নেতৃত্ব-উদ্যোক্তা-জীবন উপভোগের কর্মশালা

আমরা দৌড়াচ্ছি। পরের দিনের জন্য। কিন্তু পরের দিন কী হবে জানি না। কিন্তু ছুটে বেড়াচ্ছি। কালকের কথা ভেবে আজকের দিনের আয়োজনগুলোকে অবহেলা করছি। কিন্তু পরের দিনটা না–ও আসতে পারে। তাহলে কেন এত দৌড়াচ্ছি। আসলে আমরা কী চাই!

বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অুষ্ঠানে কথা ব​লছেন ডা. আহমেদ হেলাল
বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অুষ্ঠানে কথা ব​লছেন ডা. আহমেদ হেলাল


‘প্রযুক্তিগত মানুষদের নিজের প্রযুক্তিতে হারিয়ে যেতে নেই। নিশ্চয়ই সে জীবনকে উপলব্ধি করতে সক্ষম। জীবন হলো শিল্প, নাটক, সংগীত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানুষ।’ কথাগুলো স্থপতি ফজলুর রহমান খানের। যিনি ১৯৭০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে ওই সময়ের সর্বোচ্চ ১১০ তলা ভবনের নকশা ও গঠনকৌশল প্রণয়ন করেন। একজন স্থপতি হয়ে তিনি বলে গিয়েছেন, জীবন কী, কীভাবে জীবন উপভোগ করতে হবে। নিজের পেশার মধ্যে ঢুবে থাকলেই কেবল হবে না।
তাহলে কী করলে আমরা ভালো থাকব! কী করলে জীবনটাকে উপভোগ করা যাবে! আমি কীভাবে নিজেকে ভালো রাখব! সেই সঙ্গে আরও কিছু মানুষকে, কিছু পরিবারকে ভালো রাখব!
    
এ জন্য প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় পরিচালনা পরিষদ গত ২৬ মার্চ আয়োজন করে দিনব্যাপী কর্মশালার। তিনটি ভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল, আমরা কীভাবে নেতৃত্ব দিতে পারব। কীভাবে নেতৃত্বের গুণাবলি তৈরি হয়। কীভাবে একজন মানুষ অন্য মানুষের দায়িত্ব নিতে পারে। একজন চাকরি না করে চাকরি দিতে পারে। হ্যাঁ, ঠিক ধরে ফেলেছেন। কীভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়। কীভাবে জীবনকে উপলব্ধি করা যায়। তাহলে প্রতিটি বিষয়ভিত্তিক আলাদা আলোচনা করা যাক।

(১) তুমি কি নেতৃত্ব দিতে চাও?
এ বিষয়ে আলোচনা করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল।
বিষয়টি শুনেই মনে হতে পারে, আমি নেতা হতে চাইলে আমাকে এমন কর্মশালায় অংশ নিতে হবে। কিংবা এ কর্মশালায় অংশ নিলেই আমি নেতা হয়ে উঠব। আমাকে সবাই মানবে। আমার মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি সৃষ্টি হবে। যদি এমন ভেবে থাকেন তাহলে বলব, ‘না’। এমন ১০০টা কর্মশালা করেও হয়তো আপনি নেতা হয়ে উঠবেন না। কারণ আপনার নেতৃত্বের গুণ তৈরি হতে পারে আপনার পরিবার থেকে। আপনার নেতৃত্ব তৈরি হতে পারে আপনার স্কুল থেকে। কলেজ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হতে পারে আপনার চারপাশের পরিবেশ থেকে। একজন নেতা সব সময় সামনে থেকেই তাঁর অনুসারীদের পথ দেখান না। কখনো কখনো পেছন থেকে। পাশে থেকে। আবার কখনো মাঝ থেকেও দেখান। কখন কোথা থেকে নেতা নেতৃত্ব দেবেন, তেমন কোনো ধারাবাহিকতা নেই। কোনো লিখিত নথি না–ও থাকতে পারে।

