মনে আঁকা বন্ধুত্ব

ইমতু আর সুইটি আমাদের শিশু বিকাশকেন্দ্রে আসে দুই মাস পর পর। ইমতু এসেই টেবিলে উঠে পড়ে, আর দুই হাত ছড়িয়ে নাচতে থাকে। সুইটি বসে থাকে চুপচাপ। হাতের তালুতে লেগে থাকা কাল্পনিক ময়লা পরিষ্কার করে, সহস্রবার, করতেই থাকে। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না একবারও। এখানে আসতে আসতে চার থেকে ছয় বছর হয়ে গেল দুজনেরই। ওদের মায়েদের কান্নাভেজা প্রশ্ন, ‘আপা, আমার বাচ্চার কি অটিজম হয়েছে? ভালো হবে না?’

 ‘ইমতু, এটা তোমার বন্ধু। বলো, সুইটি কেমন আছো, কী করো। সুইটি, বন্ধুকে একটা ছবি এঁকে দেখাও। তুমি কত্ত সুন্দর ছবি আঁকো।’ আমরা যতই একটা বন্ধুত্ব পাতাতে চেষ্টা করি, ওদের কোনো সাড়া নেই। একজন শুধু নাচে, আরেকজন শুধু হাত নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

আজ ইমতু এসেছে। সুইটি আর আসবে না। ওর বাবা আসতে দেবে না আর। ইমতু টেবিলে নাচছে। হঠাৎ কী মনে হলো, বলল মাকে, ‘বন্ধু কোথায়? আমি বন্ধু যাব।’ ওর মা প্রায় চিৎকার করে উঠল, ‘আপা, আমার ছেলে কথা বলছে। ইমতু কথা বলছে।’ বিকাশকেন্দ্রের সবাই ছুটে এল। ইমতু কথা বলছে, বন্ধুত্ব ব্যাপারটা অনুভব করছে, এটা যে কী আনন্দের!

আমরা ভাইবারের সাহায্য নিই। সুইটির মা ভিডিওতে দেখাচ্ছে একটা হাতে আঁকা ছবি। একটা টেবিল, তার ওপর একটা বাচ্চা হাত ছড়িয়ে নাচছে। পাশে লেখা, ‘বনদু’।

মুঠোফোনের এক প্রান্তে একজন ‘বনদু’র ছবি আঁকছে, আরেক দিকে অন্যজন বলছে, ‘আমি বন্ধু যাব।’

আর আমরা কয়েকজন বোকা বোকা বড়রা এই বন্ধুত্বের দিকে অবাক তাকিয়ে থাকি।

আহাদ আদনান, মাতুয়াইল, ঢাকা