হাওরের কান্না

হাওরে এখন কান পাতলেই শুনতে পাবেন ফসলহারা কৃষকের বুক ভাঙা আহাজারি। ঘরে ঘরে ভাতের অভাব। নিরন্ন মানুষের হাহাকার। অতীতে এতটা নিঃস্ব, অসহায় কখনো হয়নি হাওরের মানুষ। দিন যত যাচ্ছে, সংকট তত গভীর হচ্ছে।

গত এপ্রিলে সুনামগঞ্জের সব হাওরের বোরো ধান তলিয়ে গেছে। কালবৈশাখীতে গেছে অনেকের মাথা গোঁজার ঠাঁই। মরেছে হাওরের মাছ। এখন বন্যায় যাচ্ছে আমন ধান। সঙ্গে উত্তাল ঢেউয়ে ভাঙছে ঘরবাড়ি। এবার দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না হাওরের মানুষের।

বোরো ধান গোলায় উঠলে ভরা বর্ষায় হাওরে সাত মাস উত্সব লেগে থাকে। তখন ভাত-কাপড়ের সুখ থাকে ঘরে ঘরে। জোছনারাতে বাড়ির উঠানে বসে গানের জলসা। গ্রামে গ্রামে হয় জমজমাট ভাইয়াপি কুস্তি খেলা। ভূরিভোজে চলে গরু-খাসি। বিয়ের বাদ্য বাজে এবাড়ি-ওবাড়ি। সুজন বন্ধুর গানে সুর তুলে হাওরে নৌকা ছাড়ে প্রেমিক যুবক। ঘরের বধূরা হাওর পাড়ি দিয়ে নাইয়র যান বাপের বাড়ি। আহা, কী আনন্দ! সেই হাওর আজ সুনসান। কাঁদছে মানুষ। ফসল হারিয়ে নিঃস্ব এ জনপদের সোয়া তিন লাখ কৃষক পরিবার। অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা এই মানুষগুলো যখন বাঁচার কঠিন লড়াইয়ে, তখন মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে বন্যা। বন্যায় ভাসছে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকা।

আমরা ১২ আগস্ট সকালে জেলা শহরে থেকে নৌকায় করে ত্রাণ নিয়ে রওনা দিই বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর উপজেলায়। মাথার ওপর প্রবল বর্ষণ। আকাশ ভেঙে পড়ছে। উত্তাল খরচার হাওরের ঢেউ ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। পথে পথে দুর্গত মানুষ। ঘরের ভেতর পানি। আমাদের নৌকাটি প্রথমে ভিড়ে হাওরপাড়ের বাহাদুরপুর গ্রামে। বৃষ্টিতে ভিজেই বানভাসি মানুষ ভিড় করেন। আমরা তাঁদের হাতে ত্রাণ তুলে দিই। হাওরের ঢেউ ঠেলে একের পর এক গ্রামে যেতে থাকি আমরা। বিশ্বম্ভরপুর থেকে তাহিরপুরে। এরপর ত্রাণ নিয়ে দিরাই, শাল্লা, ধরমপাশা, সর্বশেষ ১৮ আগস্ট জামালগঞ্জ উপজেলায় হাওরের গহিন গ্রামে।

লেখক: সভাপতি, সুনামগঞ্জ বন্ধুসভা