নিয়োগ চান ৩৯তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জনরা

৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণ ও নিয়োগবঞ্চিত ২৫৩ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। প্রেসক্লাবে ৩৯তম বিশেষ বিসিএস নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদ এই আবেদন জানায়। ছবি: সংগৃহীত
৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণ ও নিয়োগবঞ্চিত ২৫৩ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। প্রেসক্লাবে ৩৯তম বিশেষ বিসিএস নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদ এই আবেদন জানায়। ছবি: সংগৃহীত

নিয়োগের আবেদন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণ ও নিয়োগবঞ্চিত ২৫৩ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন। তাঁরা নিয়োগের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার প্রেসক্লাবে ৩৯তম বিশেষ বিসিএস নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন ঐক্য পরিষদ এই আবেদন জানায়।

৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণ ও নিয়োগবঞ্চিত ২৫৩ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জন বলেন, ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ কিন্তু নিয়োগবঞ্চিত ২৫৩ জন নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জনকে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন ২ হাজার চিকিৎসকের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ৩৯তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষার আয়োজন করে। ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল বিজ্ঞাপন জারি হয় এবং ওই বছরের ৩ আগস্ট লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৪০ হাজার চিকিৎসক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং ৬ সেপ্টেম্বর ফলাফল প্রকাশ হয়। ফলাফলে মোট ১৩ হাজার ২০০ জন পরীক্ষার্থী মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। ১০ অক্টোবর ২০১৮ হতে ১১ মার্চ ২০১৯ পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা চলে। মৌখিক পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ হয় ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল, যেখানে ৪ হাজার ৫৪২ জন সহকারী সার্জন, ২৫০ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ৪ হাজার ৭৯২ জন চিকিৎসককে ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এবং পদ স্বল্পতার কারণে ৮ হাজার ৩৬০ জনকে নন-ক্যাডার হিসেবে নির্বাচন করা হয়, যাঁদের মধ্যে ডেন্টাল সার্জন ২৫৩ জন।

করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলার জন্য ২০২০ সালের ৩০ এপ্রিল ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসের ৮ হাজার ৩৬০ জন নন-ক্যাডার থেকে ২ হাজার সহকারী সার্জনকে নিয়োগ দেওয়া হলেও কোনো সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ হননি। একই বিসিএসে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও এবং চাহিদা থাকা সত্ত্বেও ডেন্টাল সার্জনরা নিয়োগবঞ্চিত হয়েছেন। সমান অনুপাতে ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ না হওয়ায় উত্তীর্ণ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জনরা মর্মাহত ও হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ দিয়েছেন এবং ৩ হাজার মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের পথে। আপনারা আরও অবগত আছেন যে, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে আরও ২ হাজার চিকিৎসকের নতুন পদ সৃষ্টি ও ৪ হাজার নার্স নিয়োগের কথা বলেন।

বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা হাসপাতালসহ সব সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ডেন্টাল সার্জন এই করোনা মহামারিতেও জনগণকে জরুরি দন্ত ও মুখগহ্বরের রোগের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন এবং করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডেও দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে করোনায় আক্রান্ত শতাধিক উপজেলার ডেন্টাল সার্জন আইসোলেশনে, হোম বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে চিকিৎসাধীন এবং কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। একদিকে ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতা, অন্যদিকে অসুস্থতার কারণে কেউ কেউ ছুটিতে থাকায় হাসপাতালে দন্ত চিকিৎসা সেবা মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। দন্ত চিকিৎসা সেবা যাতে ভেঙে না পড়ে এই জন্য সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে জরুরিভাবে ৩০০ জন সহকারী ডেন্টাল সার্জন নিয়োগের যৌক্তিকতা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত ১৭ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব প্রেরণ করেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞগণের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবমতো হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৫০ শয্যা ও তার বেশি শয্যাবিশিষ্ট সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড এবং নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা চালুর জন্য নির্দেশ প্রদান করে প্রজ্ঞাপন জারি হয় গত ২৪ মে, যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিচালক, ঢাকা ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং ডেন্টাল সার্জনের স্বল্পতার জন্য ৪০ জন ডেন্টাল সার্জন নিয়োগ/পদায়নের জন্য গত ১১ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর চাহিদাপত্র প্রেরণ করেছেন ।