একজন নেতাকে অবশ্যই শারীরিকভাবে সক্ষম হতে হবে। নেতা কোনো কাজে সক্ষম হলে, অনুসারী তাঁর থেকে অনুপ্রাণিত হবেন। সাধারণত আমরা যাঁদের নেতা হিসেবে মানি, তাঁরা প্রত্যেকেই শারীরিকভাবে সক্ষম।
একজন নেতাকে অবশ্যই বুদ্ধিমান হতে হবে। তাঁর অনুসারীদের সুবিধার্থে তাঁর বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন। যেমন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, তাজউদ্দীন আহমদ ছিলেন তুখোড় বুদ্ধিমান।
একজন নেতার কথা বলায় পারদর্শী হওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হোক লিখিত অথবা অলিখিত। ৭ মার্চের ভাষণের কথা আমাদের কারও অজানা নেই। বঙ্গবন্ধুর সেই অলিখিত বক্তব্য বিশ্বদরবারে স্থান করে নিয়েছে। নেতাকে খেয়াল রাখতে হবে তিনি যেন স্থান-কাল-পাত্র পরিস্থিতি বুঝে কথা বলেন। তার কথা-কাজ-উদ্যোগ যেন সময়োপযোগী হয়। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত-কর্মসূচির জন্য বিশ্বজুড়ে তাঁকে বাহবা জানিয়ে লেখালেখি হচ্ছে।

কাউকে সম্মান করলে সম্মান কমে না, বরং বাড়ে। সে জন্য নেতৃত্বের অন্যতম গুণাবলি অন্য মানুষের প্রতি সম্মানবোধ। অন্য নেতাকে সম্মান করা। একজন নেতা তাঁর কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন। নিজে উজ্জীবিত থেকে তাঁর অনুসারীদের উজ্জীবিত করবেন। যেমন করেছিলেন কমরেড মণি সিং। অনুসারীরা যেন হতাশ না হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি। অনুসারীরা যেন ধৈর্য ধারণ করতে শেখেন। সে জন্য নেতাকে প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর হতে হবে নেলসন ম্যান্ডেলার মতো।
সাধারণত সহমর্মিতা, দৃঢ়তা, সততা, পরিচালনের ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, নমনীয়তা ও প্রত্যয়—এগুলোকে নেতৃত্বের গুণাবলি বলা হয়। সাধারণ মানুষ থেকে নেতা হয়ে ওঠার জন্য এসব গুণ আমাদের মধ্যে বিরাজ করা প্রয়োজন।

কিছু প্রশ্ন সব সময় সামনে চলে আসে—নেতা কী বোনানো হয়, নাকি নিজে নিজে তৈরি হয়? কেউ চাইলেই কি নেতা হতে পারেন? কিংবা বংশপরম্পরায় কি কেউ নেতা হন?
নেতা হওয়ার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো মানুষ/জনগণ/অনুসারী। কখনো কখনো অনুসারীরা কারও গুণাবলির কারণে কাউকে নেতা বানিয়ে দেন। কখনো প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে কেউ নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসে, সবাই তাকে অনুসরণ করে, তিনি নেতা হয়ে ওঠেন। কেউ ক্ষমতাবলে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার নেতা হয়ে ওঠেন। কোথাও কোথাও রাজার বংশধর রাজার আসনে বসেন, তিনিও নেতা। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, কারও মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি থাকলে যেকোনো পরিস্থিতিতে, প্রয়োজনের তাগিদে, পারিপার্শ্বিকতার কারণে নেতা হয়ে উঠতে পারেন।

