বানভাসি মরিয়ম আর খুশবু

সিলেট বন্ধুসভার ত্রাণ পেয়ে খুশি হয়েছেন বালাগঞ্জ উপজেলার এক বৃদ্ধা। ছবি: আনিস মাহমুদ
সিলেট বন্ধুসভার ত্রাণ পেয়ে খুশি হয়েছেন বালাগঞ্জ উপজেলার এক বৃদ্ধা। ছবি: আনিস মাহমুদ

বন্যায় দিনাজপুরে যেদিন শহর আর গ্রামরক্ষার বাঁধ ভাঙল, সবাই যেন নড়েচড়ে বসল। একসঙ্গে কয়েক লাখ মানুষের ঘরবাড়ি ডোবার ঘটনা দিনাজপুরে কে কোনকালে দেখেছে কে জানে। মানুষের ফসলি জমি ডুবল, ডুবে গেল ঘর, সবাই এসে জড়ো হলো এক জায়গায়। কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে, কেউ রাস্তার পাশে। ধনী-গরিব একাকার। একটুখানি থাকার জায়গা পেলে এদের জীবনে স্বস্তি নেমে আসে। কেউ কারও সঙ্গে কষ্টের কথা ভাগ করে নেয় না। সবার মনে হয়তো সমান কষ্ট, কে শুনবে কার মনের কথা! বলেই-বা কী লাভ?

যার যা ছিল, তা-ই হারিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সবাই সমান ক্ষতিগ্রস্ত। এমন পরিসংখ্যান দিলেন বানের পানিতে বাড়ি ভেসে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মরিয়ম। তিনি শহরের পশ্চিম বালুয়াডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা। মেয়ে, দিনমজুর জামাই আর দুই ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। তিনি এখন রাস্তার পাশে ত্রিপল টাঙিয়ে একটুখানি থাকার ব্যবস্থা করেছেন। মাত্র ১০ হাত জায়গার মধ্যে তিনটি গরু আর তাঁর মেয়েকে নিয়ে একসঙ্গে বাস করতে হচ্ছে। সেখানেই এক জায়গায় চুলা বানিয়ে তাতে রান্না চড়িয়ে চলে পাঁচজন মানুষের রান্না। মরিয়ম বলেন, ‘একনা জায়গা, দুজন ক্যান্নে শুই, পালা কইর‍্যা রাতে ঘুমান লাগে বাজান, মাজেমইদ্যে গরুর নাত্থি খায়া ঘুম বাইঙ্গা যায়। অবলা জন্তুগুলা ঘাসপাতা না খায়া দিন দিন হুকায়া যাইতাচে। রাইত লাগলে জামাই আর ছাওয়ারা নদী সাঁতরাইয়া বাড়ির টিনের ওপর ঘুমায়। হকালে উইঠা আবার পানি বাইঙ্গা চইল্যা আহে।’

শহরের সাদুরঘাট এলাকার টোল সংগ্রহকারী খায়রুলের মেজ মেয়ে খুশবু ক্লাস সেভেনে পড়ে। তাঁর বড় বোন সুমাইয়া ক্লাস টেন আর ছোট বোন আয়শা ক্লাস থ্রিতে পড়ে। সেই রাতে বন্যার পানি তাদের তিন বোনের সব বইপত্র ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সেদিন থেকে তারা পড়তে বসতে পারেনি। আরও কত দিন পড়তে বসার জন্য তারা বই পাবে না, কে জানে? খুশবুর মা হাসনার চোখ কান্নায় ছলছল করে। তিনি বলেন, ‘হামার ক্ষতি না হয় পুষি নেওয়া যাইবে, ছাওয়াগুলার কপালোত কী আছে, আল্লায় জানে। ছাওয়াগুলা বই পাইলে পরানডা শান্তি পাইত।’

লেখক: সংবাদদাতা, দিনাজপুর