বন্যার পানি কমছে, দুর্ভোগ কমছে না

দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কমছে নদ-নদীর পানি। আগামী কয়েক দিনে আরও উন্নতির আশা করছেন আবহাওয়াবিদেরা। তবে পানি কমলেও কমছে না বন্যার্ত মানুষের দুর্ভোগ। গাইবান্ধায় পানিতে ডুবে মারা গেছে একজন।
বন্যার কারণে বাঁধ, অন্যান্য উঁচু স্থান ও সড়কে আশ্রয় নেওয়া মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাব মিটছে না। যে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ অনেকের।
পানি কমতে থাকলেও নদীভাঙন বেড়েছে। দেখা দিয়েছে চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগ। উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর বন্যার্তদের কেউ কেউ বাড়িঘরে ফেরা শুরু করলেও সেগুলো বালু ও কাদায় ভরে আছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাসস জানায়, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি কমায় গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও ধরলা তীরবর্তী কুড়িগ্রামের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পদ্মার পানি আগামী কয়েক দিনে কমে রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
গতকাল দেশের নদ-নদীর ২৮টি স্থানে পানি বাড়ে এবং কমে ৫৪টি স্থানে। অপরিবর্তিত থাকে তিনটি স্থানে। ঢাকার আশপাশে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার পানি বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকতে পারে।
ঢাকার বাইরে প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
জামালপুরে যমুনার পানি ২৪ সেন্টিমিটার কমে গতকাল বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, তলিয়ে থাকা ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটগুলো জেগে উঠছে। বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেওয়া মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। পানির তোড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘর এবং ভেতরে জমে থাকা বালু-কাদার স্তূপ সরাতে ব্যস্ত অনেকে। একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ঘর, অন্যদিকে খাদ্যসংকটে অনেকে দিশেহারা।
সিরাজগঞ্জে যমুনার পানি কিছুটা কমলেও আতঙ্ক কাটছে না শহরবাসীর। জেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন স্থান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় এই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সকালে শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, পানি কমতে থাকায় ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।
গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল এ জেলায় ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকালে পানিতে ডুবে মারা গেছেন সুন্দরগঞ্জের ঘগোয়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল কাদের (৫৫)। পানি কমতে থাকায় কিছু এলাকায় নদীভাঙন শুরু হয়েছে। সকালে সদর উপজেলায় ত্রাণ বিতরণ করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি ৬ সেন্টিমিটার কমলেও বন্যার তেমন উন্নতি নেই। পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীভাঙন বেড়েছে। গতকাল সদর উপজেলার উড়াকান্দা, লালগোলা, চরজৌকুরী, মহাদেবপুরসহ আরও কয়েকটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। শুধু গোয়ালন্দে ভাঙনের কবলে পড়েছে কয়েক শ পরিবারের বাড়ি। উপজেলার ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে।
ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল আছে। এখনো পানিবন্দী প্রায় ৩০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ। চরভদ্রাসন উপজেলার নতুনডাঙ্গিতে বেড়িবাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া লোকজনের মধ্যে গতকাল ত্রাণ বিতরণ করা হয়। বন্যা উপদ্রুত এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সেবা দপ্তরের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
শরীয়তপুরে গতকাল পদ্মার পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি ওঠায় শরীয়তপুর সদর, জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৮০টি বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এ জেলার ২০টি ইউনিয়নের ৯০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলোতে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি ২৪ ঘণ্টায় ২২ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বানভাসি অনেকের অভিযোগ, ত্রাণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের কাছে ছোটাছুটি করছেন তাঁরা। মানুষ ও গবাদিপশু একসঙ্গে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে নানা রোগ। নদীভাঙনে ধসের হুমকিতে পড়েছে রোহদহ পুরোনো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। ধুনটে পানিবন্দী ৪০০ পরিবারের মধ্যে গত সোমবার রাতে ত্রাণ বিতরণ করেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী।