লেখাজোখার কারখানাতে
রবীন্দ্রনাথের একটি গান আছে গীতবিতান-এ, যেখানে লেখাজোখার কারখানা নিয়ে তাঁর কিছু মন্তব্য আছে। রবীন্দ্রনাথ কবিতার বর্ণনা দিয়েছেন, ছোটগল্পের সংজ্ঞা দিয়েছেন, বলেছেন, ‘সহজ কথা যায় না বলা সহজে।’ খাঁটি কথাই বটে। সব কবি-লেখক এটি মানবেন। ভালো লেখকেরা এটি মেনে চেষ্টা করবেন সহজে লিখতে, তবে সহজে মানে তাতে যে সৌন্দর্য বা স্টাইল থাকবে না, তা নয়। সৌন্দর্য ও অভিঘাত—দুই-ই থাকবে। আর খারাপ লেখকেরা যা করেন; তা অন্য প্রসঙ্গে বলা রবীন্দ্রনাথের একটি উক্তিরই প্রতিফলন—অনেক কথা যাও যে ব’লে কোনো কথা না বলি। খারাপ লেখক অতিলেখনের দোষে দুষ্ট। ভালো লেখালেখিটা দা ভিঞ্চির মোনালিসা ছবির মতো—যেটুক আছে, তা-ই যথেষ্ট—সর্বোচ্চ এবং সর্বোত্তম। এর থেকে একটু বেশি হলেই মুশকিল। ভালো লেখক একটা ভারসাম্য মানেন, কতটা লিখতে হবে এবং লিখতে হবে না, সে বোধটা তাঁর প্রবল।
সৃষ্টিশীল লেখালেখি কীভাবে করতে হয়, কীভাবে একটি গল্প অথবা উপন্যাসের কলকবজা জোগাড় করে অথবা তৈরি করে জোড়া দিতে হয়, বাজিয়ে দেখতে হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট নিয়ম অথবা তত্ত্ব নেই। ফলে এসব ‘শেখানো’ যায় না, হাতে-কলমে করে দেখানো যায় না। যা করা যায় তা হচ্ছে, অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান। একজন কবি অথবা কথাসাহিত্যিক কীভাবে লেখেন, কোন পথে উঠে আসে তাঁর নির্মাণচিন্তা, কীভাবে কবিতা-গল্পের বিষয়-আশয় আর শৈলীর বিষয়গুলো তিনি নিষ্পত্তি করেন, সেসব নিয়ে তিনি আলোচনা করতে পারেন। এ অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়াটা অনেক সময় তরুণ কবি-লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। পশ্চিমের অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃজনশীল লেখালেখির ওপর পাঠদান করা হয়। প্রচুর শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠিত লেখকের কাছ থেকে ভালো লেখার উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে পারেন, অনেক কৌশলও রপ্ত করতে পারেন। এরপরও এ কথা বলা যায় না, শুধু ওই সব পাঠ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে কেউ লেখক হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে ফেলেন। দু-একটি ব্যতিক্রম নিশ্চয় আছে, তবে দেখা যাবে ওই সব ব্যতিক্রম সৃজনশীল লেখালেখির কোর্স না করলেও হয়তো লেখক হিসেবে একদিন প্রতিষ্ঠা পেতেন। তবে এ কথা অস্বীকার করারও উপায় নেই যে সৃজনশীল লেখার পেছনে চিন্তার যে জায়গাটা থাকে, গল্প-উপন্যাসের কাহিনিবিন্যাস, চরিত্র নির্মাণ এবং ঘটনাপরম্পরায় অনিবার্যতাকে শক্তিশালী করতে যে শৃঙ্খলার প্রয়োজন হয় এবং ভাষাগত দক্ষতা ও উৎকর্ষের যে আবশ্যকতা থাকে, সৃজনশীল লেখালেখির কোর্স থেকে পাওয়া প্রশিক্ষণ তা অনেকটাই জাগিয়ে দেয়।
