জীবনমাখা অণু কথাগুলো


কিছু কথা বরং না বলাই থাকুক
কিছু সম্পর্ক শুধু মনই মনে রাখুক
মনের মধ্যেই বাঁচুক...

বেলা বোস বিয়ে করে ফেলে। ববি রায়ের দামি গাড়ি চড়ে অসময়ে চলে যায় টাইপ রাইটার ছেলেটার ভালোবাসার দাম না দিয়ে। তবু মুছতে পারে না মনের ভেতরে টাইপ করা নাম; মুছতে পারে কী পারে না, সেটা অজানা থাক অন্য সব কিছুর মতোই। রুবি রায় চিনতে পারে না কবিতাটার সেই ছেলেটিকে, হৃদয়ের বোতাম খুলে দাঁড়িয়ে থাকত যে। কুসুমের নৌকা অনেক দূরে চলে যায় শশীর ঘাট থেকে। লাবণ্য অমিতের অসহায়ত্ব দেখে না, দেখে কী! নীরা কথা রাখে না। নিখিলেশ দেখতে আসে না জীবন বদলের পর। অমল কান্তি অন্ধকারে হারিয়ে যায়। নীলাঞ্জনা কাজল দিয়ে চোখের নিচের কালো দাগ ঢাকে।
এভাবেই গল্পগুলো জমতে থাকে। চেপ্টা গোলাপ ফুলের দিন শেষ হয়ে যায়; বেলা থাকে না, বিকেল সন্ধ্যেতে ঢুকে পড়ে বিরহের ভার নিয়ে। মান্না দে জানতে চান—দিনগুলি কীভাবে কাটাও! সুমন বলেন—আগের মতোই রিকশা থেকে, নামছ তুমি আমায় দেখে/ কেমন আছ?


চাইলেই সবাই ঘরে ফিরতে পারে না
ফিরতে চাইলেও সবার ঘর থাকে না

জীবন কখনোই হিসাব–নিকাশ করে চলে না। আপনি যতই নিজের মতন করে সাজান; হিসাব–নিকাশ করেন! হঠাৎ দেখবেন কোনো এক ফাঁকে আপনার অজান্তেই আপনার সব পরিকল্পনা ওলট–পালট হয়ে গেছে। এমনভাবে হয়েছে, যা আপনি জীবনেও ভাবেননি; কিন্তু আপনাকে এখন সে রকম করে ভাবতে হচ্ছে। ওলট–পালটের সঙ্গে নিজেকে কতটুকু ঠিক রাখা যায়, সেটাও ভাবতে হচ্ছে! অথচ আপনার পরিকল্পনা এমনটা তো ছিলই না, বরং আপনি এগুলো চিন্তাও করতেন না। তবু আপনি দেখবেন, আপনাকে বাঁচতে হচ্ছে যতটা না নিজের জন্য, তার চেয়ে বেশি অন্যের জন্য।

এই নিত্যদিনের নিয়মমাফিক বেঁচে থাকাটা আপনার কাছে অসহ্য লাগছে ঠিকই, কিন্তু এই আপনিই চেষ্টা করে যাচ্ছেন অবিরত আপনার নিত্যদিনের বেঁচে থাকা থেকে ‘অসহ্য’ জিনিসটা সরাতে। অথচ আপনি ভেতরে–ভেতরে জীবনকে অস্বীকার করেন প্রতিবার, প্রতিদিন।
আপনি যতই নিজেকে নিয়ে, নিজের ভাবনা, স্বপ্ন নিয়ে আলাদা হতে চাইবেন, ঠিক ততটাই বা তারও বেশি আপনি আটকে যাবেন জীবনের বুনন করা জালে! জীবন অদ্ভুত এক জিনিস। আপনি ঠিকমতো, নিজের মতো ধরতেও পারছেন না, ছেড়ে দিতেও পারছেন না। যতক্ষণ না আপনাকে ছেড়ে যাচ্ছে। তার আগে আপনি মুক্ত হতে পারবেন না। জীবন আপনার সঙ্গে ইয়ার্কি করেই যাবে আর আপনার সহ্য করতে হবে। জেনে নিতে হবে কীভাবে জীবনের সঙ্গে পা মিলিয়ে আপনাকে হাঁটতে হবে।

সাবেক সভাপতি, মৌলভীবাজার বন্ধুসভা।