দুদক বিরক্ত করলে অসুবিধা আছে

অর্থ আত্মসাতের মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্তৃক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দুই জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘দুদক ওখানে যায় কেন? দুদক যদি সেখানে কিছু পায়, যাবে, অসুবিধা নাই। কিন্তু যদি ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করার জন্য যায় তাহলে অসুবিধা আছে।’

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

২৯ আগস্ট রাতে সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় রাজউকের দুই জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলীকে গ্রেপ্তার করে দুদক। এঁরা হচ্ছেন উত্তরা অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক ছাইদুর রহমান এবং রাজউকের নির্বাহী প্রকৌশলী, গুলশান-বনানী-বারিধারা ও উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মনোয়ারুল ইসলাম। ঘটনার পরদিন থেকেই তাঁদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করতে থাকেন। তাঁরা দুদকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ তোলেন।

রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গতকালের অনুষ্ঠানে বিষয়টি সম্পর্কে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা। মন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, ‘তাহলে কি আপনি রাজউকে দুদকের অভিযানকে নিরুৎসাহিত করছেন?’ জবাবে মন্ত্রী বলেন, দুদক কাউকে হয়রানি করতে পারে না। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনি ওখানে যাবেন, একটা সুবিধা চাইবেন। সুবিধা না দিলে ফাইল নিয়ে টানাটানি করবেন, এটা তো হতে পারে না।’

দুদকের কেউ এ রকম সুবিধা চেয়েছিলেন কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি অতটুকু জানি না। তবে আমার মনে হয় কেউই খুব স্বচ্ছ না।’

ঢালাও উচ্ছেদ নয়: অনুষ্ঠানে আবাসিক এলাকায় অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদে রাজউকের চলমান অভিযান নিয়ে মন্ত্রী বলেন, এসব আবাসিক এলাকা নকশা করার ক্ষেত্রে নগর পরিকল্পনাবিদদের দূরদর্শিতার অভাব ছিল। ধানমন্ডি-গুলশান-বারিধারার মতো এলাকাগুলোতে  হাসপাতাল, স্কুল কিংবা প্রয়োজনীয় বাণিজ্যিক স্থাপনার জন্য আলাদা কোনো জায়গা রাখা হয়নি। এসব এলাকায় যে বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো গড়ে উঠেছে, সেটা প্রয়োজনের সাপেক্ষেই। ঢালাওভাবে এগুলো উচ্ছেদ করাও সম্ভব নয়।

পরিস্থিতি বিবেচনায় ও প্রয়োজনের সাপেক্ষে এসব আবাসিক এলাকার কিছু কিছু সড়ক বাণিজ্যিকভাবে রূপান্তরের আওতায় আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। আবাসিক এলাকায় অননুমোদিত বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে রাজউকের দুর্বল নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুললে মন্ত্রী বলেন, ‘যখন এগুলো গড়ে উঠল, তখন রাজউকের সংশ্লিষ্ট এলাকার অথোরাইজড অফিসার কিংবা পরিদর্শকেরা এগুলো দেখেও দেখে নাই কেন?’ অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটে (এইচবিআরআই) প্রতিষ্ঠানটির উদ্ভাবিত নির্মাণ উপকরণ ও প্রযুক্তি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। পরিবেশবান্ধব, দুর্যোগ সহনীয় ও সাশ্রয়ী—এসব নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

ডিআরইউর আয়োজনে মিট দ্য রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন এইচবিআরআইয়ের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সাদেক। ডিআরইউর সভাপতি জামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ।