মস্কোয় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদ্যাপন

ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুরা। তাদের সকলকে পুরস্কার দেওয়া হয়
ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিশুরা। তাদের সকলকে পুরস্কার দেওয়া হয়

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন ছিল গত শুক্রবার। ওই দিন একই সঙ্গে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস। দেশের সীমানা পেরিয়ে সুদূর রাশিয়ার মস্কোয় বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদ্‌যাপন করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাশিয়া ১৮ মার্চ শনিবার এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী, শিশু উৎসব, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিকেল চারটায় মস্কোর লুনাচারস্কী সাংস্কৃতিক মিলনায়তনে প্রবাসে বেড়ে ওঠা শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। খুদে চিত্রশিল্পীরা তাদের ক্যানভাসে গ্রামবাংলার প্রকৃতি, জাতীয় পতাকা, গ্রামীণ জীবন ও নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি দিয়ে যেন ফুটিয়ে তুলেছে একখণ্ড বাংলাদেশ। পরে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্রীড়া পর্বে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি শিশুর হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইফুল হকের সহধর্মিণী গোপা চক্রবর্তী।

নৃত্য পরিবেশন করছেন হৃদি শেখ
নৃত্য পরিবেশন করছেন হৃদি শেখ

অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী। আয়োজক সূত্রে জানা যায়, মস্কোয় প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হলো। বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাশিয়ার সাধারণ সম্পাদক তমাল পারভেজের ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের দুর্লভ ছবি প্রদর্শনীতে স্থান পায়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত সাইফুল হক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ রাশিয়ার সভাপতি রফিকুল ইসলামসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। এ সময় সাইফুল হককে কিছুটা আবেগপ্রবণ হতে দেখা যায়। এ ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
জাতীয় সংগীত বাজানোর মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী পর্বের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তমাল পারভেজ। পরিষদের সভাপতি রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সাবেক সভাপতি শাহরিয়াজ মিতু। বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবনী নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করে শোনান সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন।
সভায় বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর স্মৃতিচারণ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতায় তাঁর ভূমিকা, ত্যাগ ও পরবর্তীতে দেশগড়ার ক্ষেত্রে তাঁর স্বপ্নের কথা তুলে ধরেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সাধারণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদর্শ, সততা, আর একনিষ্ঠ কর্মের কারণেই তিনি বাঙালির হৃদয়ে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
একাত্তরের রণাঙ্গনের সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, তখন সময়টা কোনোভাবেই সহজ ছিল না। চারদিকে শুধু হাহাকার আর শোকের মাতম বইতে ছিল। বঙ্গবন্ধুর সাহসী ঘোষণার কারণেই বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেয়ে অর্জন করেছে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। প্রবাসে এ ধরনের আয়োজন আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানার এবং উপলব্ধি করার সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রফিকুল ইসলাম
আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রফিকুল ইসলাম

রফিকুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন আদর্শ। তিনি সব সময়ই ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পথ অনুসরণ করে দলমত-নির্বিশেষে আমাদের সবাইকে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
তরুণ সমাজকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, একটি সমৃদ্ধশীল সোনার বাংলাদেশ গড়তে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ আমাদের অনুসরণ করতে হবে। এ জন্য সবার আগে তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তরুণ সমাজকে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে আরও বেশি করে জানার আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আবদুল্লাহ আল মামুন, মোহাম্মদ মোহসিন, ইফতেখার আহমেদ, ভ্লাদিমির লেওনিদোভিচ ও গোপা চক্রবর্তী প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত সাইফুল হকসহ উপস্থিত চারজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মান জানানো হয়।
এ ছাড়া সাংবাদিক জামিল খানের সম্পাদনায় ‘স্মৃতিতে অম্লান বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। এতে বঙ্গবন্ধুর কর্মজীবনের বিভিন্ন ঘটনাবহুল বিষয় ফুটিয়ে তোলা হয়।
আলোচনা সভা শেষে আয়োজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আকিকুল ইসলাম ও আনিতা বিশ্বাসের উপস্থাপনায় প্রায় আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠানটি বিনোদনে ঠাসা ছিল আগাগোড়া। এতে নৃত্য পরিবেশন করেন চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে সিজন থ্রি-এর চ্যাম্পিয়ন রাশিয়ায় বেড়ে ওঠা হৃদি শেখ ও তার শাপলা দল, আনিতা বিশ্বাস। গান পরিবেশন করেন আবু ওয়ালিউল্লাহ, বিশ্বরূপ সান্যাল, প্রবীর সরকার, লাবিদ হোসেন, লিপিকা সরকার, চামেলি। কবিতা আবৃত্তি করেন সৌরভ এলাহী ও মোহসিনা আক্তার। অনুষ্ঠানে অনিল ও তার দল পরিবেশন করেন ‘অতঃপর দুর্বোধ্যতার বিপরীতে উত্থান’ শীর্ষক নৃ-গোষ্ঠীর জ্যাজ সংগীত। এ ছাড়া এতে ভারতীয় শিল্পীদের ভরতনাট্যম, কথক ও ক্ল্যাসিক্যাল নৃত্য দল এবং স্থানীয় বাংলাদেশি ও ভলশেভনাইয়া ফ্লেইতা রুশ শিল্পীগোষ্ঠীর বিভিন্ন পরিবেশনা ছিল।
সবশেষে শিশুদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা হয়।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা-কর্মীসহ মস্কোয় বসবাসরত বাংলাদেশ, রুশ ও ভারতীয় কমিউনিটির নানা পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।