চিকিৎসকসংকট প্রকট, রোগী দেখেন সহকারী

ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত ২২ দিন বয়সী ছেলে শাহাদৎকে প্রথমে নিজ উপজেলা বরগুনার আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখান বাবা মো. শাহাবুদ্দিন (৩০)। সেখানকার চিকিৎসকদের পরামর্শে ‘বড় ডাক্তার’ দেখাতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে আনা হয় পটুয়াখালী ২৫০ শয্যার হাসপাতালে। টিকিট কেটে বহির্বিভাগে দেখানোর পর শাহাবুদ্দিন জানতে পারলেন, শাহাদৎকে আসলে দেখেছেন একজন উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (স্যাকমো), যিনি চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করেন।
শিশুটির খালা নুরুন্নাহার বেগম (৩৫) বলেন, ‘আমতলীতে ডাক্তার দেহাইছি। হেরা বড় ডাক্তারের কাছে যাইতে কইছে। হেই লেইগ্যা পটুয়াখালী হাসপাতালে আইছি। কিন্তু এহন হুনি ওনারা বড় ডাক্তার না।’
একই দিন বরগুনার বেতাগী থেকে আসা সুমি (১০) ও পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলা থেকে আসা সিমলাসহ (৮) অনেক শিশুকেই বহির্বিভাগে স্যাকমোর কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে দেখা গেল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, হাসপাতালে চিকিৎসকসংকটের কারণে বহির্বিভাগ সামলাতে চিকিৎসকের সহকারীদের কাজে লাগানো হচ্ছে। বহির্বিভাগে কর্মরত উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. রিয়াজ বলেন, ‘রোগীর অবস্থা জটিল মনে হলে আমি তাঁকে হাসপাতালের কনসালট্যান্টদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে থাকি। এভাবেই আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এই হাসপাতালের বহির্বিভাগে ১ লাখ ২১ হাজার ৫৩৯ জন সেবা নিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। তবে জরুরি বিভাগে দুজন চিকিৎসক রয়েছেন। বহির্বিভাগ সামলাতে সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে আনা হয়েছে চারজন স্যাকমোকে।
হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও সে অনুযায়ী লোকবল বাড়ানো হয়নি। ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কসহ ৫৮ জন চিকিৎসক থাকার কথা। বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১৯ জন। ৩৯টি পদই শূন্য। সিনিয়র কনসালট্যান্টের ১০টি পদের মধ্যে ২টি, জুনিয়র কনসালট্যান্টের ১১টির মধ্যে ৫টি এবং চিকিৎসা কর্মকর্তার ১০টি পদের মধ্যে ৯টি শূন্য। এ ছাড়া আবাসিক ফিজিশিয়ান, আবাসিক সার্জন, আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তার (আরএমও) তিনটি এবং অবেদনবিদের (অ্যানেসথেটিস্ট) তিনটি পদই শূন্য। প্যাথোলজিস্ট, রেডিওলোজিস্টসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদেও কেউ নেই। সহকারী রেজিস্ট্রারের ১১টি পদের মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র একজন। জনবলসংকটের কারণে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক চিকিৎসক নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসকসংকটের বিষয়টি একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদ পূরণ করা হলে রোগীরা উন্নত সেবা পাবেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসকের সহকারীর সেবা প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্যাকমোরা চিকিৎসকের সহকারী হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু চিকিৎসকসংকটের কারণে তাঁদের দিয়ে এখন বহির্বিভাগ চালাতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।