গুগল ম্যাপে পথ চেনা

চমৎকার ম্যাজিক মানেই গুগল! তথ্যপ্রযুক্তির জগতে জাদুময় আকর্ষণীয় গুগলের অনন্য একটি ফিচার গুগল ম্যাপ। মাত্র কয়েক বছর আগেও অচেনা কোথাও যেতে হলে দশজনকে জিজ্ঞেস করে রাস্তাঘাট চিনে তারপর রওনা দিতে হতো। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তি ও গুগল ম্যাপের কল্যাণে পৃথিবীর কোনো প্রান্ত এখন আর অচেনা নেই! যেখানেই যাওয়ার ইচ্ছা হোক না কেন, ম্যাপে সার্চ করলেই সঙ্গে সঙ্গে বের করে দেবে পথ। বিশ্বজুড়ে গুগল ম্যাপ জনপ্রিয় হলেও আমাদের দেশে এখনো অনেকেই এর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেনি। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক গুগল ম্যাপের বেশ কয়েকটি চমৎকার টিপস এবং ট্রিকস, যেন খুব সহজেই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে চিনতে পারেন অচেনা জায়গা। আপনি যদি হারিয়ে যান, বা কোনো রাস্তা চিনতে না পারেন, তবে গুগল ম্যাপ আপনার কাছে আলাদিনের প্রদীপসম কাজ করবে!

গুগল ম্যাপ কী?
গুগল ম্যাপস গুগল দ্বারা তৈরি একটি ওয়েব ম্যাপিং সেবা। এটি স্যাটেলাইট চিত্রাবলি, রাস্তার মানচিত্র, রাস্তার ৩৬০ প্যানোরামিক মতামত (রাস্তার দৃশ্য), রিয়েল টাইম ট্রাফিকের শর্তাদি ( গুগল ট্রাফিক) এবং পা, গাড়ি, সাইকেল বা পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কে লোকেশন জানিয়ে আমাদের সাহায্য করে। ২০০৪ সালের অক্টোবরে গুগল কর্তৃক কোম্পানিটি নির্মিত হয়েছিল, যা এটিকে একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে পরিণত করেছিল। একটি ভূসম্পত্তিগত ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন কোম্পানি এবং একটি রিয়েল টাইম ট্রাফিক বিশ্লেষকের অতিরিক্ত অধিগ্রহণের পর, গুগল ম্যাপস ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে চালু করা হয়েছিল। গুগল ম্যাপস দিয়ে কোনো জায়গার অবস্থান জানতে হলে প্রথমেই গুগল ম্যাপস (www.google.com.bd /maps) ওপেন করতে হবে।

যেকোনো জায়গার দূরত্ব মাপা
খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব কত? কিংবা আপনার কর্মস্থল থেকে বাসার? ভাবতে কঠিন শোনালেও আপনি চাইলে নিমেষেই বের করে ফেলতে পারেন যেকোনো দূরত্ব গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে।
এ জন্য আপনাকে প্রথমে যেখান থেকে দূরত্ব মাপতে চান সেই লোকেশনে ড্রপ পিন দিয়ে হোল্ড করতে হবে। তারপর ড্রপ পিনে চাপ দিলে কতগুলো অপশন আসবে, সেখান থেকে ‘Measure Distance’–এ ক্লিক করলেই আপনি দূরত্ব মাপতে পারবেন।

