি অংশ, তাই তাঁর বক্তৃতা, বিবৃতি বা ছবি বিকৃত করা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। কিছুদিন আগে খালেদা জিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংবিধানকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করা এবং তাঁকে অপমান করে বিবৃতি দিলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা যাবে।’
ফেস্টুনে বঙ্গবন্ধুর এ ছবি নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় গত সোমবার বিমানবন্দর সড়কের পাশে টাঙানো কিছু ফেস্টুন সরিয়ে ফেলা হয়। গতকাল দুপুরে আগ্রাবাদে একটি ফেস্টুনের ছবি প্রথম আলোর আলোকচিত্রী ক্যামেরাবন্দী করার পর কিছু যুবক সেটিও নামিয়ে ফেলেন। (ছবিটি নিয়ে বিতর্ক থাকায় প্রথম আলো তা ছাপা থেকে বিরত থাকল।)
জানতে চাইলে সাংসদ এম এ লতিফ গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে যে এই ছবির মাথা ছাড়া নিচের অংশ বঙ্গবন্ধুর ফিগার (শারীরিক অবয়ব) নয়। প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামে আগমন উপলক্ষে আমি প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ফুল ফিগারের (আপাদমস্তক) অনেকগুলো ছবি টাঙানোর জন্য বলেছিলাম। এটা করেছি বেনিফিট (সুবিধা) পাওয়ার জন্য। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বিকৃত ছবি টাঙানো হলে আমি কি বেনিফিট পাব? আমি ঢাকায় অবস্থান করছি। চট্টগ্রামে ফিরে ওই ছবিগুলো দেখে মন্তব্য করব।’
ফেস্টুনগুলো চট্টগ্রাম নগরের আন্দরকিল্লার হায়দার প্রিন্টার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. হায়দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাংসদ এম এ লতিফ এবং চট্টগ্রাম চেম্বারের অনেক কাজ করে থাকি। তবে বঙ্গবন্ধুর ছবি কীভাবে এবং কারা বিকৃত করেছেন, তা জানি না। গ্রাফিকসের কেউ জড়িত কি না, সেটাও জানি না। তবে গ্রাফিকসের কাজ করার সময় গ্রাহকের প্রতিনিধি থাকেন।’
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর জীবনধারা, চালচলন, পোশাক-আশাক চিনি। কিন্তু ফটোশপের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ছবি যাঁরা বিকৃত করে প্রচারণা চালিয়েছেন, তাঁদের ক্ষমা নেই। সবকিছুতে সমঝোতা হবে, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে কোনো সমঝোতা নেই।’