বন্ধুসভার তুফান

মা সালমা আক্তারের সঙ্গে তুফান
মা সালমা আক্তারের সঙ্গে তুফান

সিডরের কথা মনে আছে? ১৫ নভেম্বর, ২০০৭ সাল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় সিডর তছনছ করে দিল সব। মারা গেল মানুষ। গবাদিপশু। লন্ডভন্ড হলো ঘরবাড়ি।
সিডরের পরদিন থেকেই ওই অঞ্চলের বন্ধুরা নেমে গেলেন ত্রাণ ও উদ্ধারকাজে।
সকালবেলা গৌরনদী (বরিশাল) বন্ধুসভার কয়েকজন বন্ধু ছুটলেন উত্তর চাঁদসী গ্রামের দিকে। গ্রামটি শহর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে।
বন্ধুরা পৌঁছে দেখেন এক শিশুর জন্ম হয়েছে সেই গ্রামে।
সিডরে ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড় সিডর শুরু হয়েছিল। আর শিশুটির জন্ম হলো রাত বারোটার দিকে। সিডর যখন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ঘরে মাত্র দুজন প্রাণী—নবজাতকের মা আর নানি।
খোলা আকাশের নিচে শিশুটিকে জড়ানোর সামান্য কাপড়ও কোথাও নেই। বন্ধুরা কী করবেন? সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা নিজেদের গায়ের শার্ট খুলে শিশুটিকে পেঁচিয়ে সরাসরি নিয়ে এলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
তারপর থেকে বন্ধুরা তিন মাস পরিবারটির খাবারদাবার, শিশুটির জামাকাপড়—সবকিছুর ব্যবস্থা করলেন। বন্ধুরা ভালোবেসে শিশুটির নাম রাখলেন তুফান। তুফান এখন ক্লাস থ্রিতে পড়ে। বন্ধুরা তো তিন মাস তুফানদের চালালেন, এবার? প্রথম আলোর পক্ষ থেকে দেওয়া হলো একটা দুধেল গাই। যাতে তাদের সংসার চলতে পারে। সংসার চলছিল ভালোই, বছর পার হতেই তুফানের বাবা সংসার ছেড়ে চলে গেলেন।
তুফানের মা এখন অন্যের জমি চাষ করেন। কৃষক। এই কাজ করেই সংসার চালান। ছেলেকে পড়ান।
গৌরনদীর বন্ধুরা ১৪ জুন তাকে রঙিন জামা পরিয়ে দেবেন। তাদের জন্য নিয়ে যাবেন চাল, ডাল, চিনি, সেমাই ইত্যাদি। আর তুফানের মায়ের জন্য একটি রঙিন শাড়ি। এ কাজে অংশ নিয়েছিলেন, জহির উদ্দিন,
পলাশ তালুকদার, শহীদ আলম পলাশ, চায়না দেবনাথ
ঝর্ণা দাশ লাবণী, সিলভিয়া মুন
ও প্রিয়াংকা

পাঞ্জাবিতে সন্তানের চিঠি
১৮ জুন রোববার বাবা দিবস। যাঁদের ক্ষমতা আছে একটি জামা কেনার, অবশ্যই বাবার জন্য।
সেই বন্ধুদের বলি, বাবার জন্য একটি পাঞ্জাবি কিনুন। একটি সাদা কাগজে লিখুন, ‘বাবা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি, ঈদ মোবারক।’
এবং এই কাগজটি পাঞ্জাবির পকেটে ভরে বাবাকে সেটি উপহার দিন। এটির নাম দিলাম, পাঞ্জাবিতে সন্তানের চিঠি।
বন্ধুরা এ বিষয়ে আগামী সংখ্যার জন্য লেখাও পাঠাতে পারেন।
লেখক: সভাপতি, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ।