বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল হাজার একর জমির বোরো ধান

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অতিবৃষ্টিতে গতকাল রোববার সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওর ও ধরমপাশা উপজেলার সোনাডুবি হাওর তলিয়ে গেছে। এতে হাওর দুটির কয়েক হাজার একর জমির বোরো ধান পানির নিচে চলে যায়। কষ্টের ফসল হারানোর শঙ্কায় দিশেহারা সেখানকার কৃষক।
দিরাই উপজেলা প্রশাসন ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরাম হাওরের পাশেই কালনী নদী। কয়েক দিনের বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এমনিতেই নদীতে পানি বেশি ছিল। তার ওপর শনিবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এতে গতকাল সকালে হাওরের কেজাউরা এলাকায় প্রথমে বাঁধ উপচে কালনী নদীর পানি হাওরে ঢোকে। পরে বাঁধের একাংশ ভেঙে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকতে থাকে। সারা দিনই এভাবে চলে।
হাওরপারের কাদিরপুর গ্রামের কৃষক ফজর মিয়া বলেন, ‘পানিতে পুরা হাওরের ধান তলাই গিছে। হাওরের দিকে চাইলে অখন খালি পানি দেখা যায়। রাতে যেভাবে মেঘ (বৃষ্টি) অইছে তখনই বুজছি ধান সব শেষ।’
স্থানীয় তারল ইউপির সদস্য আবদুস সালাম বলেন, হাওরের অধিকাংশ বোরো ধানই পানিতে তলিয়ে গেছে। যেভাবে পানি ঢুকছে তাতে মনে হয় হাওরের কোনো ধানই আর কৃষক কাটতে পারবেন না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আলতাব হোসেন গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ উপচে ঢলের পানি এখনো ঢুকছে। তাঁদের লোকজন সেখানে আছেন। স্থানীয়দের নিয়ে তাঁরা চেষ্টা করছেন মাটির বস্তা ফেলে বাঁধটি রক্ষা করতে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এই হাওরের কিছু ধান কাটা হয়েছে। তবে কী পরিমাণ ধান পানিতে তলিয়েছে, এই মুহূর্তে বলা যাবে না। আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছি।’
ধরমপাশার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের সোনাডুবি হাওরে এবার ৪৯৪ একর জমিতে বোরো চাষ করা হয়েছিল। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল সকাল সাতটার দিকে সোনাডুবি বাঁধটিতে ফাটল ধরে। পরে সেখানে ভেঙে গিয়ে হাওরের প্রায় আড়াই শ একর ধান পানিতে তলিয়ে যায়।
বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের দাতিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মো. ফজলু মিয়া বলেন, ‘এই বান্দে আমরা নিজেরাই কাম করছি। এইডা বান্দনের লাইগ্যা সরহারি সায্য পাইলে রাক্ষুসসা হানি আমরার ফসল খাইতে হারতো না।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন বাঁধ থাকলে এভাবে ফসলহানি ঘটত না বলে মনে করেন ইউপি চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারিভাবে বাঁধটি মেরামতের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দও ছিল না। পাহাড়ি ঢলে পানির প্রবল ধাক্কায় হাওরে ফসলডুবির ঘটনা ঘটেছে।