আসুন, এই সময়টাকে কাজে লাগাই

করোনাকালে গৃহবন্দী জীবনের প্রতীকী ছবি
করোনাকালে গৃহবন্দী জীবনের প্রতীকী ছবি

আমরা প্রতিনিয়তই নতুনের খোঁজে থাকি। মানুষমাত্রই আমরা সব সময় কিছু না কিছু নতুন করতে চাই। কখনো পারি, কখনো হয়তো না। কিন্তু আমাদের আশা থাকে, অবশ্যই কিছু ভালো হবে; তা যতই খারাপ সময়ই যাক না কেন। হোক না এটা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়। যখন প্রতিটি মুহূর্তই মনে হয়, এই বুঝি আমিই আক্রান্ত হলাম। তবুও আমরা মানুষ, শত বাধা আর প্রতিকূলতার মাঝেও স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, ভালো কিছু হওয়ার প্রত্যাশায় থাকি। সব বাধা পেরিয়ে জয় করার প্রত্যয়ে নতুন দিগন্তের দিকে পা বাড়াই।

আজকাল আমরা সবাই একটু চিন্তিত। এই ভাবনায় যে করোনার পরে কী হবে? আমার চাকরিটা থাকবে তো? থাকলে ঠিকমতো বেতন পাব তো? কোম্পানি কি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? এই ব্যবসাটা ভবিষ্যতের ব্যবসা হবে? আমাদের এই ব্যবসা বা শিল্পটি আদৌ টিকবে, নাকি আমরা কালের গর্ভে হারিয়ে যাব? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমাদের সবার হয়তো জানা নেই। যদি জানতামও, খুব বেশি কি কিছু করতে পারতাম? এই ধরনের মনোবল ভাঙা মনোভাবের প্রশ্নের প্রতি আমার উত্তর, অবশ্যই পারতাম, অবশ্যই পারব। ইচ্ছা থাকলে যেহেতু উপায় হয়, এখানেও হবে।

আমরা এখন বাসায় আছি; অফিস নেই, ভার্সিটি নেই, রাস্তার জ্যাম নেই, আড্ডা নেই, বেড়ানো নেই, ফুচকা খাওয়া নেই, ৩০০ ফিটে যাওয়া নেই, লং ড্রাইভ নেই। কিন্তু এত নেইয়ের মধ্যে এখন আমাদের আছে সময়। এই সময়গুলোর সঠিক ব্যবহারই আমাদের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার বুনিয়াদ হবে। চলুন, তাহলে দেখে নেওয়া যাক, এই গৃহবন্দী দশায় বা বাসায় অফিস চলাকালে আমরা সময়ের সদ্ব্যবহার কীভাবে করতে পারি, যা কেবল আমাদের ব্যক্তিগত দক্ষতার উৎকর্ষ সাধনেই নয়, এই ক্রমভঙ্গুর অর্থনীতিকে আবারও শক্ত ভেতরে ওপর দাঁড় করাবে।

প্রথমত, এই সময়ে কিছু নতুন টেকনিক্যাল স্কিল ডেভেলপমেন্টে আমরা ব্যবহার করতে পারি যাকে Upskilling বলে। সেই সব স্কিল অর্জনে মনোনিবেশ করতে পারি, যা করোনা বা করোনা-পরবর্তী নতুন দিনগুলোতে আমাদের সবার চেয়ে আলাদা বা ওপরে রাখবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা Havard Business Review (HBR), BCG বা Mckinsey-র নানা নিবন্ধ পড়তে পারি, যেখানে এই উৎকর্ষ সাধনের নানা দিক নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, নতুন চাকরির খোঁজে যাঁরা ব্যস্ত ছিলেন বা নতুন চাকরিতে প্রবেশ করার আশায় যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা চিন্তায় আছেন, তাঁদের জন্য এটাই সময় নিজেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত করা। কিছু টিপস নিয়ে পড়ালেখা করা যায়, পরিচিত সিনিয়র ভাই-আপাদের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিষয়ে গল্প করা যায়, কোনো অফিসে পরিচিত কোনো সিনিয়র থাকলে তাঁর কাছ থেকে ওই করপোরেট সম্পর্কে জানা যায় এবং সর্বোপরি কিছু ইন্টারভিউও দেওয়া যায়। অনেক কোম্পানি এখন অনলাইন ইন্টারভিউ নিচ্ছে এবং সেই রকম কিছু প্রচেষ্টা করা নিজের মনোবল ও প্রস্তুতিকে বহুলাংশে বাড়িয়ে দেবে।

তৃতীয়ত, নতুন কিছু করার জন্য সংকল্প করা। এইতো সময় এমন কিছু করার, যেখানে আপনিই একদিন সিইও হবেন। হ্যাঁ, আমি ইন্টারপ্রেনিউরশিপের কথা বলছি। আর কত চাকরি করবেন, চলুন না এবার চাকরি দিই। অন্যের জন্য অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা করি। এই স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী থাকা আমাকে সেই চিন্তাগুলো করার সুযোগ এনে দিয়েছে। এ কথা সত্য যে করোনার এই ভয়াবহতার কারণে বহু শিল্প আজ ক্ষতির সম্মুখীন; যেমন: পর্যটন, হোটেল, সিনেমা, এয়ারলাইনস, রেল, রিটেইল ব্যবসা, অটোমোবাইলসহ আরও অনেক। কিন্তু একইভাবে অনেক শিল্প কিন্তু এই কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বুমিং সেক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবে। যেমন: গেমিং, ডিজিটাল প্রোডাক্ট, গিগ ইকোনমি, মেন্টাল হেলথ, ইনস্যুরেন্স, অলটারনেটিভ এনার্জি, অনলাইন কোচিং সেন্টার, ডেটা সায়েন্সসহ আরও অনেক কিছু। তাহলে আমরা কি চাকরি না খুঁজে এই সময়গুলোর সদ্ব্যবহার করে এন্টারপ্রেনিউর হতে পারি না? সর্বোপরি এই সময়কে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে অনেক বড় কিছু কি করতে পারি না?

আমরা কি INSEAD-এর ওই অধ্যাপকের Blue Ocean Strategy-র কথা শুনিনি? তাহলে কেন এই সময় অপচয় করব, কেন দুশ্চিন্তা করব, কেন হতাশায় ভুগে মরব? নিজের ভাগ্য আমরা নিজেই নির্ধারণ করি। নিয়তি বা করোনার মতো কাউকে দোষ চাপিয়ে লাভ কী! আমরা নিশ্চয়ই ভুলিনি সেই উক্তি, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে’। আর তাই আমরা কি টানেলের মাঝে অন্ধকার দেখব, না টানেলের শেষ প্রান্তে আলো? চ্যালেঞ্জ নিয়ে চিন্তায় মগ্ন থাকব, না ভবিষ্যতের সুযোগ নিয়ে ভাবব? উত্তর আমাদেরই দিতে হবে, অন্য কেউ দেবে না। কোভিড-১৯ তো অবশ্যই নয়, কারণ এর উত্তর তার জানা নেই।

মো. ফয়সাল ইমতিয়াজ খান: প্রধান মানবসম্পদ কর্মকর্তা, রবি আজিয়েটা লিমিটেড।