আমি খুব ভালো চা বানাই

‘আপনারা যাচ্ছেন বুঝি?’
‘জি। আপনি?’
‘আমি রাইমা। পাশের বাসায় থাকি।’
‘পাশের বাসায়...?’
আমার কথা শুনে মেয়েটি খিলখিল করে হেসে ওঠে। বলে, ‘আমি স্কার্প পরে থাকি তো, তাই আমাকে চিনতে পারছেন না।’
‘আজ স্কার্প পরেননি যে?’
‘আজ আপনারা চলে যাচ্ছেন তাই। আব্বু সব সময় পর্দা করতে বলেন। আমি ঘরের মধ্যেও পর্দা করে থাকি।’
‘ও আচ্ছা।’
ট্রাক-ভ্যানে জিনিসপত্র ওঠানো হচ্ছে। আমাকেই করতে হচ্ছে মূল তদারকিটা।
রাইমা বলল, ‘আমি যাই। বাবা এখন অফিসে যাবেন। বাবা আমাকে কী বলেছেন, জানেন? বলেছেন, কোনো ছেলের দিকে যদি চোখ তুলে তাকাই, তাহলে খুন করে ফেলবেন। কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে আমি অনেককে দেখি।’
রাইমা চলে গেছে।
বড় ভাবি এসে বলল, ‘তুমি ওকে চেনো নাকি?’
‘না। আজকেই পরিচয় হলো। অথচ তিন বছর পাশাপাশি ছিলাম।’
ভাবি বলল, ‘আমি যাই, আমাকে দেখে রাইমা তোমার সামনে আসছে না।’ ভাবি চলে যাওয়ার পর রাইমা সত্যি সত্যি আমার সামনে এল।
‘আমি দেখতে খুব সুন্দর, না?’
‘হ্যাঁ, খুব।’
সত্যিই সে ভীষণ সুন্দর। ওকে এভাবে দেখার পর মনে হলো, বাসাটা ছাড়া ঠিক হলো না।
চলে যাওয়ার সময় সে বলল, ‘আমি ফেসবুকে আছি। মনপাখি নামে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাবেন। সন্ধ্যাবেলা মনপাখিতে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম।’
রাতে ফোন।
‘চিনতে পেরেছেন? মনপাখি। আপনার ভাতিজার কাছ থেকে আমি আপনার ফোন নম্বর নিয়ে রেখেছিলাম। ও কী বলেছে, জানেন? বলেছে, কাকার নম্বর দিয়ে কী করবেন? সত্যিই তো। আপনার নম্বর দিয়ে আমি কী করব?’
নতুন বাসায় রাতে খাওয়ার সময় মাকে বললাম, ‘আমরা তো কোনো জিনিস ফেলে আসিনি। কালকে একবার গিয়ে দেখে আসা দরকার। নতুন ভাড়াটে তো দুদিন পরে উঠবে।’ মা বললেন, ‘তাহলে তো ভালোই হয়।’
বেলা এগারোটা বাজে। রাইমাদের বাসায় কলবেল বাজালাম। দরজা খুললেন ওর বাবা। আমি ভেবেছিলাম তিনি এ সময় অফিসে থাকবেন।
‘কাকে চাই?’
এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেওয়া মুশকিল। ‘আমরা আগে এখানে ছিলাম।’
‘হ্যাঁ, জানি। গতকালই তো বাসা ছাড়লে। কিছু বলবে?’
‘জি। আমরা কিছু ফেলে গেলাম কি না দেখতে এসেছি।’ রাইমার বাবা হো হো করে হেসে ওঠেন।
‘আমাদের বাসায় ফেলে গেছ?’
‘না। মানে...।’
চারতলা থেকে নামার সময়ই রাইমার ফোন।
‘বোকার মতো ও কথা বললেন কেন? কিছু ফেলে গেছেন কি না, তা আবার আমাদের বাসায় দেখতে এসেছেন। আপনার কথা শুনে আম্মু এত হেসেছেন যে আম্মুর পেটে খিল ধরে গেছে। কাল সকালে আব্বু চট্টগ্রামে যাচ্ছেন। আপনি বারোটার দিকে আসছেন। আম্মু কিন্তু আব্বুর মতো না। আপনাকে ড্রয়িং রুমে বসতে দেবেন। জানেন, আমি খুব ভালো চা বানাই।’