স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া

অষ্টম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ, স্কুল ছুটি। অনেক দিন কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় না। বিজয় দিবসে টিকলি বায়না ধরল, স্মৃতিসৌধে যাবে ফুল দিতে। সেদিন সকালবেলা লাল–সবুজ জামা পরে ও আর ওর বাবা-মা বের হলো। ওর মা বিজয়ের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে সবুজ একটা শাল পরেছে। উদ্দেশ্য স্মৃতিসৌধ হয়ে সাভারের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বাসায় ফেরা। স্মৃতিসৌধের কাছাকাছি গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গাটায় প্রচুর জ্যাম। দিনটি বেশির ভাগ শহুরে মানুষ উদ্‌যাপন করে। আর প্রচুর গাড়ি এখানে আসে।

টিকলি বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল। ফুটপাত ধরে হাঁটছিল। হঠাৎ ওর নজরে পড়ল, এক বৃদ্ধা ওকে দেখে হাসছেন। ও বৃদ্ধার কাছে গিয়ে হাসির কারণ জিজ্ঞেস করল।
বৃদ্ধা উত্তর দিলেন না। ও এবার আরেকটু কাছে গিয়ে বলল, ‘তুমি জানো আমরা এখানে কেন এসেছি?’
বৃদ্ধা বললেন, ‘জানি তো’।
ও বলল, ‘বিজয় দিবস খুব সিরিয়াস ইস্যু। এই দিন পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল মুক্তিবাহিনীর কাছে।’
‘জানি। এ জন্যই তো আমি সব হারালাম।’
‘মানে?’
‘সেই বছর আমার ভাই ছিল মুক্তিবাহিনীর একজন। ওদের ক্যাম্প ছিল আমাদের গাঁয়ের থেকে একটু দূরে। আমি মাঝেমধ্যে ওর সঙ্গে দেখা করতে যেতাম, খাবার রান্না করে নিয়ে যেতাম। একদিন আমার পিছু নিয়ে আমাগো আসমত কাকা মিলিটারিদের সেই ঠিকানা বলে দেয়। ধরা পড়ে যায় ওরা৷ আমাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। আমি বাড়ি ফিরে দেখি শুধু ছাই আর কয়লা পড়ে আছে। পালিয়েছিলাম ওখান থেকে। আর ফিরে যাইনি। এরপর দেশ স্বাধীন হলো। আমাদের ভিটেমাটিও আসমত কাকারা দখল করে নিল। আমাদের গ্রামেও থাকতে দিল না। সেই থেকে এখানে–সেখানে ভিক্ষা করি।’

টিকলি খেয়াল করল, এত শীতের মধ্যেও বৃদ্ধার গায়ে শুধু একটা ছেঁড়া ম্যাক্সি।
টিকলি ওর সোয়েটারটা খুলে বৃদ্ধাকে দিয়ে দিল, আর ফুলগুলো! বলল, ‘তোমাকেই দিলাম পুষ্পাঞ্জলি, বীরাঙ্গনা দাদু।’
এতক্ষণে গাড়ি পার্কিং করে এসে এই দৃশ্যের ছবি তুলে রাখল ওর বাবা।