একজন নেতা একনায়কতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক, দায়িত্বমুখী, গণমুখী ইত্যাদি যেকোনো নীতি অনুসরণ করতে পারেন। অনেক নেতা একাধিক নীতি অনুসরণ করে থাকেন। যেমন সেনাবাহিনীতে একনায়কতান্ত্রিক ও দায়িত্বমুখী উভয় নীতি অনুসরণ করে। কোনো কোনো নেতার রূপান্তরশীল, ক্যারিশমাটিক ক্ষমতা থাকে। যেটা জন্মগতভাবে পেয়ে থাকেন।
সাধারণ মানুষ থেকে তখনই একজন নেতা হয়ে ওঠেন, যখন
- সাধারণত আমরা যা দেখি না, তা দেখতে পান
- যা আমরা শুনতে পারি না, তা শুনতে পান
- আমরা যেটা বুঝতে পারি না, সেটা বুঝতে পারেন
- আমরা যেটা আস্বাদন করতে পারি না, সেটা আস্বাদন করতে পারেন
- আমরা যেটা অনুভব করতে পারি না, সেটা অনুভব করতে পারেন
- আমরা যা সহজে গ্রহণ করতে পারি না, তা হাসিমুখে গ্রহণ করতে পারেন
- সবাইকে ভালোবাসতে পারেন
সর্বশেষে ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, ‘সঠিক সময়ে, সঠিক জিনিসের, সঠিকভাবে, সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার দক্ষতা থাকতে হয় নেতার মধ্যে।

(২) তুমি কি উদ্যোক্তা হতে চাও?
এ বিষয়ে আলোচনা করেন উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব। শুরুতে তিনি তাঁর উদ্যোক্তা হওয়ার গল্প বলেন। এর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসে কীভাবে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা যায়। উদ্যোক্তা হতে গেলে কোন জিনিসগুলোর প্রতি জোর দিতে হয়। তিনি লেদার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে (এখন বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হওয়ার পরই তাঁর মাথায় ব্যবসার চিন্তা আসে। শুরু করেন আশপাশে পোশাক বিক্রি করা। পাশাপাশি ক্যানটিনে নুডলস-পুডিং সরবরাহ শুরু করেন। চামড়াশিল্প নিয়ে পড়তে পড়তে ভাবেন, চামড়া নিয়েই কিছু করবেন।

বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অনুষ্ঠানে কথা বলছেন তানিয়া ওয়াহাব
বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অনুষ্ঠানে কথা বলছেন তানিয়া ওয়াহাব


প্রাতিষ্ঠানিকভাবে চামড়াশিল্প সম্পর্কে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি করেন হাজারীবাগ আর বংশালের ছোট ছোট চামড়ার ফ্যাক্টরিতে ঢুঁ মারা। উদ্দেশ্য দুটো—কে কোন জিনিস ভালো বানায়, সেটা জানা; আর এই ব্যবসার অন্ধিসন্ধি জানা। কোনো কোনো ফ্যাক্টরিতে ঢুকতেই পারতেন না। কিন্তু হাল ছাড়েননি তিনি।

গ্র্যাজুয়েশন শুরু করার আগেই শুরু করেন চামড়ার জ্যাকেট, জুতা, মানিব্যাগ, ভ্যানিটি ব্যাগ ইত্যাদি কখনো নিজে আবার কখনো কাউকে দিয়ে বানিয়ে নেওয়া। করপোরেট গিফট আইটেমের স্যাম্পল তৈরি করে বিভিন্ন কোম্পানিতে যেতেন। অর্ডার পেলে যেখানে ভালো বানানো হয়, সেখান থেকে বানিয়ে সরবরাহ করতেন। কিন্তু কখনো কোয়ালিটির জায়গায় কোনো সমঝোতা করতেন না। এ জন্যই তাঁকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
নিজের গল্প শোনানোর পর উপস্থিত সবাইকে দুজন করে দল বানিয়ে দেন। প্রতি দলকে ৫ মিনিট করে সময় দেওয়া হয় তার দলের অপর মানুষটি সম্পর্কে জানার জন্য। এবং তার গুণাবলির ওপর ভিত্তি করে তাকে কোনো বস্তুবাচক নাম দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি তার নামকরণের কারণ সবার সামনে উপস্থাপন করার জন্য।

