চাল রপ্তানিতে আপত্তি অর্থনীতিবিদদের

চাল রপ্তানি নিয়ে আপত্তি তুলেছেন অর্থনীতিবিদেরা। তাঁরা বলছেন, বাংলাদেশে রপ্তানি উপযোগী চাল আছে কি না, তার কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই। এ ছাড়া বিশ্বের যেসব দেশ চাল রপ্তানি করে, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ পেরে উঠবে না। তাই সরকারকে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দিকেই মনোযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা।
গতকাল রোববার রাজধানীতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন, ২০১৬ শীর্ষক দুই দিনের ধারাবাহিক সেমিনারের এক আলোচনায় অর্থনীতিবিদেরা এ সব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ওই সেমিনারে কৃষি নিয়ে পূর্ণ ভাবনা বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অর্থনীতিবিদ রুশিদান ইসলাম রহমান।
সেমিনারে রুশিদান ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারিভাবে শ্রীলঙ্কায় চাল রপ্তানি করেছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানির আলোচনা চলছে। কিন্তু আমাদের জমির পরিমাণ কম, আর আমরা যে চাল উৎপাদন করি তা রপ্তানি বাজারে থাকা অন্য দেশগুলোর চালের মানের চেয়ে নিম্ন। অন্যদিকে আমাদের দেশের জমি প্রতিবছর কমছে। দেশে অকৃষি খাতে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে জমি চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি রপ্তানিকে গুরুত্ব দিই, তাহলে দেশের কৃষির জন্য ভালো হবে না।’ হাওরের কৃষকদের জন্য শস্যবিমা চালুর পরামর্শ দেন তিনি।
বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী শাহাবুদ্দিন বলেন, দেশে উৎপাদিত চালকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। এখনো চাল রপ্তানি সরকারের মাধ্যমে হচ্ছে। বেসরকারি খাত উৎসাহী না হলে রপ্তানির উদ্যোগও টেকসই হবে না।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, দেশে নানা ধরনের সবজি, ফল ও মাছের চাষ বেড়েছে। এতে দেশের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও তিনি মত দেন।
বিআইডিএসের প্রফেসারিয়াল ফেলো এম আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের কৃষির জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হুমকি জলবায়ু পরিবর্তন। গ্রীষ্মকালের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। সূর্যকিরণ পাওয়ার সময়কাল গড়ে কমছে। এর ফলে এর নেতিবাচক প্রভাব কৃষিতে গিয়ে পড়ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সদস্য অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল বলেন, ‘পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী আমরা প্রতিবছর ৫ গ্রাম করে চাল খাওয়া কমাচ্ছি, সবজি ও মাছ-মাংস খাওয়া বাড়াচ্ছি। ফলে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে সমস্যা ভবিষ্যতে হবে না।’