ট্রাম্পের অভিবাসনসংক্রান্ত আদেশের কার্যকারিতা আংশিক স্থগিত

শীতের সপ্তাহান্তের গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ছড়ানো প্রতিবাদের উত্তাপে পানি পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া অভিবাসন-বিষয়ক নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামা হাজারো মানুষের পক্ষে একজন বিচারপতি ইতিবাচক আদেশ দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

গতকাল রাতে নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় ফেডারেল জাজ এন ডনেলি তাঁর সংক্ষিপ্ত আদেশের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের অভিবাসন-সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশের কার্যকারিতা সাময়িক সময়ের জন্য স্থগিত করেছেন। এ আদেশে বৈধ ভিসা বা গ্রিনকার্ডধারীদের যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবন্দর থেকে ফেরত না পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদকারীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও হাজারো অভিবাসীর মধ্যে এখনো সংশয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বিরাজমান। প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রথম আলোর উত্তর আমেরিকা অফিসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এবং বাংলাদেশি আইনজীবীদের কাছে এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইছেন। সৃষ্ট পরিস্থিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা স্বজনেরা পুনরায় প্রবেশ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্নবাণ ছিল সংশ্লিষ্টদের কাছে।

গত শুক্রবার এক কলমের খোঁজায় ডোনাল্ড ট্রাম্প সিরিয়া থেকে শরণার্থী প্রবেশসহ সাতটি মুসলিম দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ট্রাম্পের সইয়ের পর পরই বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র অভিমুখীদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এ আদেশের সময় যাঁরা বিমানে আকাশে ছিলেন, তাঁরা বিমানবন্দরে এসে ইমিগ্রেশনের সমস্যায় পড়েন। তাঁদের অনেকেই আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় ডিটেনশন সেন্টারে। সংবাদ পেয়ে হাজারো মানুষ ছুটে যান বিমানবন্দরে। তাঁরা আটককৃতদের জন্য সংহতি প্রকাশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। নিউইয়র্ক থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত বড় বড় বিমানবন্দরে আটক অভিবাসীদের পক্ষে এবং নির্বাহী আদেশ বাতিলে দাবিতে বিক্ষোভ চলতে থাকে। বাংলাদেশি অভিবাসীরাও এসব বিক্ষোভে শামিল হন। ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি এবং নাগরিক অধিকার আন্দোলনের সংগঠকেরা সংহতি জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত হন। গতকাল সকালেই আমেরিকান লিভারটিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে নিউইয়র্কের পূর্বাঞ্চলীয় আদালতে (হাবিয়াস কর্পাসের) প্রতিকারের আবেদন করা হয়। তারা জেএফকে বিমানবন্দরে ভিসা নিয়ে আসা ইরাকি দুজনের পক্ষে এ আবেদন জানালে গতকাল রাতে আদালত তাঁদের ফেরত না পাঠাতে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বিচারক ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করেন। আমেরিকান সিভিল লিভারটিজ ইউনিয়নের আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ আপাতত পূর্ণাঙ্গ কার্যকর নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আদালতের আদেশ প্রসঙ্গে বাংলাদেশিদের অধিকার আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, বিচারকের দেওয়া আদেশে আন্দোলনকারীদের জয় হয়েছে। চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ সাতটি দেশের নাম থাকলেও বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের মধ্যে গতকাল উৎকণ্ঠা পৌঁছেছে চরমে। প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা অফিসসহ বাংলাদেশি আইনজীবীদের অফিসে অনবরত ফোন আসতে থাকে। উদ্বিগ্ন অভিবাসীরা জানতে চান, যাঁরা বিভিন্ন পন্থায় গ্রিনকার্ড পেয়েছেন বা যাঁদের ভ্রমণ ভিসা আছে, তাঁদের বাইরে যাওয়া এবং যাঁরা বাইরে আছেন, তাঁরা আসা-যাওয়ার পথে কোনো সমস্যায় পড়বেন কি না?

এ ব্যাপারে অ্যাটর্নি এবং ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিস্টিক লিডার মঈন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশিদের উদ্বিগ্ন বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। তারপরও যাঁরা শরণার্থী হিসেবে অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় গ্রিনকার্ড পেয়েছেন, তাঁদের ভ্রমণের বেলায় সতর্ক থাকতে হবে। এ ছাড়া যাঁরা বিভিন্ন অস্থায়ী অনুমোদন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাইরে যাওয়ার চিন্তা করছেন, তাঁদের সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

চলমান এ উত্তাপের মধ্যেও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বলেছেন, তাঁর এ নির্বাহী আদেশে সমগ্র মুসলিমের যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের ওপর নয়। তিনি স্বস্তির সঙ্গে বলেন, সব কটি বিমানবন্দরে সব ঠিকঠাক চলেছে, যা কিছু করার হচ্ছে, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য।