বন্ধু থেকে প্রতিনিধি

ফাইল ছবি : বন্ধুসভা ডেস্ক
ফাইল ছবি : বন্ধুসভা ডেস্ক

বন্ধুদের নিয়ে গঠিত বন্ধুসভা। যে কেউ হতে পারেন এই বন্ধু। বন্ধুসভা অন্য যে কারও জন্য একটি পাঠক সংগঠন। কিন্তু আমার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু। একটি সামাজিক আন্দোলনের নাম। কারণ বন্ধুসভা একমাত্র সংগঠন যা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে, মাদকবিরোধী আন্দোলন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, অ্যাসিড আক্রান্ত নারী ও ইভ টিজিংয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস জোগায়। সিডর, বন্যা, টর্নেডোসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। তরুণদের মধ্যে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে। বন্ধুসভার কাজের পরিধি অনেক বড়—শব্দে বা বাক্যে শেষ করা যাবে না। সবচেয়ে বড় সংগঠন বন্ধুসভা।

যতটুকু আমার মনে পড়ে, যখন ছোট ছিলাম বা স্কুলে পড়তাম, সে সময় ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ ও ১৬ ডিসেম্বর—এই জাতীয় দিবসগুলোর গুরুত্ব তেমন একটা বুঝতাম না। এমনিতেই দিবসগুলোতে শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধে আসা-যাওয়া হতো। কিন্তু সেখানে যাওয়া প্রতিটি বাঙালির দায়িত্ব ও কর্তব্য এটা আগে এতটা বুঝতাম না। কলেজে পড়াকালে বন্ধুসভার সঙ্গে সম্পৃক্ত হই। সঙ্গে সঙ্গে দিবসগুলোর গুরুত্ব ও দায়িত্ব বুঝতে শুরু করি। আর ছোটবেলা থেকেই সমাজের জন্য কিছু করা, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা চালিয়ে রেখেছিলাম। যখন শুনি বন্ধুসভা মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে, অনেক ভালো লেগেছে। সেই যে বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হলাম—দীর্ঘ ১৫–১৬ বছর ধরে বন্ধুসভার সঙ্গে এখনো আছি। থাকতে চাই আজীবন। মানুষ মনে করতে পারে বন্ধুসভা আর দশ-পাঁচটা সংগঠনের মতোই। কিন্তু না। বন্ধুসভা শুধু একটি সংগঠন নয়, একটি সামাজিক আন্দোলনের শক্তির নাম।
বন্ধুসভা নেতৃত্ব শেখায়। বন্ধুসভা জীবনকে গড়তে শেখায়। নিজের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করে। নতুন করে স্বপ্ন বুনতে সহায়তা করে। দায়িত্বশীলতা, সচেতনতা ও কর্তব্যবোধ জাগ্রত করে। বন্ধুসভায় ইতিবাচক চিন্তার প্রসার ঘটে। বন্ধুসভা নিয়ে আমার একটা বাক্য, নিজেকে চিনতে ও জানতে চাইলে, বন্ধুসভায় যুক্ত হতে হবে। তাহলে যে কেউ সুন্দর চিন্তার দক্ষ মানুষ হয়ে উঠবে। বন্ধুসভার সদস্য হওয়া মানেই হলো পুরো দেশের বন্ধুসভার অন্যান্য বন্ধুসভার সদস্যদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ পাওয়া। দেশটা হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব।
২০০৪ কিংবা ২০০৫ সালে বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত হই। তখন আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকের ছাত্র। ২০০৬–০৭ সালের দিকে বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। টানা পাঁচ বছর বন্ধুসভার এই পদে ছিলাম।
আজও মনে পড়ে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাস। বন্ধুসভার প্রাণভোমরা সাইদুজ্জামান রওশন ভাইয়ের ফোন। ঢাকায় যেতে বললেন। আমি তখন ঢাকা কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে¯স্নাতকোত্তরের পরীক্ষার্থী। ১৭ জানুয়ারি দুপুরে রওশন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। রওশন ভাইয়ের নির্দেশে প্রথমবার কারওয়ান বাজার সিএ ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রথম আলোর নিউজ বিভাগে প্রবেশ করি। সে সময় বিশাল বাংলার সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেস ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করলাম। ওয়ারেস ভাই কী যেন ঘণ্টাখানেক বললেন। মনে নেই। শুধু মনে আছে আপনি পারবেন, কাল থেকে নিউজ পাঠাবেন। তাঁর আন্তরিকতায় বেশ খুশি হয়েছিলাম। তারপর রওশন ভাই কীভাবে কী করতে হবে—দিকনির্দেশনা দিলেন।
১৮ জানুয়ারি বন্ধুসভার বন্ধু থেকে প্রথম আলোর সংবাদদাতা হিসেবে মাঠে নামি। ছয় মাস পর প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন প্রথম আলোর সম্পাক ।
২০১৬ সালের দেশসেরা প্রতিনিধির পুরস্কার পেয়েছি। ২০১৮ সালের এমআরডিআই ও ইন্টারনিউজ কর্তৃক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তিন মাসের ফেলোশিপের জন্য মনোনীত হয়েছি। প্রথম আলো শুধু একটি দৈনিক কাগজ নয়, এর চেয়ে বেশি কিছু। একটা সামাজিক আন্দোলনের নাম প্রথম আলো। প্রথম আলো আজ আমার পরিবার। প্রথম আলোর সব বিভাগ থেকে অনেক আদর, স্নেহ ও ভালোবাসা পেয়েছি। সব সময় চেষ্টা করেছি এবং এখনো করছি একনিষ্ঠ হয়ে কাজ করার, সততা ধরে রাখার। এখনো এই চেষ্টা করে যাচ্ছি—মতি ভাই, রওশন ভাই ও বিশাল বাংলার সম্পাদক তুহিন সাইফুল্লাহ ভাইসহ সবার আস্থা যেন ধরে রাখতে পারি। এসব কোনো কিছুই সম্ভব হতো না যদি রওশন ভাই সেদিন ফোন না দিতেন। রওশন ভাইকে ধন্যবাদ। কারণ আপনার সুবাদে আমি প্রথম আলোর মতো সুমানধর্মী এত বড় পরিবারের সদস্য হতে পেরেছি।

প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি