আগামীর প্রস্তুতি এখনই

কোভিড-১৯ বিশ্বকে একটি নতুন রূপে রূপান্তর করেছে, যেখানে ব্যর্থ না হয়ে আমাদের পরিবর্তন হতে হবে। এই মহামারি ভাইরাসের কারণে আমরা আমাদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে সক্ষম হয়েছি এবং সেই সঙ্গে সীমাবদ্ধতাগুলো কাটিয়ে ওঠার সক্ষমতা অর্জন করছি। প্রয়োজন বরাবরই আবিষ্কারের জননী এবং এই ক্রমবর্ধমান প্রয়োজনের কারণে কোভিড-১৯–এর সঙ্গে প্রত্যেকের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমাদের আচরণগত অভ্যাস ও কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতার উন্নত করতে হবে।

আমাদের সমাজ ও দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য এটা একটা সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এটি আমাদের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য পরিবেশের সঙ্গে কাজের পরিবেশে একটি খেলার ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে।

আচরণ ও কর্মক্ষেত্রের মান পরিবর্তন

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কোভিডের সঙ্গে আমাদের বর্তমান আচরণের পরিবর্তন করতে হবে। মাস্কের ব্যবহার এবং প্রয়োজনে আরামদায়ক ও পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ফ্যাশনেবল মাস্ককে সুরক্ষার সঙ্গে ফ্যাশন স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে উদ্ভাবন করতে হবে। পর্যাপ্ত হ্যান্ড ওয়াশিং স্টেশন তৈরি করতে হবে। গণপরিবহনে চলার সময় আচরণবিধি উন্নত করতে হবে।

আইটি অবকাঠামো উন্নয়ন

প্রথমে আমাদের বর্তমান আইটি অবকাঠামো সম্প্রসারিত করা দরকার, বর্তমান অবকাঠামোসহ নতুন প্রয়োজনগুলো পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আমরা বর্তমানে আমাদের অফিস কাঠামোর জন্য গুগল-মিট বা জুম ব্যবহার করছি। তবে এটি দীর্ঘ সময়ের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। সরকারি কাজের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে এর সত্যতা লক্ষ করা যায়। ব্যবসায়িক এবং সরকারি কাজের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা আবশ্যক। আমাদের ইন্টারনেট কাঠামোর পাশাপাশি ডেটাবেইস এবং বাইরের ব্যক্তিরা যাতে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য আমাদের নিরাপদ সংযোগ বিকাশ করা প্রয়োজন। আমাদের সংস্থার এবং বিভিন্ন প্রয়োজনের জন্য আমাদের বিশেষায়িত অ্যাপ্লিকেশন প্রয়োজন।

যানজটমুক্ত শহর

ঢাকায় প্রতিদিন কর্মজীবী মানুষের কাজের প্রায় পাঁচ মিলিয়ন ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যামে নষ্ট হয়। কোভিড-১৯ পিরিয়ডে যদি আমরা বাসা থেকে ভালো কাজের অবস্থা তৈরি করতে পারি, তবে আমাদের প্রতিদিনের উৎপাদনশীল কর্মঘণ্টায় গড়ে তিন ঘণ্টা বাঁচাতে পারি। এতে দেশের অর্থনীতির জন্য কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়া সম্ভব।

নতুন প্রযুক্তি

চাহিদাই উদ্ভাবনের কারণ। নতুন যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সার্ভারের প্রয়োজনের ফলে নতুন আবিষ্কারের জন্ম হতে পারে এবং বাংলাদেশ আইটি সেক্টরের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারে।

কর্মক্ষেত্রে পরিপূরক রীতি

আমাদের সাধারণ কর্মক্ষেত্রের সময়সূচিতে অফিস বেশির ভাগ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা খোলা থাকে। কিন্তু যদি আমরা বাসায় বসে কাজের পরিবেশ তৈরি করতে পারি, তাহলে আমরা সপ্তাহে দুই–তিন দিন বাসায় থেকে অফিসের কাজ করার প্রস্তাব দিতে পারি এবং এটি করার ফলে আমাদের কাজের ক্ষমতা এবং কর্মীর সংখ্যা তিন গুণ বাড়ানো যায়। আমরা স্মার্ট রোস্টার তৈরি করতে ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেমটি ব্যবহার করতে পারি, যাতে লোকজনের ওপর অত্যধিক চাপ ছাড়াই সর্বোচ্চ দক্ষতা বজায় রাখা যায়।

ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে ভারসাম্য বজায় রাখা

যেহেতু এটি ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম দ্বারা পরিচালিত হবে, তাই আমরা কাজের এবং ব্যক্তিগত সময়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারি। আমরা আমাদের জীবনের কোনো খারাপ প্রভাব তৈরি না করেই সহজেই এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমাদের কাজের সময়টি পুনরায় শিডিউল করতে পারি।

লেখক: অধ্যাপক, আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়