আমাদের শক্তি জোগায়

ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন এক নারী
ত্রাণ নিয়ে ফিরছেন এক নারী

রাঙামাটির ভেদভেদী সনাতনপাড়ার চার কক্ষের একটি বেড়ার ঘর। ১৩ জুন ভোরে ঘরের একটি কক্ষের ওপর ধসে পড়ে পাহাড়। সেদিন সেই কক্ষে ছিলেন বাসনা মল্লিকের মেজো ছেলে লিটন মল্লিক, পুত্রবধূ চুমকি ও নাতি আয়ুষ। ঘুমন্ত অবস্থায়ই মাটিচাপা পড়েন তাঁরা। প্রাণ হারায় পুরো পরিবার। পারিবারিক অ্যালবামে একসঙ্গে তিনজনের একটি ছবি রয়েছে। পরিবারের আনন্দের একটি মুহূর্তে তোলা ওই ছবি এখন বেদনার স্মৃতি। ত্রাণ দিতে গিয়ে বাসনা মল্লিকের বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে পাই আমরা। দেখতে পাই সেই কক্ষের বিছানার ওপর এখনো কীভাবে স্তূপ হয়ে রয়েছে মাটি। এসব কান্না, এসব দৃশ্য নাড়া দেয় আমাদের। শক্তি জোগায় অসহায় মানুষের জন্য নতুন উদ্যমে কাজ করার।
১৫ জুন ভোর থেকেই সবার আগেই ত্রাণ নিয়ে ছুটেছিলাম দুর্গত এলাকায়। দাঁড়িয়েছিলাম দুর্গত মানুষের পাশে। আমরা ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছি পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাঙ্গুনিয়া, কাপ্তাই ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকায়। ১০ দিনে বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ৭০১টি পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দিয়েছি আমরা।
রাঙ্গুনিয়ার মগাইছড়ির বড়বিলের বাসিন্দা মফিজুর রহমানের সাতজনের পরিবারের পাঁচজনই মারা গেছে পাহাড়ধসে। মফিজুরের হাতে বন্ধুরা ত্রাণ তুলে দিতে গেলে তিনি আগে না নিয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত বাকি ১৯ পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দিতে বলেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে চিনিয়ে দিতেও বন্ধুদের সহযোগিতা করেন। সবাইকে দেওয়া শেষ হলে বন্ধুদের থেকে ত্রাণ নেন মফিজুর।
১৩ জুনের পাহাড়ধসের পর ১৪ জুন বিকেলে সিদ্ধান্ত হয় ত্রাণ পাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা। শুরু হলো আমাদের কাজ। প্রতি মুহূর্তেই ঢাকা থেকে বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন খোঁজখবর রাখছিলেন। ১৪ তারিখ রাতেই ত্রাণসামগ্রী কিনে প্যাকেট করা শুরু করেন চট্টগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা। সারা রাত কাজ করে সকালে এক ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে ১৫ জুন সকাল সাড়ে সাতটায় আমাদের যাত্রা শুরু হয় দুর্গত এলাকার উদ্দেশে। এভাবেই শুরু হলো আমাদের কর্মযজ্ঞ।
লেখক: সহসভাপতি, চট্টগ্রাম প্রথম আলো বন্ধুসভা