অনেক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিস্টার পড়াতে গিয়ে সৃজনশীল লেখালেখির কার্যক্রম সম্পর্কে আমার প্রথম প্রত্যক্ষ পরিচয় হয়। সেই কার্যক্রমে অংশ নিতে এসেছিলেন সে দেশের বিখ্যাত ঔপন্যাসিক রোনাল্ড সুকেনিক। উত্তর আধুনিক লেখক হিসেবেই তাঁর পরিচিতি সুপ্রতিষ্ঠিত। তিন দিন তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন এবং শুধু কথা বলেছিলেন। ওই কার্যক্রমের পরিচালকের আমন্ত্রণ পেয়ে এক দুপুরে আমিও ঢুকে পড়েছিলাম তাঁর ক্লাসে। তিনি শিক্ষার্থীদের তিনটি কথা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন। তাঁর প্রথম কথা ছিল, যদি লিখতে চাও, পড়তে হবে। দ্বিতীয় কথা, যদি লিখতে চাও, জীবনটাকে জানতে হবে, আর তৃতীয় কথা ছিল, লেখালেখির নিয়মগুলো প্রথমে নিজের মতো আয়ত্ত করে নিয়ে পরে প্রয়োজনমতো ভাঙতে হবে। আমাকে কিছু বলার আমন্ত্রণ জানালে আমি বলেছিলাম, কথাগুলো আমারও এবং একটু যোগ করে এটুকু বলেছিলাম, চতুর্থ একটি কথাও হতে পারে, কোনো লেখক থেকে অনুপ্রেরণা পেলেও তাঁকে অনুসরণ করা যাবে না। অনুসরণ কখনো মূলকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। সুকেনিক মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়েছিলেন।
সুকেনিক এরপর নিজের ও হেমিংওয়ে-ফকনার-হেনরি জেমসের লেখালেখি নিয়ে বলেছিলেন। ছোটগল্প নিয়ে তাঁর একটি মন্তব্য এখনো কানে বাজে। তিনি বলেছিলেন, খুব বড় একটা জীবনধারার বাসনা থেকে এগোলে ছোটগল্পের কেন্দ্রে যাওয়া সহজ হয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, রবীন্দ্রনাথের ‘পোস্টমাস্টর’-এর রতন অথবা ‘হৈমন্তী’তে হৈমন্তীর জীবন কি খুব বড় জীবন? এর উত্তরে আরেকটি প্রশ্ন করা যায়, বড় না হলে তাদের আমরা ভুলতে পারি না কেন? এই বড়ত্ব বস্তুর নয়, বৈভবের নয়—এই বড়ত্ব কল্পনা। একটি ছোট মেয়ে যখন আমাদের মনটা অধিকার করে নেয়, তখন তা সে করে কল্পনার বড়ত্বের জোরে। বড় জীবন বলতে সুকেনিক বুঝিয়েছিলেন সেই কল্পনার বিষয়টি, যা একটি ছোটগল্পকে একটি বড়সড় হীরকখণ্ডের মহিমা দিতে পারে।
সৃজনশীল লেখালেখি—আরও নির্দিষ্ট করে বললে কী করে গল্প-উপন্যাস লিখতে হয়—এ বিষয়ে আমাকে যখন অভিজ্ঞতা ভাগ করার জন্য বলা হলো, আমার মনে হলো, সুকেনিকের মতো আমিও তাহলে কয়েকটি কথাকে আমার মতো করেই বলি। তাহলে আর ‘শেখানো’র ব্যাপারটা থাকে না, আবার বক্তৃতা দেওয়ার ভাবটাও থাকে না। আগেই বলেছি, এসব শেখানো যায় না, যদিও লেখার শক্তিটা জাগানোর ক্ষেত্রে কিছুটা অনুপ্রেরণা সব সময় দেওয়াই যায়।
