জাপানে প্রবাসী বাঙালি নারীদের নতুন সংগঠন

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

জাপানে প্রবাসী বাঙালি নারীদের নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে উইমেন্স ক্লাব অব জাপান (Women's club of Japan) নামে একটি সংগঠন। অনেক দিনের পরিকল্পনা শেষে রুমানা রউফ সোমা ও সুবর্ণা মিত্রার উদ্যোগে এই সংগঠন গঠন করা হয়। তাদের বিভিন্নভাবে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বহ্নি আহমেদ, জেসমিন সুলতানা কাকলি ও লাকি।

গত ১২ ফেব্রুয়ারি রোববার টোকিওর আকাবানে কিতা সিটি হলে এ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কেক কেটে ক্লাবটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তিন ভাগে বিভক্ত এই অনুষ্ঠান দুপুর থেকে শুরু করা হয়। প্রথম পর্বে ছিল মধ্যাহ্নভোজ। খাসির বিরিয়ানি, তন্দুরি চিকেন ও ডিম দিয়ে উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়িত করা হয়।
এরপর ছিল দ্বিতীয় পর্ব। এ পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা ও দূতাবাসের ইকোনমিক মিনিস্টার সাহিদা আখতার। বেলা ৩টায় তারা অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছালে ফুল দিয়ে তাদের বরণ করে নেন সংগঠনের সদস্যরা। ইতিমধ্যে আমন্ত্রিত অন্যান্য অতিথিরাও অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছান।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ও একুশের গান দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের সূচনা করা হয়। উপস্থিত সবাই সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে ওঠেন—‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো’ গানটি। এ পর্বে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মানীয় স্থানে কর্মরত তিনজন নারীকে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। তারা হলেন রাবাব ফাতিমা, মুনশি রোকেয়া সুলতানা ও ড. তানিয়া হোসাইন।
রাবাব ফাতিমাকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন রুমানা রউফ সোমা ও সুবর্ণা মিত্রা। ক্রেস্ট হাতে পেয়ে রাবাব ফাতিমা এতটাই আনন্দিত হন যে, তিনি বলেই বসেন, মনে হচ্ছে অস্কার পেয়ে গেলাম। রাবাব ফাতিমা প্রবাসী নারীদের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে বক্তব্য দেন।
মুনশি রোকেয়া সুলতানা দীর্ঘদিন জাপানে বসবাসরত ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে ব্যস্ততার সঙ্গে সময় পার করছেন। এত দিনের প্রবাসজীবনে এই প্রথম সম্মাননামূলক ক্রেস্ট পেয়ে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন। ড. তানিয়া হোসাইন ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। সম্মাননা পেয়ে তিনি বলেন, এমন একটি সম্মাননা গ্রহণ করে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে, তাও আবার শুধুমাত্র মেয়েদের কোনো ক্লাবের মাধ্যমে।
এই তিনজন ছাড়াও জাপানে দীর্ঘদিন বসবাসরত ও উচ্চপর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন এমন কিছু নারীদেরও ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া উপহার দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা বক্তব্য রাখেন। তারা এমন একটি আয়োজনের প্রশংসা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজকদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে একজন জাপানি বাঙালি বধূ কাজুমি চাকলাদারকেও ফুল দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। বাঙালিদের সামাজিক যেকোনো অনুষ্ঠানে সবার সঙ্গে তার সৌহার্দ্য সুলভ আচরণ সত্যি অতুলনীয়। তিনি হাতে হাত লাগিয়ে খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতার কাজে পর্যন্ত সহযোগিতা করে থাকেন। বাঙালি কোনো সংগঠন থেকে এমন পুরস্কারের আয়োজন দেখে তিনি বিস্মিত হন এবং খুব খুশি হয়েছেন সেটিও জানান। তার এই সম্মাননা পুরস্কার অন্যান্য জাপানি বাঙালি বধূদের উৎসাহিত করবে বলে তিনি বলেন।
তৃতীয় পর্বে ছিল পিঠা প্রতিযোগিতা। দূর দুরান্ত থেকে আগত বাঙালি নারীরা বাহারি পিঠা বানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়। রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা পিঠার এই সমাহার দেখে অবাক হয়ে যান। তিনি নিজেও ভোটে অংশ নেন। সবার ভোট গণনায় প্রথম স্থান অধিকার করেন দুধ খেজুর পিঠার রাঁধুনি জেসমিন সুলতানা কাকলি, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন ভাপা পুলি পিঠার রাঁধুনি রিনা নিশিকাওয়া ও তৃতীয় স্থান অধিকারী পার্সিয়া বানিয়েছিলেন লবঙ্গ লতিকা পিঠা। তারা তিনজনই রাবাব ফাতিমার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত তিনজন তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, এত বছরের প্রবাসজীবনে তারা বিভিন্ন জায়গায় খাবার রান্না করে নিয়ে গেছেন। কিন্তু রান্নার ওপর পুরস্কার তাদের প্রত্যেকের জীবনে এই প্রথম। তারা প্রতি বছর এমন একটি প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করার জন্য সংগঠনের ​উদ্যোক্তাদের প্রতি অনুরোধ রাখেন।

রা​বাব ফাতিমাকে ক্রেস্ট প্রদানের দৃশ্য
রা​বাব ফাতিমাকে ক্রেস্ট প্রদানের দৃশ্য

এ পর্বে র‍্যাফেল ড্রর আয়োজন ছিল। লটারির মাধ্যমে রাবাব ফাতিমা প্রথম বিজয়ীর নাম ও নম্বরটি ঘোষণা করেন। বিজয়ী হন আঁখি। তিনি রাবাব ফাতিমার হাত থেকে পুরস্কার পেয়ে খুশিতে যেন কথাই বলতে পারছিলেন না। এমন একটি আয়োজনে না আসতে পারলে তার আফসোস থেকে যেত এমনটিও বলেন।
সব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নৃত্য পরিবেশন করে স্বরলিপি কালচারাল গ্রুপের সদস্য কলি। সাংস্কৃতিক পর্বে মূল আকর্ষণ ছিল ফ্যাশন শো। বাংলাদেশ ও জাপানের পোশাকের ওপর ফ্যাশন শোটি করা হয়। এতে অংশ নেয় তানিয়া, সুপর্ণা, নওরিন অদিতি, সুমি চৌধুরী, হৃদিতা, উষা হাবিব, রুহি জামান ও মিম। বাজনার তালে তালে ফ্যাশন শোর পরিবেশনায় অনুষ্ঠানে এক ব্যতিক্রম আমেজের পরিবেশ তৈরি হয়। সবাই খুবই আনন্দের সঙ্গে ফ্যাশন শো উপভোগ করেন।
পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন এনএইচকের নিউজ রিডার তনুশ্রী গোলদার। তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন সোমা।

সংগঠনের সদস্যদের একাংশ
সংগঠনের সদস্যদের একাংশ

অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেন রাবাব ফাতিমাসহ আমন্ত্রিত সকল অতিথিরা। রাবাব ফাতিমা এমন একটি উদ্যোগ দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং সকল রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। জাপানে বাঙালি নারীদের এমন একটি সংগঠন আরও আগে থেকেই থাকা উচিত ছিল এমনটি বলেন।

*জেসমিন সুলতানা কাকলি, সিনাগাওয়া, টোকিও, জাপান।