সিডনিতে গীতি কবিতায় বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু যেভাবে সাধারণ জনগণকে ভালোবেসেছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিও সাধারণ জনগণের অসামান্য ভালোবাসা ফুটে উঠেছে বিভিন্নভাবে। বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন ভাব ব্যঞ্জনায় উপস্থাপিত হয়েছেন গল্প, উপন্যাস, কবিতা কিংবা গানে। তাঁর সংগ্রাম ও সংঘাতময় জীবন পালা কিংবা নাটকের পাণ্ডুলিপির জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণা। সারা পৃথিবীব্যাপী আনাচকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধু প্রেমিকের সঠিক সংখ্যা নির্ধারণ অসম্ভব। তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী, কেউবা প্রিয় নেতাকে মনের গহিনে নীরবে নিভৃতে লালন করছেন যুগ যুগ ধরে। এমনি দু’জন নিভৃতচারী প্রচারবিমুখ দুজন মানুষ মিজানুর রহমান তরুণ ও ডা. রফিক খান। তারা মহান নেতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে লিখেছেন ১৮টি গান। সেই গান গেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সিডনিপ্রবাসী স্থানীয় শিল্পীরা।
গানগুলো হচ্ছে; ‘বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা’, ‘In a Longer trip’, ‘মুজিব তোমার শুভ জন্মদিন’, ‘তুমি তো আমার’, ‘সংগ্রামী নেতা তুমি জনতার’, ‘মুজিব তুমি আমাদের লোক’, ‘বঙ্গবন্ধু কে বলে তুমি নাই’, ‘আমি মুজিবের কথা বলি’, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘এই ধুলি এই মাটি’, ‘দিন দিন করে হয় মাস’, ‘তোমার কথা লিখতে আমার’, ‘সোনালি রোদের ফালি’, ‘জয় বাংলা’, ‘মনে পড়ে সেই উজ্জ্বলতম’, ‘হারিয়ে যায়নি’, ‘নেতা তুমি পিতা তুমি’, ‘কোনো কোনো মৃত্যু’। এর মধ্যে ১৭টি গানের গীতিকার রফিক খান আর সুরকার মিজানুর রহমান তরুণ। ‘বঙ্গবন্ধু কে বলে তুমি নাই’ গানটির গীতিকার ও সুরকার মিজানুর রহমান তরুণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৮তম জন্মদিন পালন উপলক্ষে সংগীতধারা অস্ট্রেলিয়া (গানের কারিগর) আয়োজিত অনুষ্ঠান মৌলিক গানের আসরে এই গানগুলো পরিবেশিত হয়। গীত কবিতায় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয়েছিল গত শনিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরের কুইকারস হিলের মারাইয়ং কমিউনিটি সেন্টারে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এলিজা টুম্পা।
গানগুলো গেয়েছেন রুক্সানা রহমান, রিতা করিম, মিজানুর রহমান জনি, মহিন আহমেদ ও মিজানুর রহমান তরুণ। এ ছাড়া শিশুশিল্পী আনন্দ রহমান, আদৃতা রহমান, আনিলা রহমান ও আনান রহমান কয়েকটি গানে কণ্ঠ দেয়। বাদ্যযন্ত্র ঢোল, কঙ্গো ও নাল বাজিয়েছেন অমিত সাহা, তবলা অজয়, বাঁশি ইসমাইল হোসেন, কিবোর্ড মিজানুর রহমান জনি, গিটার আনন্দ রহমান ও মন্দিরা বাজিয়েছেন লোকমান হোসেন।
অনুষ্ঠানে মিজানুর রহমান জানান, বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করেছি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। দেশ স্বাধীন হয়েছে আজ বহু বছর হলো, কিন্তু এখনো বাংলাদেশের কিছু মানুষ অকৃতজ্ঞই রয়ে গেল। এখনো কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানতে নারাজ। তারা প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুকে মানুক আর নাই মানুক অন্তরে তাদের বঙ্গবন্ধুর মহৎ কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতেই হবে।
রফিক খান বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখতে হলে অনেক জ্ঞানের অধিকারী হতে হয়। আমার জ্ঞানের স্বল্পতা নিয়েও আমি বিভিন্ন সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধু গণমানুষের নেতা ছিলেন। তিনি আজীবন গণমানুষের সঙ্গে থাকতে চেয়েছেন। এক সাধারণ মানুষ থেকে বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের মহাকাব্যিক চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন তিনি। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে রাজনৈতিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেওয়ার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুই দেখেছিলেন। বাঙালির দুঃসময়ের দিনগুলোতে তিনি ছিলেন বাঙালির আশার একমাত্র প্রতীক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার কাজী ইমতিয়াজ হোসেন, স্থানীয় বাংলাদেশি রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, প্রবাসী বঙ্গবন্ধু সমর্থক ও সাধারণ বাংলাদেশিরা। অতিথিদের কয়েকজন বক্তব্য দেন।
বক্তারা বলেন, ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু কোটি জনতার সঙ্গে নিজের এক অবিভাজ্য মেলবন্ধন তৈরি করেছিলেন। বাঙালি, বাংলাদেশ আর মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িয়ে আছেন তিনি। জয় বাংলা স্লোগান সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। বঙ্গবন্ধু শোষণ ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ছিল শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। জনগণের সঙ্গে নিবিড় জনসংযোগের মধ্য দিয়ে রাজনীতির কবি হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর তর্জনী উঁচিয়ে দেওয়া বক্তব্য মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যেত।