অসুস্থদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হলো ত্রাণ

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বন্ধুসভার ব্যবস্থাপনায় গতকাল গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতিয়ার চর গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা l প্রথম আলো
প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ও বন্ধুসভার ব্যবস্থাপনায় গতকাল গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ডাকাতিয়ার চর গ্রামে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। ত্রাণ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন বন্যার্তরা l প্রথম আলো

প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে এবং বন্ধুসভার ব্যবস্থাপনায় বন্যায় বিপন্ন মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের কাজ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, দিনাজপুর, নওগাঁ ও গোয়ালন্দের বন্যাদুর্গত এলাকায় সাত শতাধিক পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। কোনো কোনো দুর্গম এলাকায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ ব্যক্তিদের ঘরে গিয়ে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা। প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:

গাইবান্ধা

গতকাল গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের ১৫০টি পরিবারের মধ্যে পরিবারপ্রতি তিন কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, এক কেজি চিড়া, এক কেজি গুড় এবং চারটি করে খাওয়ার স্যালাইন দেওয়া হয়।

গাইবান্ধা শহর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বালাসীঘাট। এখান থেকে ওই গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে নৌকাযোগে প্রায় দুই ঘণ্টা লাগে। কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কাদাপানি। এর মধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদের ঘাটে প্রথম আলোর ত্রাণের নৌকা দেখে ছুটে এলেন বন্যার্তরা। নৌকা থেকেই চাল-ডাল-চিড়া বিতরণ শুরু করলেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

নৌকা থেকে বিতরণ ছাড়াও ওই তিন গ্রামের অসুস্থ ও বৃদ্ধ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়।

এ সময় বন্ধুসভার সঙ্গে ছিলেন গাইবান্ধা বন্ধুসভার উপদেষ্টা নাহিদ হাসান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক রানা পাপুল।

ত্রাণ পেয়ে ডাকাতিয়ারচর গ্রামের গৃহবধূ জয়নব বেগম (৫৫) বললেন, ‘আট দিন থাকি বানের পানিত কষ্ট করব্যার নাগচি। কাঁয়ো এ্যাকনা ইলিপ দ্যায় নাই। তোমরা ঘরে নাও নিয়া আসি তেরান দিলেন। পায়া উপকার হইল।’

সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জের সদর উপজেলার চরাঞ্চলের কাওয়াকোলা ইউনিয়নে গতকাল ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বড় কয়রা, মহিষা কাংলা, ছোট কয়রা, সয়াশিখা এই চারটি গ্রামের ১১০টি বন্যার্ত পরিবারকে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়। প্রতি পরিবারের জন্য ছিল চার কেজি চাল, দুই কেজি চিড়া, এক কেজি ডাল, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিনি, এক কেজি আলু, দেশলাই, মোমবাতি ও খাওয়ার স্যালাইন।

ত্রাণসামগ্রী পেয়ে বড় কয়রা গ্রামের মাসুদা খাতুন বলেন, ‘বন্যায় বাড়িঘরে পানি ওঠায় এক সপ্তাহ ধইর‌্যা বাইরে মাচাল পাইড়া বাস করতিছি। কেউ খোঁজখবর নেয় নাই। এক ছটাক চালও কেউ দেয় নাই। এই প্রতম রিলিফ পাইলাম। আল্লাহ আপনাগো বাঁচাইয়া রাহুক।’

দিনভর এই ত্রাণ বিতরণে বন্ধুসভার সঙ্গে অংশ নেন নজরুল একাডেমির সভাপতি মো. হেলাল আহমেদ, সিরাজগঞ্জের ফারাজ আইয়াজ স্মৃতি পরিষদের আহ্বায়ক প্রদীপ কুমার সাহা, ডিডিপির নির্বাহী পরিচালক কাজী সোহেল রানা প্রমুখ।

নীলফামারী

গতকাল রোববার নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার খুঁটামারা ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্র পাঠ গ্রামে বন্যার্ত ৮০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