সুকেনিকের কথাগুলো আমার মতো করে যদি বলি, তাহলে তাঁর তিনটির সঙ্গে আমার আরও তিনটি কথা জুড়ে দেওয়া যায়। তাহলে এ রকম বলা যায়:
একটা প্রস্তুতিপর্ব থাকা ভালো। আজ সকালে ভাবলাম, আমি কবি হব অথবা কথাসাহিত্যিক হব এবং আজকেই লেখা শুরু করে দিলাম, এ রকম না ভেবে যদি একটা প্রস্তুতিপর্বে ঢুকে পড়া যায়, তাহলে ফলটা ভালো হয়। এই প্রস্তুতিপর্বটা হবে পড়ার। প্রচুর পড়তে হবে। রবীন্দ্রনাথের পড়াশোনাটা ছিল ব্যাপক; এমনকি নজরুল, যিনি দারিদ্র্যের সঙ্গে সারা জীবন যুদ্ধ করেছেন, স্বভাবে ছিলেন উড়ুক্কু, তিনিও প্রচুর পড়েছেন। লালন হয়তো বই পড়েননি, কিন্তু পৃথিবীটা পড়েছেন, মানুষকে পড়েছেন, তাঁর নিজের মতো করে যত বেশি পড়া, তত বেশি জানা—এটি কোনো আপ্তবাক্য নয়, এটি জীবনসত্য। আমি পৃথিবীর পাঁচজন গল্পকারের পাঁচটা গল্প পড়ি, শুধু যে পাঁচ রকম জীবন আমি দেখতে পাব, তা নয়, ওই পাঁচ লেখকের মিল-অমিল, চিন্তাভাবনাশৈলী, মেজাজ ও গল্প বলার ভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারব। এই পাঁচ যদি পাঁচ শয়ে নিয়ে যেতে পারি, তাহলে আমার অভিজ্ঞতার ঝুলিটা যে কত বড় হতে পারে, তা তো সহজেই অনুমেয়।
তবে পড়াশোনার জায়গাটা শুধু গল্প-উপন্যাসে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। পড়তে হবে দর্শন থেকে মহাকাশবিজ্ঞান পর্যন্ত। পড়া মানুষের অভিজ্ঞতার বা গল্প-উপন্যাসের বর্ণনায়, বিশ্বাসযোগ্যতা আনতে জানাশোনার বিকল্প নেই। তা ছাড়া বিজ্ঞানের একটা সূত্র, অর্থনীতির একটা তত্ত্ব যে হঠাৎ কোনো উপকারে চলে আসে গল্পকারের, তা আগে থেকে বলা যায় না। কাজেই পড়তে হবে, ভাবতে হবে, নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। সৃজনশীল লেখার পেছনে মননশীলতার একটা ভূমিকা থাকে। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একটি উপন্যাস লিখেছেন, নিউজ অব আ কিডন্যাপি। এ উপন্যাস লেখার আগে ছয় মাস ধরে পড়াশোনা করেছেন রাজনৈতিক ও উগ্রবাদী অপহরণ নিয়ে, মিডিয়া নিয়ে। তাঁর মতো বড় লেখকও ভেবেছেন, প্রস্তুতির প্রয়োজন।
জীবনটাকে জানতে হবে
ভারতীয় ঔপন্যাসিক মূলক রাজ আনন্দ ইংরেজি ভাষাকেই বেছে নিয়েছিলেন সাহিত্যচর্চার মাধ্যম হিসেবে এবং লিখেছেন সমাজের নিম্নবর্গীয় বলে কথিত অবজ্ঞা আর অবহেলার শিকার মানুষজনকে নিয়ে। একটি কথা বলতেন, হাতির দাঁতের মিনারে বসে রাস্তার জীবনকে জানা যায় না। রাস্তার জীবন মানে বাস্তব, কঠিন বাস্তব। একজন লেখককে দৃষ্টি দিতে হবে জীবনের ভেতরে। যতখানি পারা যায়, জীবনকে জানতে হবে। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাত্যহিকতার বিষয়টি, প্রতিদিনের সংগ্রামের দিকটি মানুষে মানুষে সম্পর্কের সম্পূর্ণ অঞ্চলটি। অবশ্য মানুষকে জানতে হবে কারও ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দেওয়ার প্রয়োজন নেই; যা প্রয়োজন তা খুব প্রখর, সংবেদী, সন্ধানী একজোড়া চোখ। এই চোখ থাকলে জীবনের বহু দূরে দৃষ্টি দেওয়া যায়। বাস্তবকে তিন মাত্রায় তুলে এনে একে পরীক্ষা করা যায়, সময়-ইতিহাসের অনেক দূরের অঞ্চলটাতেও আলো ফেলা যায়।