একেকটি দল সামনে দাঁড়িয়ে তার দলের অন্য সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দিলেন একটি বস্তুবাচক নামে। কেউ কাউকে সম্বোধন করলেন আলো নামে। তিনি আলো ছড়াচ্ছেন নিজের জায়গায়। নিজ গ্রামে। কেউ সম্বোধন করেন আকাশ। তিনি আকাশের মতো বিশাল চিন্তা করেন। ভবিষ্যতে অবহেলিত মানুষদের নিয়ে কাজ করবেন। কেউ বললেন ছাতা। তিনি সবাইকে সাহায্য করেন। যেকোনো বিপদে পাশে এসে দাঁড়ান। এ ছাড়া রবি, কলসি, নৌকা, ফুলের রস ইত্যাদি নানা নামে সম্বোধন করা হয়। প্রত্যেকে তাঁর নামকরণের পেছনের গল্প-সার্থকতা তুলে ধরেন। মুহূর্তে মনে হয় যাঁরা উপস্থিত হয়েছিলেন, তাঁরা প্রত্যেকে একেকজন অনেক গুণের অধিকারী। এই পর্বের মাধ্যমে তানিয়া ওয়াহাব বোঝাতে চেয়েছেন, আমরা হামেশাই বলে থাকি নেতিবাচক বিষয়গুলো আমাদের চোখে বেশি আটকে যায়। আমরা নেতিবাচক চিন্তা বেশি করি। কিন্তু এই পর্ব থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় আমরা চেষ্টা করলে অন্যের সম্পর্কে অনেক ইতিবাচক চিন্তা করতে পারি।

একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য কিছু বিষয়ের প্রতি তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। যেমন
প্রাসঙ্গিক জ্ঞান। আপনি যে ব্যবসায়ের উদ্যোগ নিচ্ছেন, সে সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে হবে। আপনার পণ্যটির কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদনের জন্য কোন জায়গাটি ভালো, তা খুঁজে বের করতে হবে।
কাজের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। কাজের প্রতি নিবেদিত হতে হবে।

আপনার উৎপাদিত পণ্য সম্পর্কে বিশদ জ্ঞান থাকতে হবে। আপনি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানে আপনার পণ্য উপস্থাপন করবেন, তখন যেন আপনি ওই পণ্যের হাঁড়ির খবর নাড়ির খবর বলে দিতে পারেন।
পণ্যের গুণগত মানের সঙ্গে কখনো আপস করা যাবে না। আপনার পণ্যই হবে আপনার ব্যবসায়ের মূল চালিকাশক্তি।

আপনি কারও মাধ্যমে কোথাও না গিয়ে, সরাসরি নিজে চেষ্টা করুন। আপনি হয়তো প্রথমবার সফল হবেন না। কিন্তু কোথায় কোন প্রতিবন্ধকতা আছে, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন। এবং নিজেকে শক্তভাবে তৈরি করতে পারবেন।
তানিয়া ওয়াহাব বলেন, বর্তমান সময় উদ্যোক্তা তৈরি হওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। সৎভাবে, সঠিকভাবে, সঠিক পণ্যের বাজারজাত করতে পারলে সবার ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।

(৩) বৃত্তের বাইরে
এ কর্মশালা পরিচালনা করেন এজাজ উর রহমান। তিনি কথা বলেন আর্ট অব লিভিং বিষয়ে। এ কর্মশালার মাধ্যমে বোঝানো হয়—জীবন একবারই পাওয়া যায়। বেঁচে থাকতেই এ জীবনকে উপভোগ করতে হবে। পরের দিনের জন্য কোনো কিছু জমিয়ে রাখা মানে অনিশ্চিত একটা জিনিসের জন্য বর্তমানের মুহূর্তকে বিলিয়ে দেওয়া। কিন্তু না, জীবনকে উপভোগ করতে হবে বর্তমানেই। আমরা হামেশাই বলে থাকি আমাদের এটা নেই, ওটা নেই। থাকলে এমন হতো, আমরা ভালো থাকতাম। কিন্তু বিষয়টি উল্টো আমাদের যা নেই, তা যখন আমরা পেয়ে যাই, তখন অন্য কিছু খুঁজতে থাকি। একসময় ভুলে যাই কী চেয়েছিলাম। যা নেই তা পেলেই ভালো থাকব, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই ভালো থাকতে হবে যা আছে তা নিয়েই। যা নেই তা নিয়ে আফসোস না করে। বর্তমানকে উপভোগ করে, সুন্দরভাবে এগিয়ে গেলে প্রাপ্তির খাতায় অনেক কিছু যুক্ত হবে। তখন জীবনকে অর্থপূর্ণ মনে হবে। বেঁচে থাকার জন্য আমাদের কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন। যা লাগবেই। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫ বছর ধরে পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সবার সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক দরকার।

বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অনুষ্ঠানে কথা বলছেন এজাজ উর রহমান
বন্ধুসভার আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ অনুষ্ঠানে কথা বলছেন এজাজ উর রহমান


কর্মশালার শুরুতে কর্মশালায় অংশ নেওয়া সবাইকে দুটি দলে ভাগ করে তাদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। ছোট কাগজে তিনি কিছু বস্তুর নাম লেখেন। যেকোনো দল থেকে একজন সেই বস্তুর নাম দেখে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাঁর দলকে বোঝাবেন। দলীয়ভাবে বলবেন তিনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। অর্থাৎ ওই বস্তুর নাম বলতে হবে। দুই দল সমান সমান নম্বরপ্রাপ্ত হন। ড্র হয়। এর মাধ্যমে সবার মধ্যে একটি সুস্থ সুন্দর প্রতিযোগী মনোভাব তৈরি করেন। এরপর শুরু হয় মুভ অ্যান্ড ফ্রিজ। এর মাধ্যমে শরীরের জড়তা দূর করেন। তারপর ৫ মিনিটের মেডিটেশন। মেডিটেশন চলা অবস্থায় এজাজ উর রহমান সবার হাতে কাগজের টুকরো পৌঁছে দেন এবং অন্য কাউকে ধন্যবাদ জানাতে বলেন। এর মাধ্যমে সবাইকে মানসিকভাবে বিশ্রাম দেন এবং অন্যকে ধন্যবাদ বলার মধ্যে যে নিজের ভেতর সুন্দর একটি অনুভূতি সৃষ্টি হয়, তা অনুভব করান।

এরপর দ্য অবিচুয়ারি (মৃত্যুবরণ) নামের একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দেখানো হয়। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, জীবনের কোনো পুনরাবৃত্তি নেই। তাই যা করার আজ থেকেই করতে হবে। কালকের জন্য ফেলে রাখা যাবে না। কর্মশালার শেষ মুহূর্তে মা দিবস উপলক্ষে সাফায়েতের নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। বোঝানো হয় আমরা অহরহ আমাদের প্রিয় মানুষগুলোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় সেটি করার সামর্থ্য আমাদের নেই। কিন্তু অজান্তে আমরা অনেকবার কষ্ট দিই এবং সে জন্য কখনো তাদের দুঃখিত বলাও হয়নি। তাই সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নশীল হতে বলা হয়।

সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তিনটি ভিন্ন বিষয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেন তিনজন আলাদা ব্যক্তি। আলাদা তাদের বিষয়। আলাদা তাদের পেশা। আলাদা তাদের ব্যক্তিত্ব। কিন্তু একটি জায়গায় সবার কথায় মিল রয়েছে। আমাদের জীবনকে উপভোগ করতে হবে। বর্তমানকে নষ্ট করা যাবে না। আমাদেরকে মানুষ হয়ে উঠতে হবে। আমরা নেতা হব। উদ্যোক্তা হব। ভালো মানুষ হব।
সাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত ২৫ মার্চ থেকে শুরু হয় এই আয়োজন ‘স্বাধীনতা তুমি’ শিরোনামের অনুষ্ঠান।