চলে গেলেন কবি রফিক আজাদ

কবি রফিক আজাদ
কবি রফিক আজাদ

‘ভাত দে হারামজাদা/ তা না হলে মানচিত্র খাবো’-জনপ্রিয় এই পংক্তির স্রষ্টা কবি রফিক আজাদ আর নেই। আজ শনিবার বেলা দুইটা ১০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তিনি ইন্তেকাল (ইন্না লিল্লাহি.... রাজিউন) করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। কবির ভাতিজি নীরু শামসুন্নাহার প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কবির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানসহ অনেকেই।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে জানুয়ারির ১৫ তারিখে হাসপাতালে ভর্তি হন কবি রফিক আজাদ। ওই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে এই মুক্তিযোদ্ধা কবি চিকিৎসাধীন ছিলেন।
বিএসএমএমইউর চিকিৎসক হারিসুল হক বলেন, রফিক আজাদ ৫৮ দিন লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে তাঁর রক্তচাপ পাওয়া যাচ্ছিল না। এতে ক্রমান্বয়ে তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে থাকে। আজ দুপুরে রক্ত সংক্রমণে তাঁর মৃত্যু হয়।

রফিক আজাদ আইসিইউ ইনচার্জ দেবব্রত বণিক ও কামরুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
কবির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তাঁর দুই ছেলে অভিন্ন আজাদ ও অব্যয় আজাদ কানাডায় থাকেন। তাঁরা বাবাকে দেখতে দেশে এসেছিলেন। ১০ মার্চ বাবাকে দেখে অভিন্ন আজাদ আবার কানাডা চলে যান। গতকাল তিনি কানাডায় পৌঁছান। আজ মৃত্যুর খবর শুনে অভিন্ন আবার রওনা দেবেন। পৌঁছাবেন সোমবার। এরপর রফিক আজাদের দাফন সম্পন্ন হবে। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে কবির মরদেহ দাফন করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ওই পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
নীরু শামসুন্নাহার বলেন, লাশ এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে কবির মরদেহ প্রথমে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে নেওয়া হবে। সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ নেওয়া হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। তারপর বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে। রফিক আজাদ ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ তাঁর চার ছেলে ও দুই মেয়ে। এক মেয়ে আগেই মারা গেছেন।
রফিক আজাজের জন্ম ১৯৪১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল থানার গুণী গ্রামে। বাবা সলিম উদ্দিন খান ছিলেন একজন সমাজসেবক এবং মা রাবেয়া খান ছিলেন আদর্শ গৃহিণী। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৫২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় শ্রেণির শ্রেণির ছাত্র রফিক আজাদ ভাষা শহীদদের স্মরণে বাবা-মায়ের কঠিন শাসন অস্বীকার করে খালি পায়ে মিছিল করেন। ভাষার প্রতি এই ভালোবাসা পরবর্তী জীবনে তাঁকে তৈরি করেছিল একজন কবি হিসেবে, আদর্শ মানুষ হিসেবে। ১৯৫৬ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় একবার বাবার হাতে মার খেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। উদ্দেশ্য, পি সি সরকারের কাছে ম্যাজিক শেখা। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। রফিক আজাদ বাংলা একাডেমির মাসিক সাহিত্য পত্রিকা উত্তরাধিকার এর সম্পাদক ছিলেন। রোববার পত্রিকাতেও তিনি নিজের নাম ঊহ্য রেখে সম্পাদনার কাজ করেছেন। তিনি টাঙ্গাইলের মওলানা মুহম্মদ আলী কলেজের বাংলার প্রভাষক ছিলেন।
কবির প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে অসম্ভবের পায়ে, সীমাবদ্ধ জলে সীমিত সবুজে, চুনিয়া আমার আর্কেডিয়া, পাগলা গারদ থেকে প্রেমিকার চিঠি, প্রেমের কবিতাসমগ্র, বর্ষণে আনন্দে যাও মানুষের কাছে, বিরিশিরি পর্ব, রফিক আজাদ শ্রেষ্ঠ কবিতা, রফিক আজাদ কবিতাসমগ্র, হৃদয়ের কী বা দোষ, কোনো খেদ নেই, প্রিয় শাড়িগুলো প্রভৃতি।
কবি রফিক আজাদ ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও ২০১৩ সালে একুশে পদক পান। এ ছাড়া হুমায়ুন কবির স্মৃতি (লেখক শিবির) পুরস্কার (১৯৭৭), আলাওল পুরস্কার (১৯৮১), কবিতালাপ পুরস্কার (১৯৭৯), ব্যাংক পুরস্কার (১৯৮২), সুহৃদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৯), কবি আহসান হাবীব পুরস্কার (১৯৯১), কবি হাসান হাফিজুর রহমান পুরস্কার (১৯৯৬) ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা (১৯৯৭) লাভ করেন।

কবি রফিক আজাদের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।