লেখার নানান শৈলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে
সুকেনিক নিয়ম জেনে নিয়ম ভাঙার যে কথা বলেছিলেন, তা আরেকটু ঘুরিয়ে এ রকম বলা যায়, যত বেশি জানা যাবে, লেখালেখির নানা কৌশল সম্পর্কে তত বেশি সেসব থেকে বেরিয়ে অথবা সেসব থেকে আলাদা নিজস্ব একটি কৌশল তৈরি করা যাবে। অনেক কৌশল বা শৈলী সম্পর্কে ভালোভাবে জানা হলে একটা বিকল্প অথবা সমান্তরাল কৌশল বা শৈলী নিজ থেকেও ধরা দিতে পারে। একটি ব্যক্তিগত উদাহরণ এর একটি সহজ ব্যাখ্যা হতে পারে। অনেক বছর আগে যখন লাতিন আমেরিকার কথাসাহিত্যিকদের লেখা পড়ে জাদুবাস্তবতার বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত হই, আমার মনে হচ্ছিল, এটি তো অপরিচিত কিছু নয়। জাদুবাস্তবতা আমাদের রূপকথায় আছে, অনেক লেখকের গল্প-উপন্যাসে আছে। সেগুলো নিয়ে ভাবতে বসে মনে হলো, জাদুবাস্তবতার জন্য ওই সব লেখকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না, যদিও তাঁদের ব্যাখ্যাটা জানা থাকলে এই ধারণার বৈচিত্র্যটি ধরা পড়ে। আমি নিজে যখন গল্প লিখতে শুরু করি, আমাদের জাদুবাস্তবতাকে আমি আমার মতো করে পরিবেশন করেছি। আমার মনে হয়েছে, অনুপ্রেরণা, গার্সিয়া মার্কেস—হোর্হে বোর্হেস থেকে পেয়েছি বটে, কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলিয়ে নিজস্ব একটা আখ্যান আমি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কতখানি সফল হয়েছি, সেটি ভিন্ন কথা; কিন্তু একটা নতুন রাস্তায় তো আমি পা রেখেছি।
অনেক সময় ধোলাই খালের কর্মকুশলীদের মতো নানান জায়গা থেকে নেওয়া দিব্যি একটি নতুন জিনিস তৈরি করা যায়। তবে এ জন্য প্রয়োজন কল্পনা।
কল্পনার জগৎটা তাই বিস্তৃত এবং অবারিত করতে হবে
শুধু যে কবিদের কল্পনাশক্তি থাকতে হয়, তা নয়। সব সৃজনশীল লেখকের ক্ষেত্রেই কল্পনার একটি বড় ভূমিকা থাকতে হয়। শুধু সৃজনশীলই-বা বলি কেন, বিজ্ঞানীদেরও কল্পনা থাকা চাই, চাই অর্থনীতিবিদদের। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, একজন বিজ্ঞানীকে আরেকজন বিজ্ঞানী থেকে আলাদা করবেন কীভাবে? হকিং কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দিয়েছিলেন, একটা বড় প্রভেদ গড়ে দেয় কল্পনাশক্তি। একজন লেখক চারদিকের জীবন দিয়ে বাস্তবকে ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, তারপর কল্পনার রসায়নে