বাংলাদেশে ৮০ শতাংশের অধিক লোকের কমপক্ষে এক বা একাধিক মুখ বা দাঁতের রোগ আছে। দন্তাবরক প্রদাহ, মাড়ি প্রদাহ, দন্তক্ষয়, দন্তশূল, দন্তমূলীয় ঘা ইত্যাদি প্রায়ই লক্ষ করা যায়। এ ছাড়া দাঁতের সিস্ট, মুখগহ্বরের ক্যানসার এগুলো বাংলাদেশে খুব সাধারণ সমস্যা। দেশের একটি উপজেলায় একটি মাত্র ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (উপজেলা হাসপাতাল) বিদ্যমান আছে। উক্ত হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের একটি মাত্র পদ রয়েছে। বর্তমানে অনেকগুলো উপজেলায় ডেন্টাল সার্জনের পদ শূন্য আছে। আবার যেখানে ডেন্টাল সার্জন আছেন সেখানেও কোনো কারণে ডেন্টাল সার্জন ছুটিতে থাকলে বা অসুস্থ হলে মাসের পর মাস ওই হাসপাতালে দন্ত ও মুখগহ্বরের চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকে। এতে দেশের জনগণের দন্ত চিকিৎসা সেবাসহ জরুরি মুখগহ্বরের চিকিৎসা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। অন্যদিকে, মানসম্পন্ন দন্তসেবার অভাবে গ্রামাঞ্চলে হাতুড়ে চিকিৎসার দুর্ভাগ্যজনক ব্যবসা চলছে। এসব হাতুড়েরা অশিক্ষিত, অপটু এবং এদের পেশাগত কোনো জ্ঞান নেই। ওষুধ ব্যবহারের ব্যাপারে এবং ১৯৮০ সালে প্রচলিত চিকিৎসা ও দন্তচিকিৎসা বিধি সম্পর্কেও এরা অজ্ঞ। ফলে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ রেজিস্টার্ড ডেন্টাল সার্জনের অভাবে অদক্ষ/কোয়াক দন্তচিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে বহুসংখ্যক রোগী দুরারোগ্য মুখের ক্যানসার, রক্তবাহিত হেপাটাইটিস-বি/সি-সহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বিশ্বে ক্যানসারের ৬ষ্ঠ স্থানে রয়েছে মুখের ক্যানসার।

প্রায় ১৭ কোটি লোকসংখ্যার দেশে সব পর্যায়ে সরকারি ডেন্টাল সার্জন আছেন মাত্র ১ হাজার ২৯৬ জন; যা এই বিশাল জনসংখ্যার তুলনায় খুবই নগণ্য। আর এর সিংহভাগই ঢাকা ডেন্টাল কলেজসহ বিভিন্ন টারশিয়ারি লেভেল হাসপাতালে কর্মরত। ৬ থেকে ১৬.৫ লাখ জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি উপজেলার জনগণের জন্য একটি মাত্র ডেন্টাল সার্জনের পদ অথচ সেখানে এমবিবিএস চিকিৎসকের পদ রয়েছে ২১টি। এমনকি ১০০ বেড ও ২৫০ বেড হাসপাতালেও ডেন্টাল সার্জনের সৃজনকৃত পদ রয়েছে মাত্র একটি করে। দেশের ক্রমবর্ধমান দাঁত ও মুখের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতকল্পে বিভিন্ন হাসপাতালে ডেন্টাল সার্জনের পদ সৃজন দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে বিশেষ জরুরি।

এমতাবস্থায়, দেশের সাধারণ মানুষের দাঁত ও মুখের চিকিৎসাসেবা বহুলাংশে নিশ্চিত করতে তথা দুরারোগ্য ক্যানসার ও হেপাটাইটিস-বি, সি-এর বিস্তার কমাতে ৩৯ তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন ২ হাজার চিকিৎসকের (এমবিবিএস) সঙ্গে একই বিসিএসে উত্তীর্ণ ২৫৩ নন-ক্যাডার ডেন্টাল সার্জনকে সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। এতে জনগণের বহুল প্রত্যাশিত সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়ন হবে এবং আমরাও ভীষণ উপকৃত হব।