যুক্তরাজ্যে অনুপ্রেরণাদায়ী বাংলাদেশি যাঁরা

যুক্তরাজ্যে অনুপ্রেরণাদায়ী বাংলাদেশিদের তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল লন্ডনে ‘দ্য শার্ড’ ভবনের ২৪ তলায়। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে
যুক্তরাজ্যে অনুপ্রেরণাদায়ী বাংলাদেশিদের তালিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল লন্ডনে ‘দ্য শার্ড’ ভবনের ২৪ তলায়। ছবি: আয়োজকদের সৌজন্যে

লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষার্থী মহিমা আহমদ। পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ করছেন ‘অ্যাপস ফর গুড’ নামে একটি প্রচারাভিযানে (ক্যাম্পেইনে)। প্রযুক্তিগত সৃজনশীলতার মাধ্যমে তরুণেরা আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পাশাপাশি কীভাবে মানুষের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে, সেই বার্তাই প্রচার করেন তিনি। নিজেই তৈরি করেছেন বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদের একটি অ্যাপ।

আর তানিয়া রহমান বড় একটি সফটওয়্যার কোম্পানির হিসাবরক্ষকের কাজ ছেড়ে দিয়েছেন নিজেই ব্যবসা করবেন বলে। তিনি ‘চিট চ্যাট চাই’ নামের একটি রেস্তোরাঁ খুলেছেন; অভিজাত সেই রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহ্যবাহী ফুটপাতের খাবারসহ (স্ট্রিট ফুড) বিক্রি হয় নানা দেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ সব রেসিপি।

মহিমা বা তানিয়াকে বাদ দিয়ে জামশেদ হারুনের কথাই ধরুন। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সাবেক এই কর্মকর্তা বর্তমানে বায়োফার্মাসিউটিক্যালস খাতে সরকারের নীতি ও কৌশলবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন।

যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এমন সফল ব্যক্তিদের গল্প তুলে ধরে প্রকাশিত হয়েছে অনুপ্রেরণাদায়ী ১০০ বাংলাদেশির তালিকা। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পাওয়ার অ্যান্ড ইন্সপাইরেশন (বিবিপিআই) শীর্ষক এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। বিবিপিআইয়ের তালিকা প্রকাশে প্রতিবারই ভেন্যু নিয়ে চমক থাকে। এবার লন্ডনে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে উঁচু ভবন ‘দ্য শার্ড’-এর ২৪তলায় বসে সফল বাংলাদেশিদের মিলনমেলা।

এবারের তালিকায় পার্সন অব দ্য ইয়ার হিসেবে সম্মাননা পেয়েছেন উদ্ভাবক ও প্রযুক্তিগত উদ্যোক্তা শল্যবিদ শাফী আহমদ। চিকিৎসাশাস্ত্রে ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি প্রয়োগ নিয়ে কাজ করা শাফী বার্টস মেডিকেল স্কুলের সহকারী ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি রয়্যাল এয়ারফোর্স ও ব্রিটিশ সরকারের চিকিৎসাবিষয়ক পরামর্শক হিসেবেও কাজ করেন।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির এমপি পল স্কালি বলেন, বাংলাদেশি পরিবারের সন্তানদের এমন সাফল্যের গল্পগুলো সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক। বিবিপিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা আবদাল উল্লাহ বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেকে অর্থনৈতিক কারণে হয়তো যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের কাছে অর্থ উপার্জন একমাত্র লক্ষ্য নয়। শিক্ষা, চিকিৎসা, ফ্যাশন, প্রযুক্তি কিংবা হালের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে বিচরণ করছেন তাঁরা। অভিনব চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম কিংবা তুখোড় মেধা দিয়ে তাঁরা সাফল্যের শিখরে ওঠার কথা ভাবছেন।

বিবিপিপিআইয়ের সম্পাদক আয়শা কোরেশী বলেন, প্রবাসজীবনে কে কোথায় কী করছেন, সে খবর রাখা মোটেও সহজ নয়। নিজেদের সফল মানুষগুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে বিবিপিআইয়ের এই প্রচেষ্টা। এসব সাফল্যের গল্প অন্যদের সাহসী ও উদ্যোগী হতে উৎসাহ দেয় বলে তিনি মনে করেন।

বিবিপিআইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান সফল বাংলাদেশিদের এক ছাদের নিচে জড়ো করে। এবারও তার ব্যত্যয় ছিল না। এবারের অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, ব্রিটিশ কিক বক্সার রুকসানা বেগম, ফরমুলা ওয়ান রেসার মোহাম্মদ জুবায়ের, লন্ডন ট্রেডিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন চৌধুরী, বিচারক স্বপ্নারা খাতুন, স্থপতি দেলওয়ার হোসেন, সেভরটেক্সের প্রধান নির্বাহী সাইদ আহমদসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসাধারণ সাফল্য অর্জনকারী ব্যক্তিরা।