ত্রাণ পেয়ে জেলেপাড়া গ্রামের ময়না বালা দাস (৪৫) বলেন, ‘বন্যায় বাড়িঘর সব নষ্ট হয়া গেইছে। সাত দিন আশ্রয়কেন্দ্রত ছিনো, সেঠে এয়-ওয় খাবার দিয়া গেইছে, তিন দিন হয় বাড়িত গেছি, এলা কাঁয়ো হামার খবর নেয় না। তোমরা আইজ হামাক যে চাউল-ডাইল দিলেন, এইলা দিয়া হামার খুব উপকার কইরলেন।’

ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল প্রতি পরিবারের জন্য চার কেজি চাল, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ, এক কেজি চিড়া, দেড় পোয়া গুড়, এক কেজি করে আলু এবং একটি খাওয়ার স্যালাইন।

দিনাজপুর

 গতকাল রোববার দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের আরও ৭০ পরিবারের হাতে ত্রাণ তুলে দেওয়া হয়। প্রতিটি পরিবারকে দুই কেজি করে চাল, আধা কেজি চিড়া, আধা কেজি ডাল, আধা কেজি লবণ, আধা লিটার সয়াবিন, এক কেজি আলু, আধা কেজি পেঁয়াজ, দুটি মোম, একটি গ্যাসলাইট, এক পাতা প্যারাসিটামল ও দুটি করে খাওয়ার স্যালাইন দেওয়া হয়।

নতুন পাড়া খামার ঝাড়বাড়ির ৬৫ বছরের কুলছুম নেছা বলেন, ‘মাইনষে যেইল্যা দেয়, স্যাগুলা খায়া বাঁচি আচি। তেরানের ভিতি চায়া থাকার নাগে। সাত দিন থাকি আস্তাত টুকরি করি কুনমতে জীবন বাঁচায়া আচি।’

নওগাঁ

 গতকাল রোববার বন্যাদুর্গত ১৫০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে হুলিবাড়ি এলাকায় প্রতিটি পরিবারের মাঝে দুই কেজি করে চাল, এক কেজি চিড়া, এক কেজি মুড়ি, আধা কেজি লবণ, আধা কেজি গুড়, দুটি মোমবাতি, দুটি দেশলাই, খাওয়ার স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

 ত্রাণ পেয়ে হুলিবাড়ি গ্রামের ষাটোর্ধ্ব রাহেলা বিবি বলেন, ‘আজ সাত দিন ধরে বানের পানিত বন্দী হয়ে আছি। খোঁজখবর ল্যাওয়ার কোনো মানুষ নাই। ঘরবাড়ি ডুব্যা রাস্তার ওপর পড়্যা আছি। আজগাই পরথম ইলিফ পানু, কয় দিন অ্যানা প্যাট ভর‌্যা খ্যাতে পামু।’

ত্রাণ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন দীপচাঁদপুর আরএম উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শামসুল আলম, চক কালিকাপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মমতাজ বাগাতী প্রমুখ।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী)

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে দ্বিতীয় দিনের মতো গতকাল রোববারও উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। প্রখর রোদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে বন্ধুসভার সদস্যরা ছুটে যান প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

গতকাল রোববার উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নতুনপাড়া, ইদ্রিস শেখের পাড়া, মাখন রায় পাড়া এবং দৌলতদিয়া ইউনিয়নের গেন্দু বেপারী পাড়া ও ফকিরাবাদ এলাকার ৬০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ছিল চার কেজি করে চাল, এক কেজি চিড়া, ৫০০ গ্রাম মসুর ডাল, আধা লিটার সয়াবিন তেল, মোমবাতি, দেশলাই, খাওয়ার স্যালাইনসহ পানি বিশুদ্ধকরণ বড়ি। গত দুই দিনে মোট ১৬২টি পরিবারের মাঝে এসব ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

যাঁরা অর্থ সহায়তা দিলেন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫ লাখ, আবদুল হান্নান ৩০ হাজার, সোশিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ ক্লাব, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ১০ হাজার, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১ হাজার এবং সরাসরি ব্যাংকে জমা ১০ হাজার টাকা। গতকালের মোট জমা ৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত মোট জমা ১৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।