উদ্বোধন হলেও সচল হয়নি পায়রা বন্দর

পটুয়াখালীতে দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রার উদ্বোধন হলেও যোগাযোগব্যবস্থাসহ অন্যান্য সমস্যার কারণে এখনো পুরো কার্যক্রম চালু হয়নি। ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে ভিত্তিফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এই বন্দরের উদ্বোধন করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ১৬ একর জমি অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের স্থাপন করা বন্দরটির পন্টুন বা বহির্নোঙরে কোনো জাহাজ নেই। পন্টুন থেকে একটু দূরে নৌবাহিনীর ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কসের একটি ভ্রাম্যমাণ ছোট জাহাজ ভেড়ানো হয়েছে। এটি বন্দরের কারিগরি কাজের জন্য অবস্থান করছে। বন্দরে পণ্য ওঠানো-নামানোর জন্য আপাতত ছোট একটি পন্টুন ও ক্রেন বসানো হয়েছে। পন্টুন থেকে ওপরে উঠতে সংযুক্ত করা হয়েছে গ্যাংওয়ে। পশ্চিম দিকের বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ থেকে বন্দরে নামার জন্য ইট বিছানো সড়ক, এর দুই পাশে সড়কবাতি এবং পন্টুনসংলগ্ন এলাকায় নদীর পাড়ে দুই কক্ষের ছোট ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বন্দরের নিরাপত্তার জন্য ইতিমধ্যে ১০ জন নিরাপত্তারক্ষী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন।
তবে হ্যান্ডলিং ও নেভিগেশন যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, পয়ঃপ্রণালি নিষ্কাশনব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ-সংযোগ স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। চ্যানেল ড্রেজিং ও সংরক্ষণ, রাবনাবাদ চ্যানেলের দক্ষিণ পাড়ের ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চ্যানেল শনাক্ত করার দিকে নজর দিতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন।
স্থানীয় লোকজন মনে করছেন, বন্দর থেকে মহাসড়ক পর্যন্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের আগ পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের জন্য কলাপাড়া পৌর শহরের অভ্যন্তরের সড়কটি (বালিয়াতলী-কলাপাড়া সড়ক) ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এর আগে সড়কটিকে ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। বিকল্প এই সড়কটি আপাতত ব্যবহার করা গেলেও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়ক স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। এ জন্য বন্দরের সামনের দিক থেকে টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের ভেতর দিয়ে রজপাড়া পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক পরিচালক (ট্রাফিক) কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নন, এই বন্দরটি ব্যবহারে বেশি আগ্রহী হবেন খুলনা ও বরিশালের ব্যবসায়ীরাও। তাঁদের অনেকেই এখন মংলা বন্দর ব্যবহার করছেন। তিনি আরও বলেন, সমুদ্রবন্দর সচল করার জন্য সবার আগে করা দরকার রাবনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙরে বড় জাহাজ (মাদার ভেসেল) রেখে ছোট জাহাজের (ফিডার ভেসেল) মাধ্যমে পণ্য খালাস করা। এটা দ্রুত শুরু করলেই বন্দর সচল হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই সঙ্গে সরকারের উচিত হবে বন্দরের জন্য প্রয়োজনীয় জনবলকাঠামো নিযুক্ত করা।
বরিশাল শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ লঞ্চ-কার্গো অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাইদুর রহমান বলেন, পণ্য আমদানি-রপ্তানিসহ পরিবহনের ক্ষেত্রে এখন যতটুকু কারিগরি সহায়তা এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা প্রয়োজন, তার জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করতে হবে। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা সরকারের উচ্চপর্যায়ের কাছে এমনটাই প্রত্যাশা করেন।
পায়রা সমুদ্রবন্দরের প্রকল্প কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট সরদার বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘বন্দরের কাজ শেষ করতে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। আর বন্দরের কাজ থেমে নেই, চলছে। অগ্রাধিকার দিয়ে কাজগুলো সম্পন্ন করার চিন্তা আমাদের রয়েছে।’
৫ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পায়রা সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৩ পাস হয়। এই আইনের আওতায় রাবনাবাদ চ্যানেলসংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীর পাড়ের টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দর স্থাপনের কাজ চলছে।