শর্মিলা খালামণি

শর্মিলা খালামণি
জাহানারা আক্তার
সদস্য, নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভা

রোকাইয়া এখন পড়েন অনার্সে। নারায়ণগঞ্জে সরকারি তোলারাম কলেজে। ক্লাস এইটে রোকাইয়ার পড়াশোনা থেমে গিয়েছিল। তখন জাহানারা আক্তার শর্মিলা রোকাইয়ার পাশে এসে দাঁড়ালেন। ‘তোমাকে পড়তে হবে।’ সেই থেকে শুরু। এখন তো সে অনার্সের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার সব খরচ বহন করেন শর্মিলা।

শুধু রোকাইয়ার পাশেই না, আরও পাঁচজনের পাশে আছেন আমাদের এ বন্ধু। এবার দুই এতিম শিশুকে ভর্তি করিয়েছেন স্কুলে। ক্লাস ওয়ানে। নিয়েছেন তাদের দায়িত্বও।
রবিউল এখন পড়ে ক্লাস এইটে। ক্লাস থ্রি থেকে শর্মিলা তার সব পড়াশোনার খরচ বহন করছেন।

আরেকটি ছেলের বাবা নেই। অভাবের সংসারে। স্কুলে পড়াশোনার সুযোগ নেই। জাহানারা আক্তার শর্মিলা তাঁর দায়িত্ব নিতে চাইলেন। আলম (ছদ্মনাম) কিছুতেই অন্যের সাহায্যে পড়াশোনা করবে না। তাহলে কী করা যায়? ছেলেটা পড়াশোনা না করেই বড় হয়ে উঠবে!

আলমের মায়ের সঙ্গে শর্মিলা আলাদাভাবে কথা বললেন। বললেন, ‘আমি আপনাকে গোপনে পড়াশোনার খরচ দেব। আপনি ওকে ভর্তি করিয়ে দেন।’
তা–ই হলো। আলম এখন নিয়মিত স্কুলে যায়, পড়াশোনা করে। ভালো ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণি থেকে শর্মিলা আলমের দায়িত্ব নিয়েছেন। আগামী বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে।
শর্মিলার টাকার উৎসের কথা বলি। তিনি টিউশনি করেন। মাসে আয় সাত-আট হাজার টাকা। পুরো টাকাটাই তিনি দিয়ে দেন এদের পড়াশোনার কাজে। নারায়ণগঞ্জ বন্ধুসভার কয়েকজন বন্ধুও শর্মিলার পাশে থাকেন।

শর্মিলা যাদের পড়াশোনার খরচ চালান, তারা তাঁকে ডাকেন ‘শর্মিলা খালামণি’ বলে। খালামণি অন্য আরেকটি কাজও করছেন। সেটি হলো যাঁরা গার্মেন্টসে কাজ করেন, নিরক্ষর—তাঁদের কয়েকজনকে আদর্শলিপি পড়িয়েছেন। অক্ষরজ্ঞান দিয়েছেন। তিনি নিজেও শিক্ষার্থী। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স করেছেন। শর্মিলার প্রত্যাশা, তাঁর এই ছেলেমেয়েরাও সবাই অনার্স-মাস্টার্স করবে।

লেখক: সভাপতি, প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদ