নানা আয়োজনে মুম্বাইয়ে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

ভারতের মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ উপহাইকমিশন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্‌যাপন করেছে। এ উপলক্ষে ২৬ মার্চ রোববার উপহাইকমিশনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশনা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা এবং প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

সন্ধ্যায় আড়ম্বরপূর্ণ এক অভ্যর্থনা আয়োজনসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে মহারাষ্ট্র সরকারের মুখ্যমন্ত্রীর সহধর্মিণী এবং সমাজকর্মী ও সংগীতশিল্পী আমরুতা ফাদ্নাভিস প্রধান অতিথি ও মুখ্যসচিব সুমিত মল্লিক গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ এবং সার্কের শুভেচ্ছাদূত ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা।
উপহাইকমিশন কার্যালয়ে সকালে জাতীয় পতাকার আনুষ্ঠানিক উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের সূচনা হয়। মুম্বাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার সামিনা নাজ আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পতাকা উত্তোলন শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। এরপর ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক এক আলোচনা এবং প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় মুম্বাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিনিধি, স্থানীয় অতিথি এবং উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন। সামিনা নাজ তার বক্তব্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির জনক ও স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপরিসীম অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ৩০ লাখ শহীদদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা তিনি ও অন্যান্য বক্তারা বিনম্র শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ এবং অর্জনের ওপর সামিনা নাজ তার বক্তব্যে আলোকপাত করেন। আলোচনা শেষে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।
সন্ধ্যায় স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী হোটেল তাজমহল প্যালেস-এ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। এরপর সামিনা নাজ আগত অতিথিদের উদ্দেশে স্বাগত বক্তব্য দেন। তিনি তার বক্তব্যের শুরুতে মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মুক্তিসংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী অগণিত শহীদের আত্মত্যাগের কথাও তিনি এ সময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এবং দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি ও নির্যাতনের কথা উল্লেখ করেন।
সামিনা নাজ তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কর্তৃক দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ এবং অর্জনের ওপর আলোকপাত করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিদ্যমান অনুকূল ব্যবসা-বাণিজ্যের কথাও তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
প্রধান অতিথি আমরুতা ফাদ্নাভিস তার বক্তব্যে মহান এ দিবসে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্কের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান এ সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন রুনা লায়লা। অনুষ্ঠানে আমররুতা ফাদ্নাভিস ও রুনা লায়লা একসঙ্গে সংগীত পরিবেশন করে বাংলাদেশ-ভারত সাংস্কৃতিক সম্মিলন ও বন্ধুত্বের এক দৃষ্টান্তমূলক নজির স্থাপন করেন।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা ছিলেন মহারাষ্ট্র সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের প্রধান ও প্রতিনিধি, মুম্বাইয়ে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, স্থানীয় চেম্বার অব কমার্স ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের প্রধান ও প্রতিনিধি, ভারতীয় নৌবাহিনীর ওয়েস্টার্ন নেভাল কমান্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, শিল্প ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ভারতীয় সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জি প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের সবশেষে কেক কাটা, সংগীত পরিবেশনা ও এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। মিতালি মুখার্জিও সংগীত পরিবেশন করেন। বিজ্ঞপ্তি