কোথায় আছেন প্রতি মুহূর্তে জানিয়ে দেওয়ার সুযোগ
কিছুদিন আগে রূপা বাসে চেপে খুলনায় যাচ্ছিলেন, হঠাৎ তাঁর বন্ধু আঁখি মুঠোফোনে জানতে চান তিনি এখন কোথায়? রূপা প্রথমবারের মতো খুলনা যাচ্ছেন। রাস্তাঘাট অচেনা থাকায় তিনি জানাতে পারেন না ওই মুহূর্তের লোকেশন, কিন্তু তাঁর বন্ধু আঁখি তাঁকে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে লোকেশন জানাতে বলেন, তখন রূপা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে সহজেই তাঁর সঠিক লোকেশনটা জানিয়ে দেন আঁখিকে। আসুন আমরা জেনে নিই কীভাবে আমরা প্রয়োজনীয় মুহূর্তে আমাদের লোকেশন জানাব অন্যকে। Share your location in real time নামে গুগল ম্যাপে একটি ফিচার পাওয়া যাবে। এর মাধ্যমে আপনি অন্যদের জানাতে পারবেন আপনি এখন কোথায় আছেন। এ জন্য আপনাকে মেনু থেকে Share Location–এ ক্লিক করতে হবে। তারপর ডিউরেশন সিলেক্ট করে, গুগল কনট্যাক্ট থেকে মানুষ সিলেক্ট করতে পারবেন এবং তাদের ভেতর লোকেশন শেয়ারিং শুরু করতে পারবেন।

যানজটের হালচাল
যদি ম্যাপ দেখেই জেনে নেওয়া যায় কোন রাস্তায় জ্যাম আছে আর কোন রাস্তা ফাঁকা, তাহলে নিশ্চয়ই অনেক সময় বেঁচে যেত, তাই না? সে সুযোগ করে দিতেই গুগল ম্যাপ নিয়ে এসেছে লাইভ ট্রাফিক আপডেট। এটি উন্নত বিশ্বে সেই ২০০৭ সাল থেকে চালু থাকলেও বাংলাদেশে চালু হয়েছে সম্প্রতি।
এটি ব্যবহার করতে হলে আপনাকে ম্যাপের মেনু থেকে ‘রিয়েল টাইম ট্রাফিক’-এ ক্লিক করে ‘ট্রাফিক’ অপশনে গিয়ে ‘লাইভ ট্রাফিক’ থেকে ‘টিপিক্যাল ট্রাফিক’ করে নিতে হবে। ট্রাফিক অপশনটি চালু হলে ম্যাপে রাস্তার ওপরে সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল রং দেখতে পাবেন। সবুজ রং দেখা গেলে বুঝতে পারবেন সে রাস্তায় এখন জ্যাম নেই। কমলা রং দেখা গেলে মাঝারি জ্যাম আর লাল রং থাকলে বুঝে নিতে হবে কঠিন যানজট, সুতরাং খুব সহজেই যানজট এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কোন রাস্তায় জ্যাম আর কোন রাস্তা ফাঁকা, গুগল কীভাবে সেটি বের করে? গুগল সে খবর বের করতে ‘ক্রাউড সোর্সড ডেটা’ ব্যবহার করে থাকে। অর্থাৎ রাস্তায় যত মানুষ যানবাহনে চলাচল করছে, তাদের স্মার্টফোনে যদি লোকেশন সার্ভিস অন করা থাকে, তাহলে গুগল সেগুলো থেকে ট্রাফিকের ডেটা সংগ্রহ করে ইন্ডিকেটর তৈরি করে। এর মাধ্যমে গুগল রাস্তায় থাকা গাড়ির সংখ্যা, কত দ্রুত গাড়িগুলো চলছে, সেগুলো হিসাব করে জানিয়ে দেয় জ্যামের খবরাখবর।

নতুন রাস্তা চেনা
ধরুন, আপনি কোনো এলাকায় নতুন, তখন আপনি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে খুব সহজেই সেই এলাকার রাস্তাঘাট অলিগলি চিনে ফেলতে পারবেন। গুগল ম্যাপ ব্যবহারে যেকোনো স্থান আপনি নিজে থেকে আপনার প্রয়োজনমতো খুঁজে নিতে পারবেন।