সেগুলোকে জারিত করেন। এই রসায়ন একটা মৌলিক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে পর্যবেক্ষণে আসা বিষয়গুলোতে। আমি নিজে আমার অনেক গল্পের উপাদান খুঁজে পাই খবরের কাগজের পৃষ্ঠায়, চারদিকের জীবন। সেগুলোর ওপর কল্পনার রং যখন চড়াই, দেখি তারা বদলে যায়। বাস্তবের হুবহু বর্ণনার চেয়ে তাতে কল্পনার খানিকটা মিশেল দিলে তা অনেক আকর্ষণীয় হয়ে দাঁড়ায়। তা ছাড়া বাস্তবের পর্যবেক্ষণের কতটা নিতে হবে, কতটা বাদ দিতে হবে এবং কতটা নতুন করে সংযোজন করতে হবে—এই যোগ-বিয়োগের বিষয়গুলো সহজ করে দিতে পারে সৃষ্টিশীল কল্পনা।
অনুপ্রেরণা ভালো, অনুসরণ নয়, অনুকরণ তো নয়ই; প্রথমে যে কথা, পড়তে হবে, তাতে একটা লাভ হয়—অনেক অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। অনুপ্রেরণা ভালো, কিন্তু কোনো লেখককে অনুসরণ করা ভালো কথা নয়। অনেক গল্পকারকে দেখি, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে অনুকরণ করছেন। এঁদের গল্প চার-পাঁচ লাইন পড়ে রেখে দিতে হয়। ওয়ালীউল্লাহ থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়ার অনেক কিছু আছে—তাঁর গ্রামদর্শন, জীবনপাঠ, জটিল মনস্তত্ত্ব, উন্মোচন। কিন্তু ঠিক তাঁর মতো বলে এসব করতে গেলে বিপত্তি ঘটবে। তাঁর ভাষার অনুকরণ করলে কোনো দিনই একটা গণ্ডি থেকে বেরোনো যাবে না।
ভাষা হতে হবে নিজস্ব
ভাষার প্রসঙ্গ যখন এল, তা দিয়েই শেষ করি। আমরা সবাই একই ভাষায় কথা বললেও সবারই কথা বলার ভঙ্গি আলাদা। সে রকম লেখার ক্ষেত্রেও ভাষাটা নিজস্ব হওয়া চাই। এ জন্য অনেক ভাবতে হবে; লিখতে হবে। একই কথা অনেকভাবে যে বলা যায়, সেটি রপ্ত করতে হবে। বড় লেখকেরা কীভাবে ভাষার ওপর তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন, তা যদি বোঝা যায়, কাজটা সহজ হয়।
এর বাইরেও যা প্রয়োজন, তা হচ্ছে একটি গল্প নিয়ে ভাবতে হবে, তার পেছনে সময় দিতে হবে। সৈয়দ শামসুল হক বলেন, একটি গল্প বা উপন্যাস প্রথমে তিনি তাঁর ‘করোটির ভেতর’ লিখে নেন। অর্থাৎ মাথার ভেতরে। একটু একটু করে। এটি একটি চমৎকার উপায়।
গল্প-উপন্যাসের সফলতা নির্ভর করে এদের ভেতরে কতটা টান তৈরি করা যায়, তার ওপর। এ জন্য খুব বেশি না লিখে সময় নিয়ে একটি ভালো লেখাই যথেষ্ট। এক বছরের মধ্যে দুটি গল্পগ্রন্থ অথবা উপন্যাস লিখে ফেলতে হবে—এ রকম ভাবা ঠিক নয়।
এক বছরে একটি ভালো গল্প যদি লেখা যায়, তাহলে তা-ই হতে পারে বড় একটি অর্জন। সৃজনশীল লেখায় তাড়াহুড়ো থাকা উচিত নয়।
সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: কথাসাহিত্যিক। অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের প্রকাশনা তারুণ্য, পঞ্চম সংখ্যা, অক্টোবর ২০১৫ থেকে নেওয়া।