রক্তদাতা রজিব

কখনো কখনো গভীর রাতেও ফোন আসে রজিবুল ইসলামের কাছে। কথাবার্তার শব্দ শুনে তাঁর মায়ের ঘুম ভেঙে যায়। মা বিছানা থেকে উঠে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দেন। রজিবকে বলেন, ‘যা, তাড়াতাড়ি যা।’ গভীর রাতে কোথায় যাবে রজিবুল? রক্ত দিতে? তাঁর মোবাইল বেজে উঠেছে গভীর রাতে। এবি পজেটিভ রক্ত দরকার। রজিবের রক্তের গ্রুপ এবি পজেটিভ। তাঁকে যেতেই হবে হাসপাতালে।

প্রথম প্রথম মা বিরক্ত হতেন। পরে মা ভেবে দেখলেন, এ তো অনেক ভালো কাজ। তাঁ​র ছেলের শরীরের রক্ত অন্যদের সুস্থ করে তু​লছে। রজিবুল একদিন বাসে কুষ্টিয়া থেকে মেহেরপুর যাচ্ছিলেন। পথে হঠাৎ​ বাস থেমে গেল। রজিবুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসচালক তাঁর পাশের সিটে এসে বসলেন। বললেন, ‘ভাই, আপনাকে আমি চিনি। আপনি আমার মাকে রক্ত দিয়েছিলেন।’

আমাদের এই রজিবুল ইসলাম ৯ বছর ধরে রক্ত দিয়ে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ৩৮ বার। শুধু কি তাই। নিজে তো দিচ্ছেনই, অন্যকেও রক্ত দিতে উৎসাহিত করছেন। প্রায় এক হাজার ৫০০ ব্যাগ রক্ত তিনি সংগ্রহ করে দিয়েছেন। তাঁকে কেউ দেখলেই মনে করেন, নিশ্চয় রক্তের সন্ধানে এসেছেন রজিবুল। অনেকেই তাঁকে বলেন, ‘রক্তচোষা রজিবুল’।

অনেক রাত। রজিবুলের মাথায় কিছুই কাজ করছে না। মুমূর্ষু রোগীর জন্য বি নেগেটিভ রক্ত দরকার। বাসা থেকে বের হয়ে একটি রিকশায় উঠলেন। পরিচিত সবাইকে ফোন দেওয়া প্রায় শেষ। কিন্তু কিছুতেই রক্ত মিলছে না। হাসপাতালের কাছাকাছি যেতেই রিকশাওয়ালা হারুন বলে উঠলেন, ‘ভাই, আমার রক্ত কি নেবে? আমার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ।’ রজিবুল অবাক। বিস্মিত। হাতে যেন তিনি চাঁদ পেলেন। হারুন রক্ত দিলেন। রজিবুল বাইরে গেলেন হারুনের জন্য গ্লুকোজের পানি আনতে। এসে দেখলেন হারুন নেই। তারপর থেকে রজিবুল খুঁজছেন হারুনকে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনই কত কত ঘটনা রজিবুলের ঝুড়িতে। সেসব লিখলে যে বন্ধুসভার পৃষ্ঠা ভরে যাবে।