রাস্তার দৃশ্য
গুগল রাস্তার দৃশ্য একটি অতিক্রান্ত রাস্তা ট্রিপ। গ্রহের চারপাশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা যানবাহনগুলোর একটি বিশাল স্ক্রিনের সঙ্গে, তাদের লক্ষ্য বারবার যেসব অ্যাক্সেসযোগ্য সড়কে তারা খুঁজে পেতে পারে, তা ঘুরপাক খাচ্ছে, সব সময় তারা ৩৬০ ডিগ্রি ফটো নিয়ে যায়, যেখানে তারা যায়। তাদের যানবাহনগুলোর জিএসটি নির্দেশের ওপর ভিত্তি করে, গুগল তার বেস মানচিত্রের ওপর তার রাস্তার দৃশ্যের চিত্রকে আচ্ছাদন করে। রাস্তার দৃশ্য রাস্তায় এবং গন্তব্যস্থলের মাত্র একটি সিলভার প্যানোরামা ছাড়া অনেক বেশি অফার করে।
উন্নত-অপটিক্যাল অক্ষের স্বীকৃতি (ওসিআর) ক্ষমতা ব্যবহার করে, গুগল সড়ক স্বাক্ষর, ট্রাফিক লক্ষণ এবং ব্যবসায়িক নামগুলোর মতো জিনিসগুলো ‘পড়তে’ পারে। এই অতিরিক্ত রিডগুলো প্রক্রিয়াকৃত এবং নেভিগেশনাল এবং ডাইরেক্টাল ডেটাতে রূপান্তরিত করে, যাতে মানচিত্র তার ডেটাবেইসে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। গত রাতের ছবি থেকে যদি একটি রাস্তার নাম পরিবর্তিত হয়ে থাকে, তবে আরও একটি সাম্প্রতিক রাস্তার দৃশ্য ছবি এটি শনাক্ত করবে। এটিও (আংশিকভাবে) গুগলের স্থানীয় ব্যবসার বিশদ বিবরণ এর বিশাল ডেটাবেইস তৈরি করেছে। 

লোকাল গাইডসমূহ
গুগলের রয়েছে লাখ লাখ তথাকথিত স্থানীয় গাইড। স্থানীয় গাইডগুলো একটি বৈশিষ্ট্য, যা ফোরস্কয়ারের আপনাকে মনে করিয়ে দেবে এবং এটি গুগলের বেস মানচিত্রের ওপর ভিত্তি করে আরও ব্যক্তিকে তথ্য সংগ্রহের একটি স্তর সংগ্রহের চেষ্টা করছে। আপনি যখন গুগল মানচিত্রে আছেন, তখন মাই কন্ট্রিবিশনে যান এবং আপনি আপনার এলাকার বিভিন্ন স্থানে অনুসন্ধান করতে পারবেন। একটি পর্যালোচনা রেখে, কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার এবং একটি ফটো জমা দেওয়ার মাধ্যমে, আপনি এই অতিরিক্ত স্তরের ডেটাতে অবদান রাখতে পারেন। এই স্থানীয় জ্ঞান মানচিত্রকে একটি ক্যাফের ভাইবমতো জিনিস জানতে সাহায্য করে, একটি হোটেলে পার্কিং আছে কি না বা একটি রেস্টুরেন্ট বিকল্প আছে কি না, জানতে সাহায্য করে। অবদানগুলোর জন্য ফিরতিতে, ব্যবহারকারীরা গুগল ড্রাইভের বর্ধিত সঞ্চয়, যেমন পুরস্কার অর্জন করতে পারেন।

ইন্টারনেট ছাড়াই যেভাবে চালাবে গুগল ম্যাপ
এখানেই গুগল ম্যাপের তেলেসমাতি। একবার একটি এলাকার ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখলে কোনো রকম ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই জেনে নেওয়া যাবে সেই এলাকার রাস্তাঘাট—সবকিছু। পরেরবার কোথাও বেড়াতে গেলে আপনি আগে থেকেই সেই এলাকার ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখতে পারেন, যেখানেই যান—পাহাড়-পর্বত, গহিন জঙ্গল—কোথাও হারিয়ে যাওয়ার ভয় আর থাকবে না!

বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